মহান রাব্বুল আলামিন মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে। এ ব্যাপারে নিম্নের বিষয়টি প্রণিধানযোগ্য। এই শ্রেষ্ঠত্ব কি গুণাবলি ও কি কারণের ওপর নির্ভরশীল? উত্তরে এ কথাই বলা হবে, আল্লাহতায়ালা আদম-সন্তানকে বিভিন্ন দিক দিয়ে এমন সব বৈশিষ্ট্য দান করেছেন যা অন্য কোনো প্রাণীর মধ্যে নেই। যেমন সুশ্রী চেহারা, সুষম দেহ, সুষম প্রকৃতি এবং অঙ্গসৌষ্ঠব ইত্যাদি। আর এ জাতিকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে তিনি সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তার ইবাদত করার জন্য। সালাত ও সবরের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর কাছে নিজের কামনা বাসনা এবং নিজের মনের আবেগ পেশ করবে। অন্য কারও কাছে কোনো কিছু চাবে না এবং সেজদার উদ্দেশ্যে কারও কাছে নিজের মাথাও ঝুঁকাবে না। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, 'আমি জিন এবং ইনসানকে একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছি।' সুরা জারিয়াত আয়াত ৫৬। আল্লাহতায়ালা তার মাখলুকাতের মধ্য থেকে শুধু ইবাদত করার জন্য মানবজাতিকে কেন বেছে নিলেন? তার উত্তর পাওয়া যায় পবিত্র কোরআনের অপর আয়াতের মধ্যে। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় আমি আদম-সন্তানকে মর্যাদাদান করেছি। তাদের জলে ও স্থলে চলাচলের বাহন দান করেছি। তাদের উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদের অনেক সৃষ্ট বস্তুর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। সুরা বনি ইসরাঈল আয়াত ৭০। সম্মানিত জাতি দ্বারাই মহান প্রভুর ইবাদত ও গুণকীর্তন হবে এটাই তো স্বাভাবিক। কারণ আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে একই সঙ্গে তিনটি জিনিস দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। ১. কুয়্যাতে শাহ্ওয়াত (যৌবনশক্তি) ২ কুয়্যাতে গজব (রাগান্বিত হওয়ার শক্তি) ৩. কুয়্যাতে আকল (বিচার বিশ্লেষণের শক্তি)। অপরদিকে মানবজাতিকে শিক্ষা দিয়েছেন তিনি উন্নত ও সুন্দর চরিত্র মাধুরী গঠনের পদ্ধতি, যা তিনি অন্য কোনো প্রাণীকে দেননি। মানবজাতি নিজের বিবেক বুদ্ধি খাটিয়ে, মহান রাব্বুল আলামিনের বিভিন্ন কুদরতকে দেখে নিজের পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন পরিচালনা করবে। এমনকি আল্লাহর চাহিদা অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় জীবন পরিচালনা করবে। তাহলেই এই মানবজাতি আল্লাহর পক্ষ থেকে পাবে রহমত আর পরকালে পাবে অনাবিল শান্তি, তথা জান্নাত। শুধু তাই নয়, আল্লাহতায়ালা এই বিশ্ব জাহানকে কেয়ামত পর্যন্ত ঠিক রাখবেন এই মানবজাতি দ্বারাই। এ ছাড়া অন্য যত সব মাখলুকাত আছে সব মাখলুকাত মানবজাতির সেবার জন্যই আল্লাহতায়ালা সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসের সূচনা থেকে আজ পর্যন্ত কোনো ইতিহাসে পাওয়া যায়নি কোনো রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনায়ক হয়েছে, কোনো বিদ্যালয়ের প্রধান হয়েছে কিংবা মসজিদের ইমাম হয়েছে মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী। তাহলে বোঝা গেল যে সব মাধ্যমে বিশ্বজাহান পরিচালিত হয় তার সবই আল্লাহতায়ালা দিয়েছেন মানবজাতিকে, অন্য কোনো প্রাণীকে নয়। উলি্লখিত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এই কথা সুস্পষ্ট করে বলা যায়, পৃথিবীর ভেতর যত প্রাণী আছে তার মধ্যে মানবজাতিই একমাত্র শ্রেষ্ঠ, অন্য কোনো প্রাণী নয়। কিন্তু এই মানবজাতি যদি নিজেদের আল্লাহ ও তার রসুলের প্রদর্শিত পথে সঠিকভাবে পরিচালিত না হয়ে অন্য কোনো পথে পরিচালিত হয়, তাহলে তাদের সম্পর্কে মহান রাব্বুল আলামিন বলেছেন, তারা (মানবজাতি) চতুষ্পদ জন্তুর মতো, বরং তার থেকে আরও নিকৃষ্টতর, বস্তুত তারাই গাফেল জাতি। সুরা আনআম আয়াত ১৭৯। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের তার হুকুম মোতাবেক ও রসুল (স.)-এর প্রদর্শিত পথের ওপর চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, ঢাকা।