সবাই নতুন জামাকাপড় কিনছে। আমার শান্তমণির জন্য তো কেউ ঈদের জামা আনল না। প্রতি ঈদে শান্ত নিজে টিউশনির টাকা দিয়ে পরিবারের সবাইকে নতুন জামাকাপড় কিনে দিত। এবার ঈদে আমার সেই ছেলেটা কোথায় হারিয়ে গেল- বলেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন জুলাই আন্দোলনের শহীদ ফয়সাল আহমেদ শান্তর মা মোছাম্মৎ কোহিনুর আকতার। চট্টগ্রাম নগরীর লালখানবাজার বাঘঘোনা এলাকার এমআর সিদ্দিকী গেট-সংলগ্ন ছিদ্দিক ম্যানশনের চতুর্থ তলায় ছাদের চিলেকোঠার ছোট্ট একটি ভাড়া বাসায় নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া একমাত্র মেয়েকে নিয়ে থাকেন শান্তর মা। বাবা জাকির হোসেন ফার্নিচার ব্যবসায়ী। তবে এখন তিনি বেশির ভাগ সময় থাকেন বরিশালের গ্রামের বাড়িতে (বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর)। সেখানেই ব্যবসা-বাণিজ্যের চেষ্টা করছেন। চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড এলাকায় কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি টিউশনির টাকায় সংসার চালাতেন মা কোহিনুর। জীবন-সংগ্রামে মাকে সহযোগিতা করতে পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন চট্টগ্রাম এমইএস কলেজে অনার্স প্রথমবর্ষের (ম্যানেজমেন্ট) শিক্ষার্থী শান্ত। নিজের লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনটি টিউশনি করে সংসার খরচের কিছুটা জোগান দিচ্ছিলেন। কোহিনুরের আশা ছিল, দুই সন্তানের মধ্যে বড় শান্তই লেখাপড়া শেষ করে পরিবারের হাল ধরবে। কিন্তু তা আর হলো না। বৈষম্যবিরোধী লড়াইয়ে ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর এলাকায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ও গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন শান্ত। যেদিন তিনি মারা যান, সেদিনও দুটি টিউশনি শেষ করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন আন্দোলনে। শহীদ শান্তর বাসায় গিয়ে দেখা যায়, ঈদের আনন্দ নেই ছিটেফোঁটাও। এখনো শোকের ছায়া। তার মা কোহিনুর আকতার বলেন, আমার ছেলেটা ঈদে অনেক আনন্দ করত। বাসার সবার জন্য জামাকাপড় কিনে আনত। বন্ধুদের নিয়ে ঈদে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করত। হইচই করে বেড়াত সব সময়। সেমাইসহ মিষ্টিজাতীয় খাবার বেশি খেতে চাইত। তাকে ছাড়া প্রথম ঈদ করতে হচ্ছে। এটা বেশ কষ্টকর। কখনো ভাবিনি জীবনে এমনটি ঘটবে। দুই ছেলেমেয়ে ছিল আমার পৃথিবী। তারা দুই ভাই-বোন জোড়ার কবুতর। সারাদিন একসঙ্গে হেসে-খেলে বেড়াত। ভাইকে হারিয়ে আমার মেয়েটা এখন নিঃসঙ্গ হয়ে গেছে। আমার ভবিষ্যৎ অবলম্বন ছিল ছেলেটা। সে লেখাপড়া শেষ করে প্রতিষ্ঠিত হবে। সংসারের হাল ধরবে। তাকে নিয়ে এমন আরও অনেক স্বপ্ন ছিল। সবই অপূর্ণ রয়ে গেল। ছেলেকে ছাড়া বাকি জীবনটা কীভাবে কাটবে ভাবতে পারছি না। শোকের মধ্যেও কোহিনুর আকতার সান্ত্বনা খুঁজে পান এই ভেবে যে, তার ছেলে দেশের জন্য যুদ্ধ করে প্রাণ দিয়েছেন। যে কারণে শান্ত, আবু সাঈদ, মুগ্ধরা জীবন উৎসর্গ করেছেন, তিনি এখন ছাত্র-জনতার সেইসব চাওয়া-পাওয়ার বাস্তবায়ন দেখতে চান। কোহিনুর বলেন, ফ্যাসিবাদমুক্ত দেশ গড়তে ছেলেরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে। ট্যাংক-বন্দুকের সামনে বুক পেতেছে। সেই ফ্যাসিবাদ যেন দেশে না থাকে। কোনো আয়নাঘর যেন আর গড়ে না ওঠে। কত অত্যাচার যে এই আয়নাঘরে হয়েছে। মানুষ যেন নিজের মত প্রকাশ করতে পারে। মেয়েরা যেন স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে। দোকানপাট ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে যেন চাঁদাবাজি না হয়। নারী নির্যাতন যেন বন্ধ হয়। আমার চাওয়া শহীদদের রক্ত যেন বৃথা না যায়। তাদের রক্তের বিনিময়ে গড়ে উঠুক সুন্দর একটি আগামীর বাংলাদেশ।
শিরোনাম
- অস্ট্রেলিয়ায় ভয়াবহ ঢেউয়ের তাণ্ডব, প্রাণ গেল ৫ জনের
- ‘তথ্যসন্ত্রাস করে থামানো যাবে না’ প্রথম আলোকে হাসনাত আবদুল্লাহর চ্যালেঞ্জ
- ৩-১ গোলে পিছিয়ে থেকেও বার্সেলোনার দুর্দান্ত জয়
- সৌদিতে ২০ হাজার অবৈধ প্রবাসী গ্রেফতার
- আইপিএল মাতালেন ১৪ বছরের সূর্যবংশী
- শিশুসন্তানের সামনেই মাকে কোপাল সন্ত্রাসীরা, অভিযুক্ত গ্রেফতার
- সিরাজগঞ্জে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু
- ১৬ বছরে শিক্ষা খাতকেও দলীয়করণ করা হয়েছে: খোকন
- বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলকে বিএনপির শুভেচ্ছা
- প্রথমে স্থানীয়, পরে জাতীয় নির্বাচন চায় জামায়াত
- স্বর্ণের দাম আবারও বেড়েছে
- শিবচরে ইয়াবা ও ককটেল উদ্ধার
- আ. লীগ নেতার চাঁদা আদায় আড়াল করতে বিএনপির নেতার নামে মিথ্যাচারের অভিযোগ
- আবাসিকে নতুন গ্যাস সংযোগের বিষয়ে তিতাসের সতর্কবার্তা
- লক্ষ্মীপুরে স্বেচ্ছাসেবকদল কর্মীর খুনিদের বিচার চেয়ে মানববন্ধন
- বিশ্বকাপের মূল পর্বে বাংলাদেশ
- যাকে আল্লাহ বাঁচায়, তাকে কেউ রুখতে পারে না : কায়কোবাদ
- গাজীপুরে সাফারি পার্ক থেকে চুরি হওয়া একটি লেমুর উদ্ধার, গ্রেফতার ১
- গাইবান্ধায় বোরো ধানের নমুনা শস্য কর্তন
- এনসিপির জেলা-উপজেলা কমিটির আহ্বায়কের ন্যূনতম বয়স হতে হবে ৪০
ঈদ আনন্দহীন শহীদ পরিবার
ছেলের জন্য কেউ নতুন জামা আনল না
চট্টগ্রাম
মজুমদার নাজিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম
প্রিন্ট ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর