১৯২০ সালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায় দুই বছরের শিশু রোসালিয়া লোম্বার্দোর। মেয়ের মৃত্যুতে শোকে ভেঙে পড়েন তার বাবা। পরে তিনি মৃত মেয়ের দেহ সংরক্ষণ করতে ডাকেন দেহসংরক্ষক আলেফ্রেদো সালাফিয়াকে। মমি করা হয় ছোট্ট রোসালিয়ার দেহকে। কিন্তু এই মমিটি আর সব মমির মতো নয়। একেবারেই আলাদা। রোসালিয়া যেন আজও বেঁচে আছে তার বাবার ভালবাসায়। প্রায় শত বছর পরে এসেও রোসালিয়া খুলছে চোখ, আবার বন্ধও করছে।
ইটালির সিসিলির কাপুচিন সমাধিতে হাজার হাজার মমির সঙ্গে রাখা হয় ছোট্ট রোসালিয়ার মমিকে। রোজ রাতে রোসালিয়ার মমি দেখতে যেতেন তার বাবা। মেয়ের মমিতে হাত দিয়ে বসে বসে কাঁদতেন বাবা। পরে সবার নজরে পড়ে আর পাঁচটা মমির থেকে রোসালিয়ারটা একেবারে আলাদা। রোসালিয়ার চোখ নড়েচড়ে, খোলে আবার বন্ধ হয়। রোসালিয়ার নিষ্পাপ নীল চোখে ধরা পড়ে আবেগ, কান্না-হাসি। সিসিলির এই শিশু মমির কাণ্ড দেখে সবই তাজ্জব।
এই শিশু মমিটি এখন পর্যটকদের আকর্ষণের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটু সময় নিয়ে এই শিশু মমিটিকে দেখলে দেখা যাবে, তার চোখ কখনও খুলছে, আবার কিছু সময় পর সেটা বন্ধ হচ্ছে। মমিটির নাম রাখা হয়েছে 'স্লিপিং বিউটি'। স্লিপিং বিউটির চোখের টানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসে হাজার হাজার পর্যটক। অনেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করেন বাবার ভালবাসায় ফের বেঁচে ফিরেছেন রোসালিয়া। অনেকে দাবি করতে শুরু করেন, মমি ভেঙে রোসালিয়াকে উদ্ধার করা হোক। কিন্তু বিশ্বাস যেখানে শেষ হয়, সেখানেই থাবা বসায় যুক্তি।
ওই সমাধিস্থলের কিউরেটর তথা অ্যানথ্রোপলজিস্ট দারিও পিওমবিনো এই 'স্লিপিং বিউটি' রহস্যের সমাধান করেন। মিউজিয়ামে এই মমিটিকে সামান্য সরানো হয়, এতে আলোর এক অদ্ভুত সমীকরণ তৈরী হয়। আলোর জাদুতেই মনে হয় রোসালিয়ার মমির চোখ নড়াচড়া করছে।
রোসালিয়াকে যে পদ্ধতিতে মমি করা হয় সেটাও খুব ব্যতিক্রমী ছিল। গ্লিসারিন, জিঙ্ক সালফেট, ক্লোরাইড, সালিসাইক্লিক অ্যাসিডের মাধ্যমে এই মমিটি এমনভাবে সংরক্ষণ করা হয় যাতে বহু বছর ধরে সেটি অক্ষত থাকে।
বিডি-প্রতিদিন/২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪/রাসেল/আহমেদ