ভারতজুড়ে প্রবল বিরোধিতার মধ্যেইসরকারি হোমের নজরদারি থেকে মুক্তি পেল দিল্লির নির্ভয়াকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত নাবালক। রবিবার বিকেলে সরকারি হোম থেকে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তির পরই ওই নাবালক ধর্ষককে একটি অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় দিল্লির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। আপাতত তাদের তত্ত্বাবধানেই রাখা হবে ওই নাবালককে। তবে মুক্তি পেলেও ওই ধর্ষকের প্রতিটি গতিবিধির ওপর নজর রাখবে পুলিশ।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টে নাবালক ধর্ষকের মুক্তির বিরোধিতায় মামলা রয়েছে। সেই শুনানির পরই ঠিক হবে ধর্ষকের ভবিষ্যৎ। প্রসঙ্গত ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর দিল্লির চলন্ত বাসেই গণধর্ষণের শিকার হয় ২৩ বছর বয়স্ক এক প্যারামেডিকেল ছাত্রী জ্যোতি সিং পান্ডে (ছদ্মনাম নির্ভয়া)। এরপর বাস থেকেই বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়। দীর্ঘ ১৩ দিনের লড়াইয়ের পর সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে মৃত্যুর কাছে হার মানেন তিনি। ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিল এই নাবালক। সেসময় তার বয়স ছিল ১৭ বছর ৭ মাস। তাই একই অপরাধে বাকিদের ফাঁসির সাজা হলেও তিন বছর সরকারি হোমে থেকেই পার পেয়ে গেল ওই নাবালক যদিও এখন তার বয়স ২১ বছর। স্বাভাবিকভাবেই তার মুক্তি নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে।
নাবালকের মুক্তির ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে হাইকোর্টে আর্জি জানিয়েছিলেন বিজেপি নেতা সুব্রামণিয়াম স্বামী। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও ওই অপরাধীর মুক্তির উপর স্থগিতাদেশ জারির দাবি উঠেছিল। কিন্তু সমস্ত আর্জি একপ্রকার উপেক্ষা করেই মুক্তির সিদ্ধান্ত বহাল রাখে দিল্লি হাইকোর্ট। এরইমধ্যে নাবালকের প্রাণহারি আশঙ্কায় অপরাধীকে তিমারপুর সংশোধনাগার থেকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
হোম সূত্রে জানা গেছে, ওই কিশোরকে সেলাইয়ের কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। দেওয়া হবে একটি সেলাই মেশিনও। যা থেকে মাসে অন্তত ১০ হাজার রুপি আয় করতে পারবে সে। কিন্তু সে সব শুনতে নারাজ অধিকাংশ মানুষই। নির্ভরয়ার ধর্ষক খোলা আকাশের নীচে ঘুরবে, এটা মেনে নিতে পারছে না কেউই।
এদিকে, নাবালকের মুক্তিকে কেন্দ্র করে কোনরকম অপ্রীতিকার ঘটনা এড়াতে ইন্ডিয়া গেটে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছিল। জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারাও। যদিও তারই মধ্যে ইন্ডিয়া গেটের পিছন দিকে নাবালকের মুক্তির বিরোধিতা করে প্রতিবাদ করে হাজারো মানুষ। প্রতিবাদের নেতৃত্বে ছিলেন জ্যোতির বাবা-মা। তারা জানান, দোষীরা স্বাধীনভাবে ঘুরতে পারে অথচ আমাদেরকে যন্তর-মন্তরে যেতে দেওয়া হল না। প্রতিবাদ সহিংসতার চেহার নিলে তার জন্য ব্যবস্থা দায়ী হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন তারা।
জ্যোতির মা আশা দেবী জানিয়েছেন, দেশের সরকার এবং তাদের প্রক্রিয়া আমাদেরকে নিরাশ করেছে, ব্যর্থ করেছে। ওই নাবালক ধর্ষকের ফাঁসির সাজা দাবি করে আশা দেবী আরও জানান, ‘আমি কেবলমাত্র ন্যায় বিচার চাইছি। আমি ওই নাবালকের মুক্তির স্থগিতাদেশ চাইছি। শুনানির নামে মানুষকে বিপথে পরিচারিলত করা হচ্ছে। দিল্লি মহিলা কমিশনও সময়মতো পদক্ষেপ নিলে নাবালকের মুক্তির ঠেকাতে পারতো কিন্তু তারা অনেক দেরী করে ফেলেছেন’।
বিডি-প্রতিদিন/ ২০ ডিসেম্বর, ২০১৫/ রশিদা