বর্ষবরণের রাতে ফাঁকা রাস্তা দিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে একটি গাড়ি। চালকের আসনের বাঁ দিকের দরজা দিয়ে বেরিয়ে রয়েছে এক নারীর শরীরের অর্ধেকাংশ। বাঁচার জন্য চিৎকার করছেন ওই নারী!
রবিবার রাতে গরফা রোডে এমন দৃশ্য দেখে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন দুই মোটরবাইক আরোহী। তারা ধাওয়া করে গাড়িটির পথ আটকে নারীকে উদ্ধার করলেও গাড়িসহ চালক চম্পট দেয়। তবে রবিবার রাতে কলকাতা শহরে নারীদের শ্লীলতাহানি ও কটূক্তির ঘটনা অবশ্য এখানেই শেষ নয়।
কোথাও অভব্য আচরণের প্রতিবাদ করায় মেয়ের সামনেই রাস্তায় ফেলে মারধর করা হল মাকে। কোথাও আবার স্কুটারে চেপে যাওয়া তরুণীকে কটূক্তির প্রতিবাদ করায় তার সঙ্গীকে মারধর করল আর এক যুবক।
পুলিশ জানায়, প্রথম ঘটনাটিতে এখনও অভিযুক্ত গ্রেফতার না হলেও পরের দু'টি ঘটনায় অভিযুক্তেরা ধরা পড়েছে।
পুলিশ সূত্রের জানা যায়, বছর শেষের রাত ২টার দিকে ইএম বাইপাসের একটি উদ্যান থেকে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান শেষ করে নেতাজিনগরের বাড়িতে ফিরছিলেন এক দম্পতি। অভিযোগ, কালিকাপুর মোড়ের কাছে আচমকাই তাদের গাড়ির পিছনে ধাক্কা মারে আর একটি গাড়ি। এরপরে ওই গাড়িটিকে ধরার জন্য ধাওয়া করেন ওই দম্পতি। কিন্তু গাড়িটি কিছুতেই পথ ছাড়ছিল না। শেষমেশ গরফার সাঁপুইপাড়া মোড়ে পৌঁছে গাড়িটিকে ধরেন ওই দম্পতি। ওই গাড়ির চালকের সামনে গিয়ে তাঁরা জানতে চান, কেন ধাক্কা দেওয়া হল?
অভিযোগ, তাদের কথায় কর্ণপাত না করে গাড়ির চালক ভদ্রলোককে ধাক্কা মারেন। স্বামীকে ধাক্কা মারতে দেখে ওই নারী গাড়িটির বাঁ দিকের দরজা খুলে চালকের সঙ্গে কথা বলতে যান। নারীর অভিযোগ, আচমকাই তার হাত ধরে হেঁচকা টান মেরে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে ওই চালক। ততক্ষণে সিগন্যাল সবুজ হয়েছে। নারীর শরীরের অর্ধেক বেরিয়ে আছে বাইরে। সেই অবস্থাতেই গাড়ি ছুটতে শুরু করে গরফা মেন রোড ধরে। স্ত্রীকে এমনভাবে নিয়ে যেতে দেখে চিৎকার শুরু করেন স্বামী। প্রায় আধ কিলোমিটার যাওয়ার পরে দুই বাইক আরোহীর চোখে পড়ে বিষয়টি।
সোমবার সন্ধ্যায় ওই নারী বলেন, তখন গাড়িতে প্রায় ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছি। ওই গাড়ির চালক আমার ডান হাতটা ধরে রেখে গাড়ি চালাচ্ছে। খুব ভয় করছিল। ওই নারী হাতে, মাথায় ও ঘাড়ে চোট লেগেছে। এ দিন সকালে গরফা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তারা।
উদ্ধারকারী এক বাইক আরোহী বলেন, প্রথমে আমরা কিছু বুঝতে পারিনি। একটা চিৎকার কানে আসছিল। কিছুটা এগোতেই ওই দৃশ্য দেখে চমকে উঠেছিলাম। এর পরেই তারা গাড়িটিকে ধাওয়া করে সেটির সামনে গিয়ে পথ আটকান। একজন নারীকে উদ্ধার করেন। আর একজন বাইক আরোহী গাড়ির চালকের সঙ্গে কথা বলতে যান। অভিযোগ, তাকেও ধাক্কা মেরে চম্পট দেয় অভিযুক্ত গাড়ির চালক।
যদিও তদন্তকারীদের দাবি, সিসিটিভি-র ফুটেজ দেখে মনে হচ্ছে, বচসার সময়ে ওই নারী নিজেই গাড়িতে উঠে বসেছিলেন। তবে পুলিশ শ্লীলতাহানি ও মারধরের মামলা দায়ের করে ওই গাড়ির খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে।
অন্যদিকে, ওই দিনই রাত সাড়ে ১০টার দিকে বেলেঘাটা মেন রোডের বাসিন্দা এক গৃহবধূ তার দশ বছরের মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। স্থানীয় দুই তরুণ ও তিন তরুণীকে রাস্তার মধ্যেই অভব্য আচরণ করতে দেখে তিনি প্রতিবাদ করেছিলেন।
অভিযোগ, ওই দুই যুবক নারীকে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে লাথি, ঘুষি মারতে থাকে। মা ও মেয়ের চেঁচামেচিতে স্থানীয়রা বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লে ভয়ে চম্পট দেয় তারা। এর পরে নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে ওই নারী বেলেঘাটা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তারপরেই ওই এলাকা থেকে চঞ্চল চক্রবর্তী ও বিপ্লব দাস ওরফে বিল্লাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই নারী বলেন, এলাকার মধ্যে এমন অভব্য আচরণ করছিল ওরা যে, প্রতিবাদ না করে থাকতে পারিনি।
আবার ওই রাতেই এপিসি রোড ধরে স্কুটারে চেপে ফিরছিলেন এক তরুণী ও তার সঙ্গী। অভিযোগ, শিয়ালদহ ইএসআই হাসপাতালের সামনে রাস্তায় দাঁড়ানো এক যুবক তাকে লক্ষ্য করে কটূক্তি করে। তখন ওই তরুণীর সঙ্গী নেমে প্রতিবাদ করলে তাকে বেধড়ক মারধর শুরু করে ওই যুবক। পরে রাস্তায় কর্তব্যরত পুলিশ এসে সিকন্দর নামের ওই যুবককে গ্রেফতার করে। সূত্র: আনন্দবাজার।
বিডি প্রতিদিন/০২ জানুয়ারি ২০১৭/আরাফাত