"খাঁচার পাখিরে যতই ভালো খাবার দেয়া হোক, সে তো আর বনের পাখি না। আমি একটা দায়িত্ব হিসেবে এখানে এসেছি। সংসদে মনের খোরাক পেতাম, বঙ্গভবনে পাই না। মনটা অনেক কিছু চায়" এভাবেই বঙ্গভবনে একবছর পূর্তির অনুভূতি প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, "ধরেন, মনে হলো কারো বাসায় যাবো। হাফ এন আওয়ারের মধ্যে গাড়ি রেডি হবে। কিন্তু রাস্তা বন্ধ হবে। যে বাসায় যাবো সেখানকার রান্নাঘর থেকে শুরু করে সব কিছু চেক হবে। ইচ্ছা হইলেও ইচ্ছা করা যায় না। নিতান্তই বিশেষ প্রয়োজন বা সরকারি কোন অনুষ্ঠান ছাড়া বের হই না। বাইরে যদিও যাই ১০টা মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারি না। ওখানেও নিরাপত্তা কর্মী থাকে। আই এম নট ফ্রি।"
গত বুধবার রাতে বঙ্গভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে ওই আলাপচারিতায় রাষ্ট্রপতি জানালেন নানা অভিজ্ঞতার কথা। বার্তা সংস্থা বাসস আজ শনিবার সেই আলাপচারিতা প্রকাশ করেছে।
১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে নির্বাচিত হওয়ার পর স্বাধীন বাংলাদেশে যতটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন প্রতিটিতে বিজয়ী হয়ে সংসদে যাওয়ার কৃতিত্বধারী আবদুল হামিদ ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। তার পর থেকে বঙ্গভবনের বাসিন্দা ভাটি অঞ্চলের এই মানুষকে এখনো টানে তার পেছনের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন, যে জীবনে দুই বার সংসদের স্পিকারের দায়িত্বও ছিল।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ইচ্ছা করলেও অনেক কিছুই করতে পারি না। আর ইচ্ছা করতেও তো অনেক সমস্যা। আসলে বেশি পলিটিক্যাল মানুষের জন্য, মানে গ্রাসরুটে রাজনীতি করা মানুষের জন্য এ জায়গাটা সব সময় আরামদায়ক হবে বলে মনে হয় না।
তিনি বলেন, যারা ফ্রিলি মানুষের সঙ্গে মেশে না, তাদের কথা আলাদা। এখানে বেশিরভাগই ছিলেন বিচারপতি-শিক্ষক। উনারা তো বেশি মানুষের সঙ্গে মেশেন না।
আবদুল হামিদ বলেন, ক্লাস নাইনে একুশে ফেব্রুয়ারি পালনের মধ্য দিয়ে আসলে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীবিরোধী চেতনা শুরু হয়। মানে ওই সময়ের শাসক যে আমাদের না, রাষ্ট্রভাষা বাংলা করলেও শাসক গোষ্ঠী যে আমাদের ভাষার বিরুদ্ধে, সেই চেতনার কথা বলছি। ৬০ সালে নিকলী স্কুলে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করেছিলাম। তিনি বলেন, ক্লাস নাইনে থাকতেই প্রথম থানায় ধরে নিয়ে গিয়েছিলো। আমাদের চার-পাঁচ জনকে। তবে লকআপে রাখেনি। সারাদিন-সারারাত থানায় ছিলাম। পরে শুনলাম মেজর আসবে, এটা ৫৯ সালের কথা বলছি। ৫৮ তে মার্শাল ল দিয়েছে আইয়ুব খান। মেজর আসার কথা শুনে লকআপে ঢুকালো। পরে মেজর আমাদের দেখে বললো-'এ তো বাচ্চা লোগ, ছোড় দো।'
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় আবদুল হামিদ আরও বলেন, আসলে এখানে পারসোনাল, প্রাইভেট লাইফ নেই। বিদেশে গেলেও শান্তি পাই না। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর প্রথম যে বার গেলাম, ভাবলাম কিছুটা হলেও ফ্রি। কিন্তু সেখানেও একা থাকতে দেবে না। নিরাপত্তাকর্মীরা সঙ্গে থাকে। আই এম নট অ্যাট অল ফ্রি ম্যান।
নিয়ন্ত্রিত জীবনে অভ্যস্ত হতে পেরেছেন কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রপতি বলেন, একটা গল্প আছে। একটা লোককে বলা হলো কিল কয়টা খাবি? বললো, একটাও না। যদি বাইন্ধা মারি তবে? তখন যত খুশি।