পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা অন্বেষণের জন্য পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, কিছু বাধা আছে। আমাদের সেগুলো অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়ার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ আহ্বান জানান। অতীতের কথা উল্লেখ করে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব বালুচ বলেন, আমাদের সম্পর্ক স্থবির হয়ে পড়ায় আমরা দীর্ঘদিন ধরে একে অপরকে মিস করে চলেছি। আমাদের বাধাগুলো অতিক্রম করতে হবে। আমাদের নিজস্ব অধিকারে বিশাল আন্তআঞ্চলিক বাজার রয়েছে। আমাদের এটি ব্যবহার করা উচিত। আমরা প্রতিবার সুযোগ হারাতে চাই না। দুই দেশের বেসরকারি খাতের মধ্যে নিয়মিত বিটুবি (ব্যবসা থেকে ব্যবসা) মিথস্ক্রিয়া এবং সব স্তরে সফর বিনিময়ের প্রয়োজন। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে দুই দেশের মধ্যে সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর উপায় খুঁজে বের করতে হবে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আশা করেন, এপ্রিলের শেষে দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দারের আসন্ন সফর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার করবে। তিনি সর্বদা সার্কের কাঠামোর মধ্যে পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক পছন্দ করেন।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক : রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় গতকাল বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন ও পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ। বৈঠক-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এক দশক পর পাকিস্তানের সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে পাকিস্তানের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, অবিভাজিত সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে বিদেশ থেকে আসা সহায়তা ফেরত এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর গণহত্যার জন্য দেশটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া। তিনি বলেন, পাকিস্তান এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী। কেননা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে হলে এসব বিষয়ের সমাধান জরুরি। আর সম্পর্কের বিচারে অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধান করার এটাই উত্তম সময়।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আগামী ২৭ এপ্রিল দুই দিনের সফরে ঢাকা আসছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। বৈঠকের বিশাল অংশজুড়ে আলোচনায় ছিল ইসহাক দারের ঢাকা সফর। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে। এসব বিষয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেশটির ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল আসবে। ঢাকা সফরকালে যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন নিয়ে পুনরায় আলোচনা হবে।
পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ। সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আমনা বালুচ বলেন, আলোচনা খুবই চমৎকার ও ফলপ্রসূ হয়েছে।