আরবি শব্দ সালামের অর্থ শান্তি কামনা। ইসলাম শব্দের অর্থ শান্তি। ইসলাম ধর্মে মুসলমানদের পরস্পর সাক্ষাতের সময় প্রথমে একে অন্যকে সালাম দেওয়া হচ্ছে একটি ধর্মীয় রীতি। একজন সালাম করলে অন্যজনকে এর জবাবে পাল্টা সালাম দিতে হয়। এখন যদি এক মুসলমান অন্য মুসলমানকে শুধু সালাম শব্দটি বলে সালাম করে তবে তা ইসলামী তরিকা মোতাবেক সালাম হবে না। সালামের সময় প্রথমে যে সালাম করে তাকে বলতে হয়, ‘আস্সালামু আলাইকুম’। এর অর্থ হচ্ছে ‘আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।’ এর জবাবে অন্যজনকে বলতে হয়, ‘ওয়ালাইকুমুস সালাম।’ এর অর্থ হচ্ছে ‘আপনার ওপরও শান্তি বর্ষিত হোক।’
সালাম দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ইমান না আনা পর্যন্ত বেহেশতে যেতে পারবে না। আর তোমাদের ইমান পরস্পরকে না ভালোবাসা পর্যন্ত পূর্ণতা লাভ করবে না। আর আমি কি তোমাদের এমন একটি কাজের কথা বলব না যা করলে তোমাদের মধ্যে ভালোবাসার সৃষ্টি হবে? তা হলো, তোমরা তোমাদের মধ্যে ব্যাপক হারে সালামের প্রচলন করবে।’ মুসলিম, আবু দাউদ।
সালাম দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে বিধায় নিজেদের ঘরের লোকজনকে সালাম দেওয়ার ব্যাপারে ইসলাম ধর্মে গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। এ সম্পর্কে আল কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যখন তোমরা নিজেদের ঘরে প্রবেশ কর, তখন (ঘরের) স্বজনদের সালাম দেবে। এটা অভিবাদন হিসেবে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত হয়েছে যা কল্যাণময় ও পবিত্র।’ সুরা নূর, আয়াত ৬১। এ প্রসঙ্গে হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘হে বৎস! যখন তুমি তোমার পরিবার-পরিজনের কাছে যাবে, তখন তাদের সালাম করবে। এতে তোমার ও তোমার পরিবারবর্গের জন্য ভালো হবে।’ তিরমিজি। অনেক বাবা-মা ঘরে প্রবেশের সময় ঘরে উপস্থিত ছেলেমেয়েদের সালাম দিতে লজ্জাবোধ করেন। এটা ঠিক নয়। কয়েক দিন নিজের মনের ওপর জোর খাটিয়ে সালাম দিলেই এ লজ্জা দূর হয়ে যাবে। সালাম করার সময় আস্সালামু আলাইকুম বলা হয়। এর সঙ্গে ওয়া রহমাতুল্লাহ অর্থাৎ শান্তির সঙ্গে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক বলা ভালো। এরপর ওয়াবারাকাতুহু অর্থাৎ বরকতসহ যোগ করে সালাম করলে তা আরও ভালো। এ সম্পর্কে হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘একবার এক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, আস্সালামু আলাইকুম। তিনি তার সালামের জবাব দিলে সে লোকটি বসে পড়ে। তখন রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, সে ১০টি নেকি পেয়েছে। এরপর অন্য এক ব্যক্তি এসে বলল, আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। তিনি তার সালামের জবাব দিলে সে লোকটি বসে পড়ে। তখন রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, সে ২০টি নেকি পেয়েছে। এরপর আরেক লোক এসে বলল, আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। তিনি তার সালামের জবাব দিলে সে লোকটি বসে পড়ে। তখন রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন সে ৩০টি নেকি পেয়েছে।’ আবু দাউদ, তিরমিজি।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।