১. ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। কাজের মাঝে জাগাই আশা (Creating hope through action) এ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে সারা বিশ্বে এ দিবসটি পালিত হচ্ছে। আত্মহত্যা মানে সম্ভাবনার অপমৃত্যু। এ মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। পৃথিবীতে প্রায় আট লাখ মানুষ প্রতিবছর আত্মহত্যা করেন, যা যুদ্ধ, হত্যা, খুন ইত্যাদির সম্মিলিত সংখ্যার চেয়েও বেশি। বাংলাদেশেও প্রতিবছর এক লাখ জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় চারজন আত্মহত্যা করেন।
আশা কথা হলো, আত্মহত্যা প্রতিরোধযোগ্য। আত্মহত্যা প্রতিরোধ করে একটি জীবন বাঁচানো যেতে পারে। আত্মহত্যা প্রতিরোধের প্রয়োজন ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকার এবং কর্মপরিকল্পনা। তাই আশা জাগানোর কাজটি আমাদের সম্মিলিতভাবে করতে হবে। এ কাজটি করতে হবে প্রত্যেককে, প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে। নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি কিংবা সময় ধরে এ প্রতিরোধের কাজটি করা যাবে না। আত্মহত্যা প্রতিরোধে প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা। প্রাথমিক পর্যায়ে আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা, তার সমস্যা সমাধান/চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তির মধ্যে কিছু লাক্ষণ/চিহ্ন দেখে আমরা তার ঝুঁকি নির্ণয় করতে সক্ষম হব। এ ছাড়া আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তি কিছু কর্ম/ব্যবহার সতর্কীকরণ হিসেবে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হতে পারে। এ ঝুঁকি ও সতর্কীকরণের বিষয়টি জানা থাকলে তাদের নির্ণয় করে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
২. আত্মহত্যার ঝুঁঁকিতে যারা থাকেন :
ক. মানসিক রোগী- বিশেষ করে বিষণ্নতা (Depression), সিজোফ্রেনিয়া, ব্যক্তিত্ব সমস্যাই আক্রান্ত ব্যক্তি।
খ. মাদকাসক্ত ব্যক্তি।
গ. আশাহীনতা, অসহায়ত্ব।
ঘ. মানসিকভাবে কষ্ট পাওয়া/ মানসিক পীড়নের শিকার ব্যক্তি।
ঙ. কঠিন শারীরিক রোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তি।
চ. পরিবারে আত্মহত্যার ইতিহাস।
ছ. আগে আত্মহত্যার চেষ্টার ইতিহাস।
জ. অর্থনৈতিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত।
ঝ. সম্পর্কচ্ছেদ (বিবাহ/বিচ্ছেদ)।
ঞ. আত্মহত্যা করার সামগ্রী হাতের কাছে পাওয়া।
ট. মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা অপ্রতুলতা।
৩. আত্মহত্যার সতর্কীকরণ চিহ্ন :
ক. আমাদের কাছে আত্মহত্যার ইচ্ছা প্রকাশ করা।
খ. আত্মহত্যার সামগ্রী খুঁজা/সংগ্রহ করা।
গ. নিজের আসহায়ত্ব ও আশাহতের বিষয় বলে বেড়ানো।
ঘ. জীবনের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে এমন বলা।
ঙ. অন্যের বোঝা হয়ে গেছি এমন বলা।
চ. মাদক, মদ বেশি বেশি ব্যবহার করা।
ছ. বেপরোয়া জীবন যাপন করা।
জ. জীবন বিসর্জন দিয়ে প্রতিশোধ স্পৃহা।
ঝ. মনের আবেগগত গতি প্রকৃতির অসাভাবিক পরিবর্তন।
৪. আত্মহত্যা প্রতিরোধে করণীয় :
ক. মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সময়মতো সঠিক চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।
খ. অসহায়, আশাহীনের পাশে দাঁড়াতে হবে।
গ. মনের আবেগের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
ঘ. মানসিকভাবে কষ্ট পাওয়া/মানসিক পীড়নের শিকার ব্যক্তির সহায়তা প্রদান, পাশে দাঁড়ান।
ঙ. বিভিন্ন প্রকার সম্পর্কছেদের ব্যক্তিদের কাউনসিলিং সহায়তা প্রদান করা।
চ. মাদক মুক্ত/ মাদকাশক্তি মুক্ত হওয়া।
ছ. আত্মহত্যার সামগ্রীর বিক্রয় নিয়ন্ত্রণ করা।
জ. সকলের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা বিধান করা।
ঝ. ২৪/৭ হেল্প লাইন চালু করা।
৫. সকলে মিলে কাজ করি, আত্মহত্যা প্রতিরোধ করি, জীবন বাঁচাই।
লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্ট
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ