ভারতের আসাম রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও অাসাম গণ পরিষদ (অাগপ) নেতা প্রফুল্ল মহান্ত বলেছেন, ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস (এনআরসি)’র পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর ভারত সরকারের উচিত বাংলাদেশ সরকারের সাথে আলোচনা করে অাসামে বসবাসকারী অবৈধ বাংলাদেশিদের সেদেশে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা।
মঙ্গলবার সর্বভারতীয় গণমাধ্যম ‘নিউজ ১৮’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন। নাগরিকত্ব বিল সংশোধন করে বাংলাদেশি হিন্দুদের ভারতের নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়টিতেও তারা বিরোধিতা করবে বলে জানান অাগপ'র এই নেতা।
সম্প্রতি অাসাম রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত প্রথম এনআরসি খসড়ায় কিছু ভুল-ভ্রান্তি থাকা সত্ত্বেও সার্বিকভাবে এই খসড়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন মহান্ত। তিনি বলেন, ‘এটা একটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত। কিন্তু সেখানে অনেক সমস্যাও রয়েছে। এমন কি অাসাম বিধানসভার স্পিকারের নামও এনআরসি তালিকায় নেই। কিন্তু এটা একটা খসড়া এবং আগামী খসড়াতে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এই নথিগুলোতে পুনরায় পরীক্ষা করা প্রয়োজন’।
রাজ্যে অবৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশিদের চিহ্নিত করতেই নাগরিকদের তালিকা (এনআরসি) প্রকাশ করে অাসাম সরকার। গত ৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাতেই সেই এনআরসি প্রকাশ করা হয়। ওই তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আবেদন করেছিলেন মোট ৩.২৯ কোটি মানুষ। এর মধ্যে ৩১ ডিসেম্বর অবধি ১.৯০ কোটি মানুষের নাম এসেছে। অনিশ্চয়তায় ঝুলছে বাকি ১.৩৯ কোটির নাম। তবে শুধু অাসামের স্পিকারই নয়, এই তালিকায় নাম নেই একাধিক এমপি, এমএলএসহ বহু ভিভিআইপিদের।
অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ) প্রধান ও ধুবড়ি’র লোকসভার সাংসদ বদরুদ্দিন আজমল, তাঁর ছেলে যমুনামুখ কেন্দ্রের এমএলএ আবদুর রহমান আজমল, বরপেটার লোকসভার সাংসদ সিরাজুদ্দিন আজমল, করিমগঞ্জের সাংসদ রাধ্যে শ্যাম, অভয়পুরির এমএলএ অনন্ত কুমার মালো, হোজাই’এর বিজেপি এমএলএ শিলাদিত্য দেব ও গোলকগঞ্জের বিজেপি এমএলএ অশ্বিনী রায় সরকার, সেনগা’এর কংগ্রেস এমএলএ সুকুর আলি, সাবেক মন্ত্রী অর্ধেন্দুকামার দে'সহ অসংখ্য শাসক-বিরোধী দলের জনপ্রতিনিধির। তালিকায় স্থান পায় নি অসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আসু)’এর মুখ্য উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল কুমার ভট্টাচার্যের পরিবারের সদস্যদের। নাম বাদ পড়ায় এদের মধ্যে অনেকেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
তবে বছরের পর বছর অাসামের বাইরে থাকা সত্ত্বেও ওই তালিকায় নাম রয়েছে জঙ্গি সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব অাসাম (আলফা)-র কমান্ডার-ইন-চিফ পরেশ বড়ুয়া, তার মৃত মা মিল্কি বড়ুয়াসহ পরিবারের একাধিক সদস্যের। নাম রয়েছে আলফার প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়া’র। জঙ্গি সংগঠন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট অব বোড়োল্যান্ড (এনডিএফবি)-এর মোস্ট ওয়ান্ডেট নেতা বি.বিদাই ও তাঁর স্ত্রী সহ অনেক জঙ্গি নেতার নামও রয়েছে ওই তালিকায়।
এদিকে প্রাথমিক খসড়ায় নাম না থাকায় উত্তেজিত বদরুদ্দিন আজমল জানান, ‘খসড়ায় আমার পরিবারের কারও নাম নেই। তাই বলে কি অাসামের সব এমপি এবং এমএলএ-রা বাংলাদেশি?
যদিও ভারতের রেজিস্টার জেনারেল অব ইন্ডিয়া’এর পক্ষ থেকে সৈলেশ কুমার জানান, ‘এটা নাগরিকপঞ্জির আংশিক খসড়া। ১.৩৯ কোটি মানুষের নথিপত্র যাচাইয়ের প্রক্রিয়া এখনও চলছে। অতএব আতঙ্কের কিছু নেই। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগে পর্যন্ত প্রত্যেকেরই দৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করা উচিত’।
বিডি-প্রতিদিন/০৩ জানুয়ারি, ২০১৭/মাহবুব