উত্তরে হাওয়া বইছে, শীতের আভাস পৌঁছেছে এই নগরেও। শেষ রাতে ফ্যান বন্ধ করে দিতে হয়, গায়ে টানতে হয় কাঁথা। যদিও জবুথবু হয়ে স্নানঘরে ঢোকার মতো ঠান্ডা এখনও পড়ছে না, কিন্তু ইতোমধ্যে অনেকের মনে প্রশ্ন উঁকি দিতে শুরু করেছে, রোজই কি গোসল করতে হবে?
যদিওবা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়ার এই দেশে গোসল একরকম রোজকার অভ্যাসের মতো বিষয়, তবু এ নিয়ে নানা রকম মতামত প্রচলিত। গরমে পুকুর বা নদীর পানিতে দাপাদাপি যেমন শান্তির, তেমনি শীতের কয়েক মাস ঠান্ডা পানিতে গোসল করা নিয়ে ভয়ে কুঁকড়ে থাকেন অনেকে।
চলুন জেনে নিই গোসল নিয়ে কিছু দরকারি ও মজার তথ্য।
গোসল শব্দটি কোথা থেকে এলো?
উইকিপিডিয়া বলছে, 'গুসল' একটি আরবি শব্দ। নামাজ ও কোরআন পাঠের মতো ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নেবার আগে মুসলমান নারী-পুরুষের বাধ্যতামূলকভাবে পুরো শরীর পবিত্র করার একটি প্রক্রিয়া। অন্যান্য ধর্মের মানুষের ধর্মীয় আচার পালনের সঙ্গেও কোনো না কোনোভাবে গোসলের সংযোগ আছে।
বাংলা একাডেমির অভিধান অনুযায়ী, বাংলা ভাষায় গোসলের সমার্থক শব্দ স্নান বা অবগাহন।
কতদিন পরপর গোসল করা উচিত?
২০১৯ সালে হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল প্রকাশিত এক জার্নালে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের দুই তৃতীয়াংশ নাগরিক প্রতিদিন গোসল করেন। অস্ট্রেলিয়ার ৮০ শতাংশ বাসিন্দা প্রতিদিন গোসল করেন, কিন্তু চীনের অর্ধেক জনগোষ্ঠী সপ্তাহে মাত্র দুইবার গোসল করেন।
কিন্তু মানুষ গোসল কেন করে?
এই প্রশ্নের সোজাসাপ্টা উত্তরে হয়ত বেশিরভাগ মানুষ বলবেন, এটি স্বাস্থ্যকর ও আরামদায়ক বলে তারা বিশ্বাস করেন। তবে সেই সঙ্গে শরীরের ময়লা, ও দুর্গন্ধ দূর করা, সবগুলো স্নায়ু একসঙ্গে সজাগ হয়ে ওঠাসহ নানা করণ এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, কেবল মানুষ নয়, পৃথিবীর প্রায় সকল প্রাণী গোসল করে। ডার্মাটোলজিস্ট ডা. নাহিদ সুলতানা বলেছেন, গোসল সপ্তাহে কতদিন করতে হবে তার নির্দিষ্ট কোনো হিসাব নেই।
এটি নির্ধারিত হতে হবে একজন মানুষের শারীরিক গঠন, বয়স, পরিবেশ ও প্রয়োজন অনুযায়ী।
ডা. সুলতানা বলেন, ‘স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যকর ত্বকে সাধারণত নির্দিষ্ট স্তরের তেল, ভালো ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য মাইক্রো-অরগার্নিজমের একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান থাকা জরুরি। ভালো ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রোটিন উৎপাদনে সাহায্য করে।’
তিনি বলেছেন, ‘কিন্তু বেশি গোসল করলে সেটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যে কারণে বেশিরভাগ মানুষের জন্যই সপ্তাহে কয়েকবার গোসল যথেষ্ট। সবচেয়ে ভালো হয় একদিন পর একদিন গোসল করতে পারলে।’
বেশি গরম পানিতে গোসল করলে, বেশি ক্ষারজাতীয় সাবানের অতিরিক্ত ব্যবহারে শরীরে তেল ও ভালো ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
আবার সংক্ষিপ্ত গোসল হতে পারে। সেক্ষেত্রে বগল ও কুচকি পরিষ্কার করে অল্প পানিতে অল্প সময় গোসল যথেষ্ট হবে।
পানি ছাড়া কি গোসল করা যায়?
উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ যায়। কিন্তু সাধারণত গোসলের কথা ভাবলে পানি ভেজা কোনো ছবিই চোখের সামনে ভেসে উঠবে। কিন্তু পৃথিবীর অনেক দেশে যেখানে আবহাওয়া ঠান্ডা, অথবা পানির সংকট আছে, সেখানে মানুষ যতটা সম্ভব কম পানি ব্যবহার করে গোসল করে। কখনো কখনো পানি ছাড়া গোসলের নানা পদ্ধতির কথাও শোনা যায়। যুদ্ধক্ষেত্রে মোতায়েন সামরিক বাহিনীর সদস্য কিংবা নভোচারীদের মধ্যে পানি ছাড়া গোসলের নানা পদ্ধতির কথা শোনা যায়।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ