জাতীয় নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছে রাজনৈতিক দলগুলো। বারবার নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার তাগিদ দিচ্ছে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তবে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে আগে রাষ্ট্রের কাঠামো সংস্কার করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। সংস্কার চায় জুলাই বিপ্লবের ছাত্র নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক দলগুলোও। তবে প্রশ্ন উঠেছে সংস্কার বাস্তবায়নের ধীরগতিতে। এতে কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার শঙ্কা করছে রাজনৈতিক অঙ্গন।
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত মিলিয়ে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের কাছে সংস্কার বিষয়ে মতামত চেয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ১৩ মার্চের মধ্যে মতামত চাওয়া হলেও গত ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৪টি রাজনৈতিক দল তাদের মতামত জমা দিয়েছে। গত ২০ মার্চ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করলেও গত পরশু পর্যন্ত মাত্র ১২টি দলের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা শেষ করতে পেরেছে।
এদিকে সংস্কারে বিলম্ব হলে নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর। কারণ, পাঁচটি সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে আশু করণীয় হিসেবে বেশ কিছু সুপারিশ দিয়েছে, যেগুলো আগামী নির্বাচনের আগেই বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন বলে মতামত দিয়েছে কমিশনগুলো। এমন পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন রাজনৈতিক দলগুলো। গত পরশু প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। বৈঠক শেষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, আমরা (বৈঠকে) একেবারেই সন্তুষ্ট নই। প্রধান উপদেষ্টা কোনো (নির্বাচনের) সুনির্দিষ্ট ডেডলাইন আমাদের দেননি। তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) এই ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছেন। আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে। রাষ্ট্রের কাঠামো সংস্কারে গত বছর অক্টোবরে ছয়টি ও নভেম্বরে পাঁচটি সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিশনগুলোকে প্রতিবেদন দিতে সময় দেওয়া হয় তিন মাস। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন দিতে ব্যর্থ হয় কমিশনগুলো। প্রথম ধাপে গঠিত কমিশনগুলোর মধ্যে চারটি গত ১৫ জানুয়ারি ও দুটি ৫ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন জমা দেয়। সংস্কারে প্রায় ২ হাজার সুপারিশ করে কমিশনগুলো। এর মধ্যে সংবিধান, জনপ্রশাসন, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশের ওপর রাজনৈতিক ঐকমত্য গঠনে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সুপারিশগুলো স্প্রেডশিট আকারে দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়। দুই মাস পার হলেও অগ্রগতি সামান্য। গত ২৭ মার্চ সংস্কার নিয়ে দলীয় মতামত কমিশনে জমা দেয় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১২২টিতে একমত, ২১টিতে আংশিক একমত ও ২৩টিতে একমত হতে পারেনি দলটি। কমিশনকে দেওয়া চিঠিতে পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক উল্লেখ করেন, স্প্রেডশিটে যেভাবে উত্তর চাওয়া হয়েছে তা বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলি সম্পর্কে যেভাবে মতামত দিতে বলা হয়েছে, তাতে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রকৃত অবস্থান ব্যক্ত করা দুরূহ। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত ২৭ মার্চ আমরা মতামত জানিয়েছি। আলোচনার জন্য আগামী ২৯ এপ্রিল সময় পেয়েছি। এমন ধীরগতিতে চললে মেয়াদকালের মধ্যে কমিশন সংস্কারের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারবে বলে মনে হয় না। ফলে জাতীয় নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
এ ব্যাপারে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, এ কমিশনের মেয়াদ জুলাই মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত। আশা করছি প্রাথমিক আলোচনা মে মাসের মাঝামাঝি পর্যায়ে শেষ করতে পারব। এরপর পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হব। তবে সংস্কার এবং নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর প্রয়োজন নেই। সংস্কারের নামে নির্বাচন পেছানোর কোনো কারণ এখন পর্যন্ত দেখছি না। নির্বাচনের প্রক্রিয়াটা ভিন্ন। এর সঙ্গে সংস্কারের কোনো বিরোধ নেই।