রাজনীতি থেকে সঙ্গীতকে সবসময় দূরে রাখাই মঙ্গলজনক বলে মনে করেন পাকিস্তানের গজল সম্রাট গুলাম আলি। তার মতে, রাজনীতির সঙ্গে কখনওই একজন শিল্পীকে মিশিয়ে ফেলা ঠিক নয়। সংবাদ সংস্থা আইএএনএস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আলি বলেন, ‘ভারত কিংবা পাকিস্তান যেখানেই হোক অসহিষ্ণুতা কারও ভাল করে না। যেকোন ধরনের অসহিষ্ণুতাই সমাজের পক্ষে অমঙ্গল। ভারত কিংবা পাকিস্তান যে দেশই হোক না কেন এই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হওয়াটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। দুই দেশেরই উচিত শান্তির পরিবেশ বজায় রাখা’।
শিবসেনার হুমকির জেরে গত বছরের অক্টোবর মাসে মুম্বাইয়ের অনুষ্ঠান বাতিল হয় গুলাম আলির। এরপর গত ৮ নভেম্বর দিল্লিতে ওই অনুষ্ঠান করার জন্য সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের তরফ থেকে আমন্ত্রণ পেলেও সেই অনুষ্ঠানে যেতে চাননি তিনি। পরিস্থিতি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত ভারতের মাটিতে আর অনুষ্ঠান করতে আসবেন না বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। যদিও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের অনুরোধে গত ১২ জানুয়ারী কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কনসার্ট করেন গুলাম আলি। পরবর্তী কেরলেও তিনি পারফর্ম করেন।
সেই প্রসঙ্গে আলি বলেন, রাজনৈতিক কারণে শিবসেনা তার বিরোধীতা করলেও এই রাজনৈতিক দলটিতেও তার অনেক অনুরাগী আছেন। তিনি বলেন, ‘আমি জানি শিব সেনার অনেক মানুষই আমার প্রশংসা করেন কিন্তু রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা এবং জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখে তারা আমার বিরোধীতা করেছে। এটা নয় যে তাদের শহরে গুলাম আলিকে তারা গান গাইতে দেবে না, বরং তাদের সমস্যাটা হল আমি কোন দেশ থেকে আসছি সেটা...’। এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সাবেক শিবসেনা প্রধান প্রয়াত বাল ঠাকরে, তাঁর স্ত্রী রশ্মি, ছেলে উদ্ধব ঠাকরে, বৌমা (ছেলের বউ) স্মিতা ঠাকরে প্রত্যেকেই আমার ফ্যান। তারা আমাকে অনেক ভালবাসা দিয়েছে এবং যখনই আমি সুযোগ পেয়েছি আমি তাদের সাথে দেখা করেছি এবং তারা সবসময়ই আমাকে ভালবাসা ও শ্রদ্ধা জানিয়েছে’।
তার প্রতি শিবসেনার বিরোধীতা নিয়ে তিনি বলেন, শিবসেনার ওই ভূমিকা ভারতের প্রতি আমার ভালবাসার উপরে কোন প্রভাব ফেলেনি। বরং এই দেশ সম্পর্কে আমার অনুভূতি আরও শক্তিশালী হয়েছে। ভারত, পাকিস্তান, হংকং, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র সব জায়গাতেই আমরা শুভাকাঙ্ক্ষী ও অনুরাগীরা ছড়িয়ে আছে। তারা কোনদিনই আমাকে হতাশ করেনি বরং আমি যখন তাদের দেশে কানসার্ট করেছি তারা আমাকে ভালবাসা উজার করে দিয়েছে’।
ভারতে আর না আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি বলেন, ‘একজন শিল্পী হিসেবে আমি ওই পরিস্থিতিতে আমি বিচলিত হয়ে গিয়েছিলাম। শিল্পীরা সবসময় আবেগঘন হন এবং যখন আমার সাথে ওরকম ব্যবহার করা হল আমি তখন মানসিক ভাবে ভেঙে পড়লাম। স্বাভাবিকভাবেই ভারতে পারফর্ম করার মতো অবস্থায় ছিলাম না’।
বিডি-প্রতিদিন/ ২১ জানুয়ারি, ২০১৬/ রশিদা