বিনিয়োগকারীরা নীতির ধারাবাহিকতা চান। তাঁরা হঠাৎ নীতির পরিবর্তনকে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে মনে করেন। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এখনো নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগ আনতে নীতি ও কাঠামোগত পরিবর্তনের দিকে নজর দিতে হবে।
গতকাল বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিটের তৃতীয় দিনে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী সময়ে দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কৌশল নিয়ে সেমিনার আয়োজন করে এফবিসিসিআই। এতে এসব কথা বলেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী ও অর্থনীতিবিদেরা।
তাদের মতে, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসতে চান না, কারণ তাদের কাছে আরও ভালো বিকল্প দেশ রয়েছে। এ দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যতম বড় বাধা নীতির ধারাবাহিকতার অভাব ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। এ ছাড়া সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতাসহ আরও কিছু বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়।
সেমিনারে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন বলেন, বাংলাদেশ একটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যমান নীতিগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বিনিয়োগসংক্রান্ত ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর সমাধান করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার অবকাঠামোতে বেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, কেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ করবে এ প্রশ্নটি সবসময় আসে। এ বিষয়ে বলব, বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের নবম ভোক্তা বাজার হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের শক্তিশালী জনবল আছে। বিনিয়োগবান্ধব নীতি আছে। সিপিডি নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর আন্তর্জাতিক বাজারের শুল্কমুক্ত সুবিধা কমবে। রপ্তানি প্রতিযোগিতার বাজার কীভাবে টিকে থাকবে সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। এলডিসি উত্তরণের করণীয় বিষয়ক যথেষ্ট গবেষণা ও নথিপত্র রয়েছে। এ জন্য এখন থেকে তৈরি হতে হবে। প্রতিযোগী হতে হবে। কিন্তু এখনো যথেষ্ট প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার বড় বাজার ভারত। তবে তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য কম। চীনের সঙ্গেও একই অবস্থা। বিদেশি বিনিয়োগ আনতে হলে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রয়োজন। শিল্পায়ন থেকে শুরু করে সব জায়গায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তির ব্যবহার করতে হবে। বিনিয়োগের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি বলে মনে করেন ড. ফাহমিদা। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা নীতির ধারাবাহিকতা চায়। তারা হঠাৎ নীতির পরিবর্তনকে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখে। এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে নীতির সমন্বয় নেই। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন এবং নীতির নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর মধ্যেও সংস্কার প্রয়োজন। ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন সেমিনারে। বিটিএমইএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিনা শুল্কে সুতা আমদানি করে। এটা অব্যাহত রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশের উচিত পণ্য ধরে ধরে আলোচনা করা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক আরোপের কারণে দ্রুত কোনো দুর্যোগ হবে বলে মনে করছি না। এপেক্স ফুটওয়্যারের এমডি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, আমাদের কাছে প্রশ্ন আসে বাংলাদেশে কেন বিনিয়োগ করবে। বিনিয়োগকারীদের অনেক অপশন আছে। ভারত, চীন ও মালয়েশিয়া তাদের বড় অপশন। এখন আমাদের প্রয়োজন নীতির প্রাসঙ্গিকতা। নীতির বাস্তবায়ন। তবে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের বড় সুবিধা আমরা ভৌগোলিক কৌশলগত অবস্থানের কারণে ব্যবসার অনেক বড় সুযোগ আছে। কারণ বাংলাদেশের মানুষ তাদের কাজকে উপভোগ করে। জাপান বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি তারেক রাফি ভূঁইয়া বলেন, বর্তমান বিনিয়োগকারীদের প্রতি নজর বাড়াতে হবে। তাদের বিদ্যমান সুবিধাগুলো অব্যাহত রাখতে হবে। এর মাধ্যমে আরও বেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করা সম্ভব। পাশাপাশি ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি বড় করতে হবে। বিল্ডের সিইও ফেরদৌস আরা বলেন, বাংলাদেশে বেঞ্চার ক্যাপিটাল খুবই কম। যারা আছে তাদের নিবন্ধন জটিলতা অনেক বেশি। বিএসইসিসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে নিবন্ধন নিতে হয়। তবে বিডা ওএসএস সার্ভিস চালু করেছে। এর মাধ্যমে নিবন্ধন কিছুটা সহজ হয়েছে। দিনশেষে সংবাদ সম্মেলনে বিডা ও বেজা নির্বাহী চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী) চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, এই বিনিয়োগ সম্মেলনের মূল কারণ দেশের প্রতি পজিটিভ ধারণাটা নিয়ে আসা। যত বিদেশি বাংলাদেশে আসবে তাদের এদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বেশির ভাগ বাংলাদশের টেক্সটাইল গার্মেন্ট, ভোক্তা আইটেম, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে। আমরা ফ্রি ট্রেড জোন নিয়ে চিন্তা করছি। ভবিষ্যতে মিলিটারি ইকোনমিক জোন করা হবে।