"আমি যদি খুব বড় বিপদে পড়ি তাহলে কি আপনার কাছ থেকে সাহায্য পাবো"? এটি ছিল চুপচাপ মেয়েটির আমার দিকে ছুঁড়ে দেয়া প্রথম ও শেষ প্রশ্ন!
ঠিক তার দুইদিন পর মেয়েটি আত্মহননের পথ বেছে নেয়! বাইরে থেকে পুরোপুরি স্বাভাবিক দেখতে পাওয়া মেয়েটির ভিতরে কী অস্বাভাবিক যুদ্ধ চলছিল, সেটি উপলব্ধির ক্ষমতা আমাদের কারোই ছিল না।
সম্পূর্ণ অপরিচিতা মেয়েটির সাথে পরিচয় সরকারি একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে। মেয়েটির আত্মহননের পর বারবার মাথায় শুধু একটি বিষয়ই ঘুরেছে, ইশ একটিবার যদি আমি জোর করেই বলতাম, "কী সমস্যা বলেন আমাকে"? অজানা, অচেনা মেয়েটির মনের ভেতরের যুদ্ধ আমার পক্ষে বোঝা সম্ভব হয় নাই।
ছেলেটির সাথে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয়। বাইরে থেকে খুব 'রাফ এন্ড টাফ' দেখতে ছেলেটি একদিন বললো ভাইয়া একজন টাকা ধার নিয়ে ব্যবসায় লাগিয়ে আমার পাওনা টাকা ফেরত দিচ্ছে না! আইনী সাহায্যের বিষয়ে তাকে জোরালোভাবে বলার পরও সে আর পরে যোগাযোগ করেনি। ফেসবুকের কল্যাণেই তাঁর বিয়ে, প্রথম সন্তানের জন্মলাভ সবকিছু দেখতে পাই। কিছুদিন আগেই জানলাম ছেলেটি আত্মহত্যা করেছে!
জীবনকে যতটুকু দেখেছি, তাতে আমার উপলব্ধি আবেগপ্রবণ ছেলে ও মেয়েদের পাশাপাশি বাইরে থেকে কঠিন দর্শন এর ব্যক্তিরা ভেতরে ভেতরে খুবই দুর্বল প্রকৃতির হয়! অতি আবেগ এবং অতি কঠোরতায় বেড়ে উঠা মানুষগুলো প্রায়শই ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।
মানব চরিত্র এক বিশাল বিস্ময়ের। প্রত্যেক স্বতন্ত্র ব্যক্তি আলাদা বৈশিষ্ট্য নিয়ে বেড়ে উঠতে থাকেন কিন্তু আনন্দ, বেদনা আমাদের সকলকে ছুঁয়ে যায়। অতিরিক্ত চাপ নিতে না পারা, নিঃসঙ্গতা, অবসাদগ্রস্ততা ধীরে ধীরে একজন মানুষকে দুর্বল করে ফেলে। যার ফলাফল আসে জীবনাবসান দিয়ে। জীবনের সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত পরিণতি বুঝি এটাই!
আমাদের প্রত্যেকের জীবনে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। প্রত্যেকের আলাদা আলাদা যুদ্ধও রয়েছে, কিন্তু প্রত্যেকের চাপ নেয়ার ক্ষমতা এক নয়। সবকিছু মাথায় রেখেই আপনার আশেপাশের চুপচাপ ছেলে বা মেয়েটির দুঃসময়ে তার শক্তি হয়ে পাশে দাঁড়ান দয়া করে। সকলে না বুঝলেও আপনি কাছের বন্ধু তাঁর দৃশ্যমান পরিবর্তনটুকু ঠিকই বুঝতে পারবেন এবং একটু চাইলেই তা সম্ভব। দুঃখজনক বিষয় হলো বাবা-মায়ের সাথে সবকিছু শেয়ার করার জায়গা থেকে আমরা এখনো যোজন যোজন পিছিয়ে। আমাদের অনেক 'না বলা' আমরা বন্ধুদের সাথেই শেয়ার করি, আবার কখনো কখনো তাও করি না। তাই পিতা মাতার সন্তানের বন্ধু হয়ে উঠা, বন্ধুদের বন্ধুর জন্য আরও অন্তরিক হয়ে উঠাটা জরুরি। আর ব্যক্তি আমাকে যা নিয়ে ভয় কাজ করে, তার মুখোমুখি হওয়ার সক্ষমতাটুকু অর্জন করতে হবে।
জীবন কত অদ্ভুত সুন্দর! মানুষের বেঁচে থাকার আকুতি দেখতে চাইলে হাসপাতালগুলো আমাদের পরিদর্শন করা উচিত। আপনার সমস্যা নিয়ে কে কি ভাবলো, দয়া করে সেই চিন্তা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে একটি বিষয়ই ভাবুন, জীবনটা আপনার! কোনো ভুল হয়ে গেলে তা সঠিক করার উপায়ও আছে, যদি নাও থাকে তাতেই বা কি আসে যায়? প্রথমে না হয় নিজের জন্যই বাঁচুন.... সর্বশক্তিমান প্রদত্ত এ সুন্দর উপহারকে হেলায় হারানোর অধিকার আমাদের কারো নেই!
আহা! সুন্দর এই জীবন, সুন্দর এই বেঁচে থাকা....।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
লেখক: অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন), ওয়ারী
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার