অভিশাপ কখনই মধুর নয়! বিশেষ করে যৌনতার ক্ষেত্রে! তবে যৌনতার সঙ্গে যে অলক্ষণ জড়িয়ে থাকতে পারে সেই বিষয়টি অজানা নয়। কিমিন্দম মুনির কাছ থেকে এমন অভিশাপ পেয়েছিলেন মহাভারতের রাজা পাণ্ডুই। কিমিন্দম যখন হরিণের রূপে সঙ্গমরত ছিলেন স্ত্রীর সঙ্গে, সেই সময়েই মৃগয়ায় অরণ্যে আসেন পাণ্ডু।
হরিণকে তিরবিদ্ধ করলে কিমিন্দম ফিরে আসেন স্বরূপে এবং অভিশাপ দেন রাজাকে- পাণ্ডু যখনই তার সঙ্গমরত হবেন, তার মৃত্যু হবে! সেই অভিশাপ সত্যও হয়েছিল যথা সময়ে। কিন্তু সে অন্য প্রসঙ্গ। সে কথার পুনরাবৃত্তি আপাতত নিষ্প্রয়োজন! কেন না প্রাচীন গ্রিসের সভ্যতা যৌনতার সঙ্গে জড়িত যে অভিশাপটি পেয়েছিল, তার কারণ কিছু আলাদা।
প্রাচীন গ্রিসের যে অংশ এই অভিশাপ লাভ করেছিল, তার নাম অ্যামাথাস। সাইপ্রাস দ্বীপের অন্তর্ভুক্ত ছিল অ্যামাথাসের সভ্যতা। জানা যায়, খ্রিস্টের জন্মের ১৫০০ বছর আগে ফিনিশীয়দের হাতে গড়ে ওঠে এই নগর। যার সমৃদ্ধির মূল ছিল দানা শস্য উৎপাদন এবং খনি থেকে তোলা তামা। অ্যামাথাসের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে প্রাচীন বিশ্বে। বাণিজ্য, বিলাসিতার শিখরে অবস্থান করতে থাকে অ্যামাথাস। খ্রিস্টের মৃত্যুর পরেও সপ্তম শতক পর্যন্ত অস্তিত্ব রক্ষা করতে পেরেছিল এই নগর। কিন্তু, একাদশ শতকে বাসিন্দাদের অ্যামাথাস ত্যাগ করতেই হয়। কারণ যৌনজীবনে অভিশাপ!
প্রত্নতাত্ত্বিকরা ২০০৮ সালের দিকে যখন খননকার্য চালান অ্যামাথাসে, তখন তাদের হস্তগত হয় এক লেদ লিপি। সেই লেদ লিপির পাঠোদ্ধার করে চমকে যান তারা। লিপিটিতে অভিশাপ দেওয়া হয়েছিল অ্যামাথাসের সব পুরুষদের। লেখা ছিল, ‘যখনই সঙ্গমরত হবে, ব্যথায় দীর্ণ হবে পুরুষাঙ্গ!’ তার সঙ্গে দেখা গিয়েছিল একটি ছবি। ছবিটিতে এক পুরুষ দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার হাতে ধরা একটি কাচের বালি ঘড়ি। বলা বাহুল্য, সেই অভিশাপের কথা জানার পরে ঝড় ওঠে সারা বিশ্বেই! রীতিমতো গবেষণার বিষয় হয়ে ওঠে অ্যামাথাসের এই অভিশাপ-লিপি। তবে হাজার গবেষণাতেও উদ্ধার করা যায়নি, কে ছিলেন এই অভিশাপের নেপথ্যে! পাশাপাশি, প্রশ্ন উঠেছিল- ঠিক কী কারণে অ্যামাথাসের পুরুষরা পেয়েছিল এমন ভয়ঙ্কর অভিশাপ!
গবেষকরা বলে থাকেন, একটা সময়ের পর অ্যামাথাসের সভ্যতায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল তন্ত্রচর্চা এবং ডাকিনীবিদ্যা। তার জেরে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল সাধারণ মানুষের। শক্তি আদায় করার জন্য নরবলি, তন্ত্রসাধনার নামে অবাধ যৌনাচার কাঁপিয়ে তুলেছিল অ্যামাথাসের প্রতিটি পাথর! তার জেরেই একদিন এক সন্তর অভিশাপ নেমে আসে এই নগরে। তবে অ্যামাথাসের সব পুরুষকেই তিনি এই অভিশাপ কেন দেন, তা আজও রয়ে গিয়েছে ধোঁয়াশায়!
অনুমান করা হয়, এই অভিশাপ সত্যি হয়েছিল। যার জেরে ধীরে ধীরে নির্বংশ হওয়ার দিকে এগোচ্ছিল অ্যামাথাসের সভ্যতা। উপায় না দেখে শেষ পর্যন্ত বাসিন্দাদের নগর ত্যাগ করতেই হয়! যদি স্থানত্যাগে কেটে যায় অভিশাপের প্রতিবন্ধকতা! সেই থেকে আজও প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন আর অভিশাপের দাগ নিয়ে পড়ে রয়েছে অ্যামাথাস। কালের প্রকোপে ধ্বংসের চিহ্ন তার সর্বাঙ্গে।
সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন
বিডি প্রতিদিন/২২ আগষ্ট ২০১৬/হিমেল-০৯