পৃথিবীতে মায়ের চেয়ে আপন আর কেউ নেই। সন্তান পৃথিবীতে আসার সময় মায়ের কলিজায় আঘাত করে পৃথিবীতে আসে। তখন যে মা ব্যথা অনুভব করেন তা ভুক্তভোগী মা ছাড়া আর কেউ বলতে পারবেন না। রাসূল (সা.) বলেছেন, পিতা-মাতাই তোমার জান্নাত ও জাহান্নাম। সত্যিই মা-বাবার সন্তুষ্টিই জান্নাত লাভের সহজ উপায়। আর তাদের অসন্তুষ্টিই জাহান্নামের অধিবাসী করে দেয়। আপন সন্তানকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য ঘাম ঝরান, কঠোর পরিশ্রম করেন। সন্তান যেন আজীবন সুখে-শান্তিতে আরাম-আয়েশে জীবনযাপন করতে পারে সেই আশায়। কোনো দুঃখ-কষ্ট বালা-মসিবত যেন আদরের সন্তানকে পেয়ে না থাকে এ ভাবনায়ই রাতের পর রাত কাটে মায়ের। তাই আমাদের উচিত মা-বাবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলা। তাদের সর্বদা সম্মান করা। তাদের সঙ্গে রাগ না করা, তাদের কথা মান্য করা। যে কোনো আদেশ মেনে নেওয়া। কখনো অবাধ্য না হওয়া। মাকে আদর করে মায়াবী সুরে ডাকা। বাবাকে শ্রদ্ধাভরে ডাকা, মা-বাবাকে পেলেই সালাম দেওয়া। প্রতিটি সন্তানমাত্রই তার মায়ের আদর সোহাগ ও তার মায়ের স্নেহ পায় তা একবাক্যে স্বীকার করতে হবে। কত রাত মায়ের নির্ঘুম কেটেছে, কত কষ্ট না জানি বাবা করেছেন, তাদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলা, ভদ্র ও সুন্দর আচরণ করা উচিত। আদর্শ সন্তানমাত্রই বাবা-মার সঙ্গে উত্তম, সুন্দর ব্যবহার করবে আর মুসলমান হিসেবে আমাদের তা ঈমানি দায়িত্ব। তাই আল্লাহতায়ালা বলেছেন, 'তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন তিনি ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত না করতে ও মাতা-পিতার প্রতি ভালো ব্যবহার করতে।' তাদের একজন বা উভয়ই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে পেঁৗছলে তাদের প্রতি 'উফ' তথা বিরক্তি, উপেক্ষা, অবজ্ঞা, ক্রোধ ও ঘৃণাসূচক কোনো কথা বলবে না। তাদের ধমকও দেবে না। আমাদের সমাজে অনেকে আছেন মায়ের সঙ্গে রাগ করে কথা বলা বন্ধ করে দেয়, মাকে আলাদা করে দেয়। সবার খবর রাখে কিন্তু মায়ের খবর নেয় না। আর মা তখন রাতের পর রাত অপেক্ষা করে কখন তার সন্তান তাকে মা বলে ডাক দেবে। এক সময় মায়াময়ী কণ্ঠে বলে ফেলেন, খোকা এমন এক সময় ছিল যখন ব্যথা পেলে মা বলে ডাকতি। আঘাত পেলে, ভয় পেলে, খোঁচা লাগলে, ঘুম এলে, পায়খানা-প্রস্রাবের প্রয়োজন হলে মা, মা বলে ডাকতি। আজ কতদিন হয়ে গেল মা, মা বলে ডাক না। আমার বুক যে ফেটে যায় খোকা তুই কি বোঝ না।
[খুলনার ৩০ মার্চ ২০১৪ দক্ষিণ লবণচরা বায়তুত তারা জামে মসজিদ কমিটি ও যুবকদের উদ্যোগে বার্ষিক তাফসিরুল কোরআন ওয়াজ মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যের অংশবিশেষ]