আমাদের মধ্যে অনেকেই ভাবেন করােনা নেগেটিভ হলেই মনে হয় সেরে গেলাম; আসলে ব্যাপারটা মােটেও তা নয়। করােনার জটিলতা মানবদেহে দীর্ঘদিন থাকে। আসলে করােনা নেগেটিভ হওয়ার পরও ফুসফুস, হার্ট, লিভার, রক্তনালী, কিডনি, পরিপাকতন্ত্র, মাংসপেশি, চোখ, নাক, মুখ, ত্বক, অস্থিসন্ধি, মস্তিষ্কে ও রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতার মাধ্যমে দীর্ঘদিন থাকে এর প্রভাব। এটা আসলে প্রাথমিক সামগ্রিক প্রদাহেরই ফল ও চলমান প্রক্রিয়া।
করােনার পরপরই রােগী অস্বাভাবিক দুর্বলতা, অবসাদ, ক্লান্তি, শরীর ম্যাজম্যাজ করা, হাঁপিয়ে ওঠা, মাংসপেশী ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, ক্ষুধামন্দা, নাকে গন্ধ না পাওয়া, অনবরত মাথাব্যথা, স্নায়ুবিক জটিলতা কানে কম শােনা, কানে ভােঁ ভােঁ শব্দ করা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, হাতে বা পায়ে এমনকি শরীরে লাল বা গােলাপি রংয়ের চাকা হওয়া, চোখে ব্যাথা করা, ঘুম না হওয়া বা ঘুম কমে যাওয়া, ঘুমের মধ্যে বার বার জেগে যাওয়া, কোন কাজে মনসংযােগ করতে না পারা, ছােটোখাটো বিষয় মনে না থাকা, সাম্প্রতিক স্মৃতি লােপ পাওয়া, স্মৃতিশক্তি লােপ পাওয়া, বিষন্নতা,একাকীত্ব, স্ট্রোক, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত চুল পড়া, দীর্ঘদিন হাসপাতালে বা আইসিউতে থাকায় post traumatic stress syndrome, জন্ডিস, লিভার ফেইলিওর, কিডনিতে পটাসিয়ামের ভারসাম্যহীনতা, এসিড বেস তারতম্য, ডিপ্রেশন, দুশ্চিন্তা, মৃত্যুভয়, চোখ ও শরীরের প্রেশার, ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়া, কাশি, বুক ভারি ভারি লাগা, হার্টের গতি বেড়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, মায়ােকর্ডাইটিস, লাং ফাইব্রবােসিস, আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া, এমনকি স্ট্রোক বা কার্ডিয়াক এরেস্টের মত ঘটনাও বিরল নয়।
মােটামুটি ৭০% লােক স্বল্পমাত্রায়, আর ৪০% লােক অধিক মাত্রায় কোনো না কোন উপসর্গে ভােগেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় এ ধরনের আক্রান্ত ব্যক্তিকে পােস্ট কোভিড, বা লং হলারস বলা হয়।
পুরুষ বা নারীর ক্ষেত্রে অথবা যারা হাসপাতালে ভর্তি থাকেন তাদের মধ্যে যাদের আগে থেকেই কোন অসুখ থাকে তাদের মধ্যে এই জটিলতা বেশি। এগুলাে থেকে নিরাপদ থাকতে গেলে ৪৮ ঘণ্টা, ১ মাস, ৩ মাস ও ৬ মাস পর পর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। মনােবল রাখতে হবে দৃঢ়।
নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। প্রচুর পানি পান করতে হবে। কাজে যােগ দিতে হবে ধীরে সুস্থে। কোনো ভারি কাজ করা যাবে না অন্তত ৩ মাস। ব্যায়াম বা হাঁটার অভ্যাস বাড়াতে হবে আস্তে আস্তে। তাও কমপক্ষে ৬ সপ্তাহ পরে শুরু করতে হবে। যােগ ব্যায়াম বা ইয়ােগার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযােজ্য। নিয়মিত ও উপযুক্ত ঘুম, দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, শাকসবজি, ফলের রস এগুলাে বাড়াবে আপনার জীবনীশক্তি।
পরিবারের সাথে সময় কাটানাে, সামাজিক যােগাযােগ বাড়ানাে, মুক্ত বাতাসে বা পানির কাছাকাছি ভ্রমণ, বই পড়া, পেপার পড়া, নাটক সিনেমা দেখা, ঘরের টুকিটাকি কাজকর্ম করা, ঘর গােছানাে, দাবা, ক্যারাম খেলা আপনার মনকে রাখতে পারে প্রফুল্ল। পরিশেষে চিকিৎসক এর পরামর্শ মতো ভিটামিন ডি, মাল্টিভিটামিন, এন্টিহিস্টামিন, ক্যালসিয়াম বা যে কোন ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে নিয়মিত। মনে রাখবেন করােনা নেগেটিভ মানেই সেরে ওঠা নয়।