সিএমএল হলো রক্তের একধরনের ক্যান্সার বা এক প্রকারের লিউকেমিয়া। এর পুরো নাম ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া।
লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সার হলেও এটা অন্যসব লিউকেমিয়ার তুলনায় অনেকটাই ভাল। কারণ এটি সহজে নিয়ন্ত্রণযোগ্য। ক্ষেত্র বিশেষে নিরাময় যোগ্যও বটে। সিএমএল এর অধিকাংশ রোগীরাই নিয়মিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকলে এবং নিয়ম করে ওষুধ খেলে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে।
ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া কেন হয় তা বলা কঠিন। রেডিয়েশন থেকে হয়। আরো অন্যান্য ট্রিগারিং এজেন্টও আছে। ৯ নং ক্রোমজোমে থাকে ABL1 জিন। ২২-এ থাকে BCR জিন। ABL1 একটি ক্যান্সার উদ্দীপক জিন। কিন্তু সে স্বাভাবিক অবস্থায় সুপ্ত থাকে। BCR এর সান্নিধ্যে এসে ABL1 সক্রিয় হয়ে উঠে। BCR-ABL ফিউশন প্রোটিন শ্বেত রক্ত কোষের বিভাজনকে উদ্দীপিত করে। ফলে শুরু হয় অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন।
সিএমএল এর লক্ষণ কি? সিএমএল এর সাধারণ লক্ষণ হলো জ্বর, দুর্বলতা, রক্তস্বল্পতা, মাথাব্যথা, ক্ষুধামন্দা, ওজন হ্রাস। খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি সাইন হলো প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া। ফলে পেটে চাকা অনুভূত হয়। অনেক সময় রোগী তেমন কিছু বুঝতেও পারে না। ঘটনাচক্রে রক্তপরীক্ষা করতে গিয়ে জানতে পারে।
সিএমএল এর চিকিৎসা আবিষ্কার ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য একটি যুগান্তকারী ঘটনা। মানুষ যে একদিন ক্যান্সার রোগটিকে মামুলি ব্যাপার বানিয়ে ফেলতে পারে তার একটি নমুনা দেখা যায় এই সিএমএল এর চিকিৎসা আবিষ্কারের ঘটনার ভেতর দিয়ে। ইমাটিনিব নামক এক ধরণের ওষুধ এই BCR-ABL ফিউশন জিনকে নিষ্ক্রিয় করে রাখতে পারে। বিশেষ জিনকে লক্ষ্য করে এরা কাজ করতে পারে বলে একে বলা হয় টারগেটেড থেরাপি। বাংলায় করলে দাঁড়ায় লক্ষ্যভেদী চিকিৎসা। একসময় সিএমএল এর চিকিৎসায় বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট ছিল মূল চিকিৎসা। টারগেটেড থেরাপি আসার পর সিএমএল এর চিকিৎসায় বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন প্রায় নির্বাসিত হয়েছে। ইমাটিনিবের পর একই গোত্রের আরও কিছু ওষুধ বাজারে এসেছে।
ইমাটিনিবের আবিষ্কার পুরো ক্যান্সার চিকিৎসায় আলোড়ন সৃষ্টি করে। ক্যান্সার যুদ্ধে নতুন অস্ত্র হিসেবে একে চিহ্নিত করে টাইমস ম্যাগাজিনের এক আর্টিকেলে। একে তখন নাম দেওয়া হয় "ম্যাজিক বুলেট।"
ইমাটিনিব প্রথম যখন বাংলাদেশে আসে তখন সিএমএলএর দৈনিক চিকিৎসা ব্যয় ছিল গড়ে ২ হাজার টাকার মতো। এখন বাংলাদেশি ওষুধ কোম্পানিগুলো দেশেই এই ওষুধ তৈরি করে যার একেকটির দাম পড়ে ২৫০ - ৩৫০ টাকা। অর্থাৎ দৈনিক খরচ তিনশ থেকে চারশ টাকার ভেতর।
এই একটি মুখে খাওয়ার ওষুধেই রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে এবং রোগী সুস্থ মানু্ষের মতো সাধারণ জীবনযাপন করতে পারে।
আমাদের দেশে রোগীরা যখন জানতে পারে তার সিএমএল বা ক্রনিক মাইলয়েড লিউকেমিয়া হয়েছে তখন স্বাভাবিকভাবেই তারা দিশেহারা হয়ে উঠে। পুরো ট্রিটমেন্ট প্রক্রিয়া বুঝিয়ে বলার পরও আরো ভাল কিছু পাবার আশায় যাদের সামর্থ্য আছে বিদেশে পাড়ি দেন। সমস্যা হয় তাদের ক্ষেত্রে যারা সামর্থ্যের হিসাবটা করতে পারেন না। বিদেশ ঘুরে আসার পর যখন দেখেন তাদেরকে টারগেটেড থেরাপি মানে দৈনিক ইমাটিনিব বা এ জাতীয় ওষুধ খাবার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তারা তখন সেই ওষুধটিও কিনবার সামর্থ্যটিও হারায়।
লেখক : রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল
কনসাল্ট্যান্টঃ পপুলার ডায়গনস্টিক সেন্টার, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা