অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকা সফররত মার্কিন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা দুই দেশের মধ্যে চমৎকার সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পুরো পরিসরে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। মার্কিন প্রতিনিধিদল অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার এজেন্ডাকে সমর্থন জানায়। তারা শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের আঞ্চলিক বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ বৈঠকের তথ্য জানায়। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের সময় মার্কিন প্রতিনিধিদলে ছিলেন ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নিকোল এ চুলিক এবং অ্যান্ডু হারুপ। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, ঢাকায় মার্কিন মিশনের প্রধান ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে উদারতার পরিচয় দিয়েছে, সেজন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মার্কিন কর্মকর্তারা। রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বশীল ভূমিকার জন্যও ধন্যবাদ জানান তারা। মার্কিন কর্মকর্তারা আঞ্চলিক সহযোগিতা, সংযোগ এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে প্রধান উপদেষ্টার উদ্যোগেরও প্রশংসা করেছেন। ড. ইউনূসকে উদ্দেশ করে নিকোল এ চুলিক বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুকে বিচ্ছিন্নভাবে নয় বরং সামগ্রিকভাবে মিয়ানমারের প্রেক্ষাপটে দেখার জন্য আমরা আপনার দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করি।’ প্রধান উপদেষ্টা মিয়ানমার সরকার কর্তৃক সাম্প্রতিক সময় ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে রাখাইনে প্রত্যাবর্তনের উপযুক্ত বলে চিহ্নিত করাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে উল্লেখ করেন। তিনি রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য ফের শুরু করা এবং পারস্পরিক শুল্ক প্রয়োগে ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে. ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমরা তাঁর বাণিজ্য এজেন্ডাকে সমর্থন করার জন্য আমাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’
গতকাল বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ও পররাষ্ট্র সচিব জসীমউদ্দিনের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন মার্কিন দুই ডেপুটি এসিস্টেন্ট সেক্রেটারি। বৈঠকের বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মার্কিন দুই কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠকে চলমান সংস্কার কার্যক্রম, নির্বাচন, ইউএসএআইডির সহযোগিতা, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্কারোপ নিয়েও আলোচনা হয়। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপগুলো কূটনীতিকদের অবহিত করা হয়।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বৈঠক : বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রতিনিধিদল। এক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে তারা শান্তি ও নিরাপত্তার প্রধান আঞ্চলিক ইস্যু এবং বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা করেন। তারা রোহিঙ্গা ইস্যু এবং মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়েও দীর্ঘ আলোচনা করেন। মার্কিন প্রতিনিধিদল বিষয়টি সমাধানে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করেন। ঢাকা সফর শেষে মার্কিন প্রতিনিধিদলের আজ দেশে ফেরার কথা রয়েছে।