প্রধান উপদেষ্টার আইসিটিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, ডিজিটাল অর্থনীতি বাড়াতে নীতির সংস্কার করছে সরকার। এজন্য সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশ, ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন, সেমি কন্ডাক্টর নীতি, জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতি তৈরি করা হচ্ছে। হাইটেক নীতি সংস্কার করা হচ্ছে। এ মাসের শেষের দিকে সাইবার সেফটি অধ্যাদেশ জারি করা হবে। গতকাল রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ডিজিটাল ইকোনমি সেশনে এসব কথা বলেন তিনি।
‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল প্রবৃদ্ধি : নীতি ও প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় সিটি এশিয়া সাউথ পাবলিক সেক্টর সলিউশনসের প্রধান রোহিত জামওয়াল, মেটার বাংলাদেশ ও নেপালের পাবলিক পলিসি প্রধান রুজান সরওয়ার, গ্রামোফোন’র সিএফও অটো ম্যাগনে রিসবাক, আন্তর্জাতিক জননীতি ও সরকার সম্পর্ক বিভাগের পরিচালক ইনফান ঝাং, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক দেবদুলাল রায়, সিটি ব্যাংক এনএ বাংলাদেশের ট্রেজারি ও ট্রেড সলিউশনস বিভাগের পরিচালক ও প্রধান মোহাম্মদ এ আখের। বিকাশের সিইও কামাল কাদির, গ্রামীণফোনের সিইও ইয়াসির আজমান, উবারের পাবলিক পলিসির সিনিয়র ডিরেক্টর মাইক ওরগিল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ফয়েজ আহমদ বলেন, আমরা সাইবার সেফটি অধ্যাদেশ নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে কাজ করছি। সমাজের বিভিন্ন স্তরের সঙ্গে পরামর্শ করে আমরা সব উদ্বেগের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েছি। তাই আশা করছি, চলতি মাসের শেষ নাগাদ আমরা একটি নতুন সাইবার সেফটি অধ্যাদেশ প্রণয়ন করতে পারব। তিনি বলেন, ডিজিটাল ইকোনমিতে অনেক সার্ভিসকে অটোমেশন করতে হবে। আমরা এসব বিষয়ে চিন্তা করছি। এজন্য আমাদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। আমাদের নিজেদের সার্ভিসের মধ্যে আন্তক্রিয়া তৈরি করতে হবে। এনআইডি, সিআরবি, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব সেবাকে আন্তক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।
সিটি ব্যাংক এনএ-এর কান্ট্রি অফিসার মো. মইনুল হক বলেন, ডিজিটাল ইকোনমিতে কম পুঁজিতেও বড় সফলতা অর্জন করা যায়। এয়ার বিএনবির নিজস্ব হোটেল না থাকার পরও বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করছে। উবারের নিজস্ব গাড়ি ছাড়া ব্যবসা করছে। ফেসবুকের নিজস্ব কনটেন্ট ছাড়া ব্যবসা করছে। এগুলো ডিজিটাল ইকোনমির বড় উদাহরণ। করোনার সময় ডিজিটাল ইকোনমি বড় ভূমিকা রেখেছে। সিটি এশিয়া সাউথ পাবলিক সেক্টর সলিউশনসের প্রধান রোহিত জামওয়াল বলেন, সব সেবা এক ছাতার নিচে আনার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সিঙ্গাপুরের ইউনিক আইডি রয়েছে। সে আইডি সব সেবার সঙ্গে যুক্ত। তাদের অনেক ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স অ্যাকাউন্ট নেই। এক ইউনিক আইডিতে সব নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে।
মেটার বাংলাদেশ ও নেপালের পাবলিক পলিসি প্রধান রুজান সরওয়ার বলেন, মেটার ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ছোট উদ্যোক্তারা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাদের ব্যবসা প্রসার করতে পারছে।
এদিকে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট এ ‘টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল’ শীর্ষক একটি সেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে কোরিয়ান ইপিজেডের প্রতিষ্ঠাতা কিহাক সুং বলেছেন, সঠিক কৌশল ও সংস্কার বাস্তবায়ন করতে পারলে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হতে পারে। অনুষ্ঠানে বিজিএমইএর প্রশাসক এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস-চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বক্তব্য রাখেন।
কিহাক সুং বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ একক দেশ হিসেবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশের অবস্থানে রয়েছে। শীর্ষস্থানে পৌঁছাতে হলে বাংলাদেশকে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নত করতে হবে। কোরিয়ান ইপিজেডের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ট্রাম্প-যুগের ট্যারিফ নীতির তিন মাসের স্থগিতাদেশ কিছুটা স্বস্তি এনেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সক্রিয় পদক্ষেপ প্রশংসার যোগ্য।
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের উচ্চমূল্যের পোশাক উৎপাদনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। তা না হলে বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়বে।