শিরোনাম
- অস্ট্রেলিয়ায় ভয়াবহ ঢেউয়ের তাণ্ডব, প্রাণ গেল ৫ জনের
- ‘তথ্যসন্ত্রাস করে থামানো যাবে না’ প্রথম আলোকে হাসনাত আবদুল্লাহর চ্যালেঞ্জ
- ৩-১ গোলে পিছিয়ে থেকেও বার্সেলোনার দুর্দান্ত জয়
- সৌদিতে ২০ হাজার অবৈধ প্রবাসী গ্রেফতার
- আইপিএল মাতালেন ১৪ বছরের সূর্যবংশী
- শিশুসন্তানের সামনেই মাকে কোপাল সন্ত্রাসীরা, অভিযুক্ত গ্রেফতার
- সিরাজগঞ্জে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু
- ১৬ বছরে শিক্ষা খাতকেও দলীয়করণ করা হয়েছে: খোকন
- বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলকে বিএনপির শুভেচ্ছা
- প্রথমে স্থানীয়, পরে জাতীয় নির্বাচন চায় জামায়াত
- স্বর্ণের দাম আবারও বেড়েছে
- শিবচরে ইয়াবা ও ককটেল উদ্ধার
- আ. লীগ নেতার চাঁদা আদায় আড়াল করতে বিএনপির নেতার নামে মিথ্যাচারের অভিযোগ
- আবাসিকে নতুন গ্যাস সংযোগের বিষয়ে তিতাসের সতর্কবার্তা
- লক্ষ্মীপুরে স্বেচ্ছাসেবকদল কর্মীর খুনিদের বিচার চেয়ে মানববন্ধন
- বিশ্বকাপের মূল পর্বে বাংলাদেশ
- যাকে আল্লাহ বাঁচায়, তাকে কেউ রুখতে পারে না : কায়কোবাদ
- গাজীপুরে সাফারি পার্ক থেকে চুরি হওয়া একটি লেমুর উদ্ধার, গ্রেফতার ১
- গাইবান্ধায় বোরো ধানের নমুনা শস্য কর্তন
- এনসিপির জেলা-উপজেলা কমিটির আহ্বায়কের ন্যূনতম বয়স হতে হবে ৪০
বুস্টার ডোজ নাকি সর্বজনীন এক ডোজ
ডা. আরিফ মাহমুদ
অনলাইন ভার্সন

বৈশ্বিক মহামারী করোনা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য শুরু থেকেই বিজ্ঞানীরা, গবেষকগণ, এপিডেমিওলজিস্টরা, সরকার প্রধান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সিডিসিসহ সবাই একযোগে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা, বিভিন্ন ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার উপর কাজ করে যাচ্ছে। মহামারী নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি নিম্নলিখিত কর্মসূচিগুলি (Public Health Measures) বিভিন্ন দেশে পালন করা হয়ঃ
• লকডাউন
• টেস্টিং (RT PCR for SARS-COV 2)
• কন্টাক্ট ট্রেসিং (Contact Tracing)
• কোয়ারেন্টিন (Quarantine)
• আইসোলেশন (হোম/হাসপাতাল)
• টিকা গ্রহণ
টিকা গ্রহণের মাধ্যমে এই করোনা থেকে স্থায়ী মুক্তির সম্ভাবনা দেখছে সারা বিশ্ব। এরই ধারাবাহিকতায় সবচেয়ে দ্রুত সময়ে মাত্র ১১ মাসে উৎপাদন হয়েছে করোনার টিকা। প্রফেসর সারাহ গিলবার্ট এর নেতৃত্বে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকা উদ্ভাবন করা হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে। তারপর থেকেই করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে জনগণকে টিকার আওতায় আনার চেষ্টা করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।
এখন পর্যন্ত ৯৯টি টিকা মানব শরীরে পরীক্ষার (Clinical Trial) এর বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে আরও ৭৫ টি রয়েছে প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে। ১২টি টিকা পেয়েছে জরুরি অনুমোদন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন দিয়েছে ৭টি টিকা। বিশ্বের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় টিকা অভিযান চলছে। ১৮৩টি দেশে এই লেখা প্রকাশের সময় পর্যন্ত ৫.২৬ বিলিয়ন ডোজ টিকা দেওয়া শেষ হয়েছে। জীবনযাত্রাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে মোট জনসংখ্যার (৭৯০ কোটি) ৭০ শতাংশ থেকে ৮৫ শতাংশকে টিকা দিয়ে তৈরি করতে হবে হার্ড ইমিউনিটি। তবে উন্নত দেশগুলির টিকাদানের গতির সাথে তাল মেলাতে পারছে না অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো। সংখ্যার বিচারে এখন প্রতিদিন সবচেয়ে বেশি এক কোটি ৭১ লাখের বেশি ডোজ টিকা দিচ্ছে চীন। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ভারত, প্রতিদিন ৫৫ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি ডোজ টিকা দিচ্ছে। তৃতীয় সর্বোচ্চ টিকা দিচ্ছে জাপান প্রতিদিন ২২ লাখ ৬৯ হাজারের বেশি। দশম স্থানে থাকা রাশিয়া, দিচ্ছে প্রতিদিন ৫ লাখ ৭৯ হাজারের বেশি।
আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন ট্র্যাকারগুলোতে বাংলাদেশের অবস্থান এখনো নিচের দিকে। উপমহাদেশের ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা তালিকার উপরের দিকে অবস্থান করলেও বাংলাদেশের অবস্থান উল্লেখযোগ্য নয়। বাংলাদেশের নিচে রয়েছে শুধু আফ্রিকার হতদরিদ্র দেশগুলো। নিম্ন আয়ের দেশগুলোর প্রতি একশ জনে মাত্র ১.৫ ডোজ ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে। এর মূল কারণ টিকার ঘাটতি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেন, “জরুরি ভিত্তিতে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে অধিক পরিমানে ভ্যাকসিন দেওয়া উচিত।
করোনা টিকা নিয়ে বিশ্বে এখন দুটো চিত্র পাওয়া যাচ্ছে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগতভাবে সমৃদ্ধ দেশগুলোতে করোনা টিকা এখন সহজলভ্য।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট মোকাবিলায় বুস্টার ডোজের প্রয়োজন রয়েছে কিনা তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। তারপরও বেশ কয়েকটি দেশ বুস্টার ডোজ প্রয়োগের উপর জোর দিচ্ছে। এতে গরীব দেশগুলো টিকা নিয়ে বিপাকে পড়তে পারে। ইতিমধ্যে ইসরাইল, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স বুস্টার ডোজ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ তাদের দেশের অতিসংবেদনশীল বা ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের বুস্টার ডোজ প্রদানের অনুমতি দিয়েছে।
করোনা হলো বিশ্বব্যাধি। এই মহামারী থেকে মুক্তি পেলে বিশ্বের সকল জনগণকে অন্তত পক্ষে একটি করে ডোজ প্রয়োগ করতে হবে। একটি ডোজের টিকা পুরোপুরি সুরক্ষা দিতে না পারলেও মারাত্মক অসুস্থতা ও মৃত্যু ঠেকিয়ে দিতে পারবে এই একটি ডোজ। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে পাওয়া তথ্য অনুসারে ফাইজার ও মডার্নার টিকা এক ডোজ টিকা ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত সুরক্ষা দেয়। অ্যাস্ট্রাজেনেকাও ৬৪ শতাংশের বেশি সুরক্ষা দেয়।
নতুন ভ্যারিয়েন্টের উদ্ভব ঘটলেও আমাদের উচিত হবে সংখ্যাগরিষ্ট মানুষকে টিকা দিয়ে রাখা, না হলে ভবিষ্যতে আরও বেশি টিকার প্রয়োজন পড়বে। এইসব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসের টিকার বুস্টার ডোজ প্রয়োগ স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। বুস্টার ডোজ বন্ধ থাকলে প্রত্যেক দেশের জনসংখ্যার ১০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া যাবে। টিকাদানের ক্ষেত্রে ধনী ও গরীবের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই আহ্বান। এইজন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে- সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে প্রতিটি দেশের অন্তত ১০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা। আমাদের সকলের উচিত হবে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সর্বাত্মক সহায়তা করা।
তথ্যসূত্র : WHO, Vaccine Tracker, Milken Institute of Vaccine Tracker, New York Times, BBC
লেখক: জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং ডেপুটি ডিরেক্টর
মেডিক্যাল সার্ভিসেস
এভারকেয়ার হসপিটাল, ঢাকা।
টপিক
এই বিভাগের আরও খবর