স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের বিকল্প নেই। কারণ বিদ্যমান আইনে কিছু দুর্বলতা রয়েছে। প্রতিদিন তামাকজনিত রোগে প্রায় ৪৫০ জন মানুষ মারা যাচ্ছে, তাই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশেন (বিএমএ)।
গতকাল সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিএমএ ভবনের শহীদ ডা. শামসুল আলম খান সভাকক্ষে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন (বিএমএ) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন: তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে অগ্রগতি ও পরবর্তী করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ দাবি জানান।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিচার্স ইনস্টিটিউটের এপিডেমিওলোজি এন্ড রিসার্চের বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রায় পৌনে চার কোটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করে। কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয় ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। তামাকজাত দ্রব্যের বহুল ব্যবহার হৃদরোগ, ক্যান্সার, বক্ষব্যাধি এবং অন্যান্য অনেক প্রতিরোধযোগ্য রোগ এবং মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। তামাকের এসব ক্ষতি থেকে জনস্বাস্থ্যকে রক্ষার জন্য তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএমএ’র সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তাফা জালাল মহিউদ্দিন।
বিএমএ’র ঢাকা মহানগরের সহ-সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডা. কনক কান্তি বড়ুয়ার সভাপতিত্বে ও দপ্তর সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মোহা. শেখ শহীদ উল্লাহ’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিএমএ’র সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. তারেক মেহেদী (পারভেজ)।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. খন্দকার আব্দুল আওয়াল রিজভী বলেন, তামাক যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর- এটি দেশের অধিকাংশ মানুষ জানেন। তারপরও মানুষ এটি ব্যবহার করছেন। তাই বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করতে হবে। এটি করতে অবশ্য অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ তামাকবিরোধী কাজ করে যাচ্ছে। এবার ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিদ্যমান আইনের ছয়টি দুর্বলতা চিহ্নিত করে সেগুলো সংশোধনের দাবি জানানো হয়েছে।
দাবিগুলো হলো- সকল পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে “ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান (DSA) নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে (Ponts of Sale) তামাকজাত পণ্য প্রর্দশন (Product Display) নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির যে কোন ধরণের সামাজিক দায়বদ্ধতা (CSR) কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা; ই-সিগারেটের মতো এমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টসমূহ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০% থেকে বাড়িয়ে ৯০% করা এবং বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএমএ’র কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য ডা. মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন চৌধুরী, ডা. মো. জামাল উদ্দিন খলিফা, ডা. এএইচ এম জহুরুল হক, ডা. মো. আবু রায়হান, ডা. মো. মাহবুবুর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. মোস্তফা জামানসহ বিএমএ’র ইসি কমিটির সদস্যরা।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ