ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণ আবিষ্কারের দাবি করেছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মধু এস মালো।
বুধবার রাজধানীর বারডেম হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ডায়াবেটিস হওয়ার কারণ আবিষ্কারের লক্ষে অধ্যাপক মধু এস মালে (হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী অধ্যাপক) ও জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খানের নেতৃত্বে এক দল গবেষক দীর্ঘদিন কাজ করেছেন।
গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলে বলা হয়, ডায়াবেটিসের প্রত্যক্ষ কারণ হল টক্সিন-নিয়ন্ত্রিত নিম্নগ্রেডের সিস্টেমিক প্রদাহ যার ফলে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন ইনসুলিনের উৎপাদন ও কার্যক্ষমতা কমে যায় এবং রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিস হয়। মানবদেহের অন্ত্রে থাকা মৃত ব্যাকটেরিয়ার কোষ-প্রাচীরের অংশ টক্সিন (এন্ডোটক্সিন) হিসেবে কাজ করে। এই টক্সিন সাধারণত মলের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। তবে, উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার, ফুকটোজ বা অ্যালকোহল টক্সিনকে রক্তে ঢুকতে সহায়তা করে। এর ফলে নিম্নগ্রেডের সিস্টেমিক প্রদাহের সৃষ্টি হয় এবং যার ফলে ডায়াবেটিস হতে পারে। মানবদেহের অন্ত্রে থাকা ইন্টেস্টিনাইল আলকালাইন ফসফাটেস নামক এনজাইম এই টক্সিনকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে এই এনজাইমের ঘাটতি হলে অন্ত্রে অতিরিক্ত টক্সিন জমা হয় এবং এই টক্সিন রক্তে ঢুকে সিস্টেমিক প্রদাহ সৃষ্টি করে। ফলে একদিকে যেমন ডায়াবেটিস হতে পারে তেমনি ইসকেমিক হার্ট ডিজিজও হতে পারে। ইসকেমিক হার্ট ডিজিজেরও অন্যতম প্রধান কারণ সিস্টেমিক প্রদাহ।
গবেষণায় দেখা যায়, যাদের শরীরে এই এনজাইম বেশি থাকে তাদের তুলনায় যাদের কম থাকে তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ১৩ দশমিক ৮ গুণ বেশি। অল্পবয়সীদের যাদের অন্ত্রে এ এনজাইমটি দ্রুত কমতে থাকে তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ৭ দশমিক ৩ গুণ বেশি। যাদের অন্ত্রে এই এনজাইমটি কম ছিলো এবং পরে তা বেড়ে গেছে তাদের ডায়াবেটিস হয়নি। এনজাইমটি যাদের অন্ত্রে কম ছিলো তাদের ফাস্টিং সুগার বৃদ্ধির মাত্রা প্রায় দ্বিগুণ। এনজাইমের মাত্রা বেশি হলে স্থুল ব্যক্তিদের ডায়াবেটিস হয় না।
ডায়াবেটিস রোধে যাদের দেহে এই এনজাইমের পরিমাণ কম তাদেরকে এই এনজাইম খাওয়ানো সম্ভব হলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব জানিয়েছেন গবেষকরা।
গবেষণাটিতে অন্যদের মধ্যে অংশগ্রহণ করেছেন বারডেমের অধ্যাপক ফারুক পাঠান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধ্যাপক সালিমুর রহমান, অধ্যাপক মুহাম্মদ হাসানাত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালযের অধ্যাপক সালেকুল ইসলাম প্রমুখ।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত