হাতে অস্ত্র থাকার বিষয়টি ফিলিস্তিনিদের অধিকার বলে মন্তব্য করেছেন হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা খলিল আল হায়া। তিনি বলেন, এই অধিকার প্রতিরোধের মাধ্যমে আমরা আমাদের মানুষগুলোর প্রতিনিধিত্ব করি। এটি এসেছে ইসরায়েলি আগ্রাসন, দখলদারিত্ব, অবরোধ ও হামলার বিরুদ্ধে কঠোর জবাব দিতে। সম্প্রতি ইসরায়েলের দেওয়া সমঝোতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এ বক্তব্য দেন গাজার শীর্ষ এই সশস্ত্র সংগঠনের নেতা। প্রস্তাবিত সমঝোতার মধ্যে ছিল অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও উভয়পক্ষের বন্দিদের মুক্তি। তবে হামাস সাফ জানিয়ে দিয়েছে, যতক্ষণ না ইসরায়েলি সেনারা গাজা থেকে পুরোপুরি সরে যাবে ও একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে সম্মত হবে, ততক্ষণ তারা কোনো প্রস্তাব মানবে না।
মধ্যপ্রাচ্যের গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, হামাস মনে করে ফিলিস্তিন ও আশপাশের দেশগুলোর ভূমিকে ইসরায়েল নিজেদের সামরিক দখল হিসেবে বিবেচনা করছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্ডস এক বিবৃতিতে বলেন, গাজা, লেবানন ও সিরিয়ার কথিত নিরাপত্তা অঞ্চলে অনির্দিষ্টকালের জন্য আমাদের সেনা মোতায়েন থাকবে। তার এই ঘোষণা হামাসের সঙ্গে শান্তি আলোচনা আরও কঠিন করে তুলেছে বলে বিশ্লেষকদের মতো।
ইতোমধ্যেই গত মাসে সমঝোতা লঙ্ঘন করে ইসরায়েল গাজায় পুনরায় তীব্র হামলা শুরু করে। এই হামলার জন্য তারা হামাসকে দায়ী করেছে। হামলার পরপরই গাজার প্রায় অর্ধেক এলাকা দখলে নেয় ইসরায়েলি বাহিনী। প্রতিরক্ষামন্ত্রী কার্ডস জানান, ইসরায়েলি বাহিনী দখল করা অঞ্চল থেকে আর সরে যাবে না। ইসরায়েলের নেতারা ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠনটিকে দোষারোপ করে বলছে, হামাসই শান্তি চায় না, তারা অশান্তির পথ বেছে নিয়েছে। তাদের জন্য শিগগিরই নরকের দরজা খুলে দেওয়া উচিত। এর জবাবে হামাস জানিয়েছে, তারা একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলি সব বন্দিকে মুক্তি দিতে চায়। তবে হামাসের এ দাবিগুলো ইসরায়েলের তথাকথিত একতরফা শান্তি প্রস্তাবে আটকে আছে। ইউরোপীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গাজার হাসপাতালগুলোয় ইসরায়েলি হামলায় হতাহতের ঘটনায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপে তিনি বলেন, গাজার মানুষের দুর্দশা যেন অবিলম্বে বন্ধ হয়। তিনি মনে করেন, কেবলমাত্র একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির মাধ্যমেই অবশিষ্ট বন্দিদের মুক্তি সম্ভব।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গত দুই দিনে আরও ৯২ জনকে হত্যা করেছে দখলদার ইসরায়েল। গতকাল সর্বশেষ এ তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তারা বলেছে, গত ৪৮ ঘণ্টায় ইসরায়েলিদের চালানো হামলায় ৯২ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি ২১৯ জন আহত হয়েছেন। যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল।
দুই দিনে আরও ৪৮ জনের মৃত্যুতে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৫১ হাজার ১৫৭ জনে পৌঁছেছে। এ ছাড়া ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে চলা ইসরায়েলি বর্বরতায় আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ১৬ হাজার ৭২৪।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল। -আল জাজিরা
ওই সময় সেখানকার সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন। তারা ভেবেছিলেন তাদের দুঃখ-কষ্ট হয়তো লাঘব হবে। তবে চুক্তি লঙ্ঘন করে গত ১৮ মার্চ রাত থেকে আবারও গাজায় বর্বরতা শুরু করে দখলদাররা। ১৮ এপ্রিল থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত ইসরায়েলিরা নতুন করে আরও ১ হাজার ৭৮৩ জনকে হত্যা করেছে। হামাস ইসরায়েলের মধ্যে নতুন যুদ্ধবিরতি হওয়ার আলোচনা শুরু হলেও গত সপ্তাহ থেকে এটি আবারও থমকে যায় আলোচনা থেকে থাকলেও থেমে নেই ইসরায়েলিদের হত্যাকাণ্ড। এতে করে গাজায় লাশের মিছিলে প্রতিদিনই যোগ হচ্ছে নতুন নতুন মানুষ।
-এএফপি