নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার আউখাবো এলাকায় রবিনটেক্স নামে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানার শ্রমিক অসন্তোষের জেরে গতকাল পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এর আগে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা গতকাল সকাল থেকে বিভিন্ন দাবিতে বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে টানা চার ঘণ্টা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। এতে ব্যস্ততম ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উভয় দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন হাজারো যাত্রী। এ সময় মহাসড়ক থেকে শ্রমিকদের সরাতে গেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে শ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শ্রমিকরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট মুবীন, সৈনিক বাঁধন, সোহরাব, মেহেদী, পুলিশের ১০ জন পুলিশ সদস্য, শ্রমিকদের মাঝে শাফিয়া, রুনা, মলিনা, মাজেদা, রুপুসহ শতাধিক আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
আন্দোলনরত কয়েকজন শ্রমিক বলেন, ঈদের আগে আমাদের ৬৫ জন শ্রমিককে বিনা নোটিসে ছাঁটাই করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া ইফতার বিল, বোনাস ও বকেয়া বেতনের দাবিতে আমরা কারখানার ভিতরে শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের দাবি আদায়ের চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আমাদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করেন। এতে নারীসহ আমাদের ৬৫ জন শ্রমিক আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মেহেদী হাসান জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক রয়েছে। আমার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। আমাদের প্রায় ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। শ্রমিকরা এখনো বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছেন। এখনো পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তৎপরভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রূপগঞ্জ উপজেলার আউখাবো এলাকায় রবিনটেক্স নামে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানায় প্রায় ৮-১০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৯ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত পোশাক কারখানাটি বন্ধ ছিল। বন্ধের আগে গত ২৮ মার্চ বিনা নোটিসে ৬৫ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়। এ ছাড়া পোশাক কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার আগে শ্রমিকদের ৬৫ শতাংশ বোনাস দেওয়ার কথা থাকলেও মালিকপক্ষ ৫০ শতাংশ প্রদান করেন। এ ছাড়া এক মাসের বেতন প্রদানের কথা থাকলেও ২০ দিনের বেতন দিয়েই কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। গত মঙ্গলবার কারখানা খোলার দিন শ্রমিকরা মালিকপক্ষকে ছাঁটাইয়ের কারণ, বেতন ও বোনাস দেওয়ার কথা বললে মালিকপক্ষ টালবাহানা শুরু করেন। গতকাল সকালে প্রথমে আগের মতোই তাদের দাবি নিয়ে কারখানার ভিতরে অবস্থান করছিল। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে কাজে যোগ দেওয়ার কথা বললে তাদের সঙ্গে শ্রমিকদের বাগ্বিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে শ্রমিকরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর পানির বোতল নিক্ষেপ করে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাঠিচার্জ করে তাদের সরিয়ে দেন। পরে শ্রমিকরা কারখানার বাইরে এসে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকদের বুঝিয়ে শুনিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়া শ্রমিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টাও করা হচ্ছে। আশা করি অল্প সময়ের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে।
শ্রীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভ : শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, গাজীপুর জেলার শ্রীপুরে দুই মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন সি অ্যান্ড আর সুয়েটার কারখানার শ্রমিকরা। তবে সেখানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। গতকাল সকাল ৯টা থেকে আন্দোলনে নামে শ্রমিকরা। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে মিছিল করেন। আন্দোলনরত শ্রমিক আনোয়ারুল হক সুমন বলেন, ফান্ড না থাকার অজুহাতে গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে স্টাফদের বেতন পরিশোধ করেনি। এ ছাড়া সাধারণ ওয়ার্কারদের মার্চ মাসের বেতন বকেয়া আছে। তিনি বলেন, সকালে কারখানায় আসার পর কর্তৃপক্ষ হঠাৎ অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটির মৌখিক ঘোষণা দেয়। এতে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়। তারা বকেয়া পরিশোধ করার জন্য কারখানার সামনে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। একপর্যায়ে কারখানার কর্মকর্তারা চলতি মাসের ২৮ তারিখে কেবল এক মাসের বেতন পরিশোধ করতে পারবেন বলে জানান। এই শর্তে শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান তারা। কিন্তু শ্রমিকরা সব বকেয়া পরিশোধ করার দাবিতে অনড় অবস্থানে থাকেন। তবে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়ে দুইপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করা হয়েছে।