আমাদের ব্রেইনের গুরুত্বপূর্ণ একটি নিউরোট্রান্সমিটার হল 'ডোপামিন'। ডোপামিনের অনেক কাজ। এটি মানুষের আনন্দ এবং সুখের অনুভূতিগুলো বহন করে সেগুলোকে চাহিদা অনুযায়ী আমাদের নিউরন বা ব্রেইন সেলে পাঠিয়ে দেয়। ড্রাগস বা নেশা জাতীয় দ্রব্য এই ডোপামিনকে টার্গেট করেই তৈরি হয়।
ড্রাগস আমাদের ডোপামিনার্জিক সিস্টেমের ওপর চাপ প্রয়োগ করে প্রচুর পরিমাণ ডোপামিন নিঃসরণ করতে ট্রিগার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ফলে যখন আমরা ড্রাগস বা নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করি, আমাদের নিউরনে অতিরিক্ত ডোপামিন উপস্থিত হয়। ফলে স্বাভাবিক অবস্থা থেকে ভিন্ন, অস্থির এবং চরম এক সুখানুভূতি এসে আমাদের আচ্ছন্ন করে। তবে এ অবস্থা সাময়িক। ড্রাগসের ধরণ এবং পরিমাণের উপর নির্ভর করে এটি কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টা অথবা কয়েক দিন পর্যন্ত ও স্থায়ী হতে পারে।
তারপর এই মোহাচ্ছন্ন অবস্থা যখন কেটে যায়, তখন রাজ্যের বিষন্নতা, হতাশা আর অবসাদ এসে শরীর আর মনের উপর ভর করে। কারণ তখন ডোপামিনের ঘাটতি দেখা দেয়। আমাদের নার্ভ সিস্টেম আপনা-আপনি এই চাপ থেকে মুক্ত হতে ডোপামিনার্জিক সিস্টেমকে সুড়সুড়ি দিতে থাকে ডোপামিন নিঃসরণ করার জন্য। কিন্তু গতবার যেহেতু চাপ প্রয়োগ করে ডোপামিন নিঃসরণ করা হয়েছিল, তাই এবার ডোপামিনার্জিক সিস্টেম প্রেমিকার কপট রাগের মত বেশ ভাব ধরে এবং ডোপামিন রিলিজ করতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে নার্ভ সিস্টেমের উপর চাপটা আরও বেড়ে যায়। ড্রাগ গ্রহণকারীর শরীর এবং মনে প্রচন্ড অস্থিরতা এবং জ্বালাবোধ তৈরি হয়। তখন ফের চাপ প্রয়োগ করে ডোপামিন নিঃসরণ করার জন্য দরকার হয়ে পড়ে ড্রাগস। তাই ইচ্ছে না হলেও আবারো ড্রাগসের শরণাপন্ন হতে হয়। এভাবেই শুরু হয় আসক্তি। দিন দিন তা বাড়তে থাকে। অকার্যকর হতে থাকে ডোপামিনার্জিক সিস্টেম। তখন ক্রমান্বয়ে বাড়াতে হয় ড্রাগসের পরিমান।
বিডি-প্রতিদিন/১৭ মার্চ ২০১৫/ এস আহমেদ