ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, বর্তমানে সেখানে ৬০ হাজারের বেশি শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে। এ ছাড়া বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য পানি সরবরাহের ঘাটতি সম্পর্কেও সতর্কতা উচ্চারণ করেছে সংস্থাটি। গতকাল এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা আনাদোলু। বার্তা সংস্থাটি জানায়, গাজা উপত্যকায় ৬০ হাজারেরও বেশি শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে এবং এ অঞ্চলে মানবিক পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয়বিষয়ক কার্যালয়ের (ওসিএইচএ) উদ্ধৃতি দিয়ে জাতিসংঘের মুখপাত্র ফারহান হক গাজায় ‘গুরুত্বপূর্ণ পণ্য ও সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য ক্রসিংগুলো পুনরায় চালু করার প্রয়োজনীয়তার’ ওপর জোর দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে মুখপাত্র ফারহান হক বলেন, জরুরি সহায়তা পৌঁছাতে সীমান্তগুলো খুলে দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। তিনি জানান, যেসব কমিউনিটি কিচেন খাবার ও জ্বালানি সরবরাহ করছিল, সেগুলোর রসদ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। ফারহান হক আরও জানান, বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য পানির সরবরাহও দ্রুত কমে আসছে। তিনি বলেন, পর্যাপ্ত পানি, সাফাই সরঞ্জাম ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশের অভাবে জনস্বাস্থ্যের ওপর গুরুতর প্রভাব পড়ছে। গত মার্চে গাজার এক-তৃতীয়াংশ পরিবারে উকুনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক জানতে চান নিরস্ত্র জরুরি কর্মীদের ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা হলে তা কি যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে কি না। জবাবে জাতিসংঘের এ মুখপাত্র বলেন, বিষয়টি যুদ্ধাপরাধের সংজ্ঞায় পড়ে, তবে তদন্ত চলায় তিনি সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে চান না। তিনি জানান, মানবিক সহায়তাকারীদের ওপর হামলা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন এবং এ বিষয়ে দায়ীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এদিকে মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস সম্প্রতি একটি ভিডিও প্রকাশ করে যেখানে দেখা যায়, ইসরায়েলি বাহিনী ২৩ মার্চ গাজার দক্ষিণে ১৫ জন জরুরি কর্মীকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করে। ভিডিওটি উদ্ধার করা হয় নিহত এক প্যারামেডিকের মোবাইল থেকে, যাকে গণকবরে পাওয়া গিয়েছিল। ইসরায়েল দাবি করেছিল, ওই যানগুলো ‘সন্দেহজনকভাবে’ এগিয়ে আসছিল, কিন্তু ভিডিওতে তার বিপরীত তথ্য উঠে এসেছে। প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে আটজন ছিল রেড ক্রিসেন্ট কর্মী, পাঁচজন সিভিল ডিফেন্স কর্মী ও একজন জাতিসংঘকর্মী। এ ছাড়া আরও একজনের লাশ পরে উদ্ধার করা হয়। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বড় অংশ নারী ও শিশু। -আনাদোলু