যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক সম্প্রতি একটি গবেষণায় জানিয়েছেন, শহরের পরিত্যক্ত জমিতে জন্মানো বুনোফুল ও গাছপালা যেমন—সাদা ক্লোভার (white clover) ও বাইনডউইড (bindweed)—এমন সব ধাতু শোষণ করছে, যা মৌমাছি ও অন্যান্য পরাগবাহীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
গবেষণায় দেখা গেছে, এসব গাছের মধুতে আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম ও সিসার মতো বিষাক্ত ধাতু পাওয়া গেছে। মৌমাছিরা যখন এই মধু সংগ্রহ করে, তখন তা সরাসরি তাদের স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে। ধীরে ধীরে তাদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, অনেকে মারা যাচ্ছে। এমনকি কম মাত্রার ধাতু থাকলেও তা মৌমাছির স্মৃতি ও শেখার ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। ফলে তারা খাবার খুঁজে পেতেও সমস্যায় পড়ে।
এই গবেষণাটি যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড শহরে চালানো হয়। একসময় ভারী শিল্প যেমন লৌহ-ইস্পাত, তেল শোধন ও গাড়ি তৈরির কেন্দ্র ছিল শহরটি। বর্তমানে সেখানে ৩৩,৭০০টিরও বেশি ফাঁকা প্লটে স্বাভাবিকভাবে গজিয়ে উঠেছে নানা ধরনের ফুলগাছ। এসব গাছ মাটির ভেতরকার দূষিত পদার্থ শোষণ করে নিচ্ছে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ধাতু শোষণ করে চকচকে নীল রঙের ফুলবিশিষ্ট চিকোরি গাছ (Chicory)। এরপরের অবস্থানে রয়েছে সাদা ক্লোভার, বুনো গাজর ও বাইনডউইড।
বিশ্বের বিভিন্ন শহরে মাটিতে ধাতব দূষণ বেড়ে চলেছে। শহরের বয়স যত বাড়ছে, মাটির দূষণও তত বাড়ছে। কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে—সিমেন্ট কারখানার ধুলা, খননকাজের বর্জ্য ইত্যাদি।
তবে এতে নিরুৎসাহ হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করছেন গবেষকরা। গবেষণার প্রধান লেখক ড. সারাহ স্কট বলেন, মৌমাছিদের জন্য বুনোফুল খুবই দরকারি খাদ্য উৎস। তাই আমরা চাই না মানুষ শহরে ফুল লাগানো বন্ধ করে দিক। তবে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে—মাটি কতটা নিরাপদ? আগে সেই মাটি পরীক্ষা করা উচিত। প্রয়োজনে স্থানীয় মাটি পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে কিনা, তা জেনে নেওয়া উচিত
তিনি আরও বলেন,মাটির স্বাস্থ্য ভালো না হলে ফুল যতই লাগানো হোক, মৌমাছির উপকারের বদলে ক্ষতি হতে পারে। তাই শহরে বুনোফুল লাগানোর আগে জমির ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা বুঝে নিতে হবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল