কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাশ করা এক মেয়ের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। পত্রিকা পড়ে এবং টেলিভিশন দেখে যা বুঝতে পেরেছি; তাতে ঘটনা হচ্ছে- মেয়েটার বড় বোনের বিয়ে হয়েছিলো। এরপর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তো, বড় বোনের এই সাবেক স্বামী তার দলবল নিয়ে এসে তিন্নি নামের এই মেয়েটার বড় বোনকে জোর করে উঠিয়ে নিয়ে যেতে চাইছিল। তিন্নি বাঁধা দিলে তার বোনের এই সাবেক স্বামী, ওই স্বামীর দুই ভাই, মামা, মামাত ভাই সবাই মিলে তাকে পাশের রুমে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন চালায়। এরপর হত্যা করে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রেখে চলে যায়। অন্তত মেয়েটার পরিবার এমনটাই দাবি করেছে এবং এদের সবার নামে মামলা করেছে।
আর সেখানকার পুলিশ কি বলছে শুনবেন?
"মেয়টা লজ্জায় আত্মহত্যা করেছে!"
মেয়েটাকে হত্যা করা হয়েছে নাকি মেয়েটা আত্মহত্যা করেছে; সেটা না হয় তদন্তের ব্যাপার। এতটুকু মানতে পারছি।
কিন্তু মেয়েটা "লজ্জায়" আত্মহত্যা করেছে; পুলিশ কেন এভাবে বলছে?
মেয়েটা কী কোথাও লিখে গিয়েছে- আমি "লজ্জায়" আত্মহত্যা করছি?
তাহলে পুলিশ কেন আগ বাড়িয়ে "লজ্জা" শব্দটা ব্যাবহার করেছে?
এটাই আমাদের সমাজ।
এখানে যারা ধর্ষণ করে, তারা লজ্জিত হয় না। লজ্জায় নাকি মেয়েটা আত্মহত্যা করেছে। কোন তদন্তের আগেই পুলিশ কি চমৎকার করে বলে দিয়েছে "লজ্জায়" আত্মহত্যা করেছে! ধর্ষিত হলে মেয়েটাকে "লজ্জিত" হতে হবে; এমন ধ্যান- ধারণা এভাবেই তৈরি হয়।
একবার চিন্তা করে দেখুন, তিন আপন ভাই, মামা, মামাত ভাই সবাই এক সাথে মিলে ধর্ষণ করেছে! কতটা নিচে নেমে গিয়েছে আমাদের সমাজের মানুষ গুলো।
আর এই যে কুষ্টিয়ার ইসলামী ইউনিভার্সিটির একটা মেয়েকে এভাবে ধর্ষণ করে মেরে ফেলা হলো। কই, ফেসবুকে তো এই ঘটনা নিয়ে তেমন কোন আলোচনা দেখতে পাচ্ছি না। অবশ্য মেয়েটা তো আর অতো মেধাবী ছিল না। পড়েছে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ঢাকা ইউনিভার্সিটি কিংবা বুয়েটের কেউ হলে অবশ্য পুরো ফেসবুক জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠত। রাস্তায় আন্দোলন হতো। টেলিভিশনের টকশো'তে ঝড় উঠত।
মেধাবীদের জন্য আমাদের আবার আলাদা আবেগ আছে। পত্রিকায় বড় করে শিরোনাম করা যায়- মেধাবী ছাত্র বা ছাত্রী'র রহসসজনক মৃত্যু! তখন আমরাও বলে বসি- আহা, কতো মেধাবী ছিল। কতো সম্ভাবনা ছিল। অকালে'ই ঝড়ে গেল। অথচ এই মেয়েটারও হয়ত অনেক স্বপ্ন ছিল; ভালোবাসার মানুষ ছিল।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন