কাগজে-কলমে দেশের নদনদীর সংখ্যা আরও বাড়ছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে দেশে ১ হাজার ৩০০টির বেশি নদনদীর তথ্য পেয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। গত মাসের খসড়া তালিকায়ও এ সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২৯৪টি। সেই তালিকার সঙ্গে যোগ হয়েছে সুন্দরবনের অভ্যন্তরের নদী। যদিও বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের ওয়েবসাইটে এখনো বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রায় ৪০৫টি নদী প্রবাহিত হচ্ছে বলে উল্লেখ রয়েছে। আজ পয়লা বৈশাখে সরকারিভাবে নদনদীর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের কথা রয়েছে। গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় পানি ভবনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের নদনদীর সংখ্যা নির্ধারণবিষয়ক অবহিতকরণ সেমিনারে বক্তব্যকালে পয়লা বৈশাখে নদনদীর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করার ঘোষণা দেন পানিসম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নতুন তালিকায় নদীর সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৪০০-তে দাঁড়িয়েছে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ড. রবীন কুমার বিশ্বাস বলেন, নদীর সংখ্যা বেড়েছে। সুন্দরবনের নদীর কোনো অফিশিয়াল সার্ভে নেই। আমাদের রেকর্ড ও বন বিভাগের রেকর্ড দেখে নদীর সংখ্যা হিসাব করেছি। তাতে ১ হাজার ৩০০ পার হয়েছে এটা নিশ্চিত করতে পারি। স্বাধীনতার পর থেকেই দেশের নদনদীর সংখ্যা নিয়ে রয়েছে বিভ্রান্তি। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদনদীর ভিন্ন ভিন্ন পরিসংখ্যান দিয়ে আসছে।
এক প্রতিষ্ঠান একটি সংখ্যা নির্ধারণ করলে অস্বীকার করেছে অন্য প্রতিষ্ঠান। আবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানও নদনদীর ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা নির্ধারণ করেছে। কখনো নদী খাল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। পরিসংখ্যানের লুকোচুরিতে একে একে দখল ও ভরাট হয়ে গেছে শত শত নদী। অনেক নদীর নাম কাগজে-কলমে থাকলেও মানচিত্রে নেই। গত বছরের ডিসেম্বরে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ও পানিসম্পদ উপদেষ্টা যৌথভাবে একটি সভার আয়োজন করে। সে সভায় দুই মাসের মধ্যে নদনদীর পূর্ণাঙ্গ একটি তালিকা তৈরি করতে পাউবো ও নদীরক্ষা কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়। বৈঠকে নদনদীকে অবৈধ দখলমুক্ত করার জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরিরও সিদ্ধান্ত হয়। ওই ডিসেম্বরেই ১ হাজার ১৫৬টি নদীর খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়। মার্চে খসড়া তালিকায় নদীর সংখ্যা শতাধিক বাড়ে। গত ২৭ মার্চ ১ হাজার ২৯৪টি নদনদীর নামসহ খসড়া তালিকা নদীবিশেষজ্ঞ, নদীকর্মী ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে পাউবো। ৭ এপ্রিলের মধ্যে মতামত দিতে বলা হয়। এর আগে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশে মোট ১ হাজার আটটি নদনদীর তালিকা প্রকাশ করে নদীরক্ষা কমিশন। ২০১৩ সালে নদীরক্ষা কমিশনের এক সমীক্ষায় নদীর সংখ্যা উঠে আসে ৮৫৭টি। এদিকে বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের ওয়েবসাইটে বলা আছে, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রায় ৪০৫টি নদী প্রবাহিত হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে নদনদীর সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরের কয়েক দশকের বিতর্ক এবার অবসান হবে।