মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ পূর্ণভাবে পেতে হলে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করতে হবে এবং জামায়াত ও একই মতাবলম্বী উগ্র ধর্মান্ধদের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। এ দুটি আরাধ্য কাজ সম্পন্ন করার জন্য সমগ্র বাঙালি জাতির সংগ্রাম গত ৪৪ বছর যাবৎ অব্যাহত আছে। তবে এই ৪৪ বছরের বেশির ভাগ সময়ে রাষ্ট্র যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে ছিল না, বরঞ্চ উল্টো দিকে ছিল। এটাকে দুর্ভাগ্যই বলতে হবে। তবে মনুষ্য সৃষ্টি দুর্ভাগ্য। এই দুর্ভাগ্যের রজনী এখন কোন প্রহরে আছে তা ঠিক করে বলা না গেলেও এতটুকু বলা যায়, ভোর হতে বোধহয় আর বেশি বাকি নেই। কারণ, তাদের অগস্ত্যযাত্রা তো অনেক আগেই শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু পূর্ণ মর্যাদায় লাল সূর্য না ওঠা পর্যন্ত ফাঁড়া সম্পূর্ণ কেটে গেছে- সে কথা বলা যাবে না। তাই অগ্রাভিযানের সৈনিকদের সদা সজাগ ও সতর্ক থাকা প্রয়োজন। কোথায় যে তারা স্নাইপার বসিয়ে রেখেছে, তা কে জানে। যারা যুদ্ধাপরাধীদের রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসিয়েছে এবং আবার বসাতে পারে বলে এখনো আশঙ্কা আছে তাদের ভোট ব্যাংকের ব্যালান্স খুব যে একটা কমে গেছে তা মনে হয় না। আসলেই বাঙালি জাতির মন-মানসিকতা দুর্ভেদ্য। তা না হলে নিজামীর মতো গণহত্যাকারীকে ভোট দিয়ে এমপি-মন্ত্রী বানায়। যাক এ প্রসঙ্গে একটু পরে আসছি। যে সব মশহুর যুদ্ধাপরাধীর মামলাগুলোর রায় ট্রাইব্যুনাল ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে এবং আপিল বিভাগে এখন পেন্ডিং আছে সেগুলো যদি বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী নিষ্পত্তি ও শাস্তি কার্যকর হয় তাহলে একদিকে যেমন বিচারহীনতার কলঙ্ক থেকে রাষ্ট্র মুক্তি পাবে, তেমনি উগ্র ধর্মান্ধ রাজনীতির বিলুপ্তির পথ সুগম হবে। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপির সঙ্গে একাত্দ হয়ে যুদ্ধাপরাধীরা যখন মন্ত্রী হলেন, তখন বাংলাদেশের মানুষ হতাশ হয়ে মনে করেছিল এদের বিচার বোধহয় আর কোনো দিন হবে না। এ কারণে সে সময়ে এই যুদ্ধাপরাধীরা সীমাহীন ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে। ক্যামেরার সামনে বলেছে একাত্তরে কোনো মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। ওটা ছিল পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ। প্রকাশ্য দিবালোকে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। টেলিভিশনের বদৌলতে সারা বিশ্বের মানুষ সেটি দেখেছে। জাতি হিসেবে এর থেকে বড় লজ্জার কিছু থাকতে পারে না। তারপরও তারা মন্ত্রী থেকেছে। তারপরও বিএনপির সুপ্রিমো তারেক রহমান ঘোষণা দিয়েছে, জামায়াত-শিবির আর বিএনপি-ছাত্রদল একই মায়ের দুই সন্তান। তারপরও দুএকজন খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধা জামায়াতের সঙ্গে এককাতারে বসেছে, খানাপিনা করেছে এবং এখনো করছে। রাজনীতির স্বার্থান্ধতার এমন নিকৃষ্ট উদাহরণ বিশ্বে কোথাও পাওয়া যায় না। সুতরাং মানুষের হতাশ হওয়ারই কথা।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনী মেনুফেস্টোতে আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অঙ্গীকার করলে মানুষের ভিতর নতুন আশার সৃষ্টি হয়। কিন্তু বিএনপি ও তাদের চিহ্নিত সমর্থক বুদ্ধিজীবীরা শুরুতে বলতে লাগলেন, আওয়ামী লীগ কোনো দিন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করবে না। আর শুরু করলেও তা কোনো দিন সম্পন্ন করবে না, ঝুলিয়ে রাখবে। রায় বের হওয়া শুরু হলে বলতে লাগলেন, এ রায় কোনো দিন কার্যকর হবে না। সুতরাং জামায়াতেরও সেরকমই আত্দবিশ্বাস ছিল। কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হলে তারা একই সুরে বললেন, এই একটাই, আর কোনো ফাঁসি কার্যকর হবে না। আপিল বিভাগে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড রহিত হয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড হলে এই প্রোপাগান্ডাকারীদের গলা আরও বেড়ে যায়। সবার জানা কথা উল্লেখ করছি এ কারণে যে, সাধারণ জনমানুষের বিশ্বাসের ওপর অনবরত আঘাত করার জন্য তারা কীভাবে বিভ্রান্তিমূলক প্রোপাগান্ডা চালাতে পারে, এটা সবাইকে বুঝতে হবে। তবে প্রক্রিয়াজাত বিলম্বও বিভ্রান্তি ছড়াতে ইন্ধন জোগায়। ট্রাইব্যুনাল কামারুজ্জামানের রায় দেয় ৯ মে ২০১৩, আর আপিল বিভাগের রায় হয় ৩ নভেম্বর ২০১৪, প্রায় দেড় বছর পর। তাই নিজামী, মুজাহিদ, সাকাসহ যে নয়জনের রায় আপিল বিভাগে পেন্ডিং আছে সেগুলোর শেষ দেখা নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হলে সেটিকে অস্বাভাবিক বলা যাবে না। তবে কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে মানুষের ভিতর আবার বিশ্বাস ফিরে এসেছে। সবার ধারণা বাকি মামলাগুলো দ্রুত আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হবে। সুতরাং শাস্তি কার্যকর হবে না, এমন আশঙ্কা মানুষের মধ্যে আপাতত আর নেই। তবে আশঙ্কার জায়গা অন্যত্র। জনকেরা অগস্ত্যযাত্রার মঞ্চে ওঠার পরও কামারুজ্জামান গংয়ের সন্তানেরা আগের মতো ভি-চিহ্ন দেখানোর ধৃষ্টতা দেখায় কোন খুঁটির জোরে সেই বাস্তবতাকে এ দেশের তরুণ সম্প্রদায়, বিশেষ করে ভোটারদের উপলব্ধি করা প্রয়োজন। এই ভি-চিহ্ন ক্রোধ, হতাশা ও অসহায়ত্বের বহিঃপ্রকাশ। তারা হয়তো ভাবছে ২০০১-২০০৬ মেয়াদের মতো আবারও বিএনপির কাঁধে চড়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ পাবে। তা ছাড়া এই ধৃষ্টতা দেখানোর এক নম্বর খুঁটি হলো দেশের অভ্যন্তরে জামায়াতের বিশাল অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য। এই অর্থের জোরে তারা মিডিয়া থেকে শুরু করে রাষ্ট্রযন্ত্রের ভিতরে ছদ্মবেশী কর্তাব্যক্তি এবং বহুল পরিচিত কিছু টেলিভিশন টকশোওয়ালাদের কীভাবে শামাল দিচ্ছে তা একটু ভালো করে তাকালেই দেখা যায়। টাকায় বাঘের দুধ মিলে, এই ফর্মুলা জামায়াতের অর্থ উৎপন্নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভালোভাবে কাজে লাগাচ্ছে। এখানে রাষ্ট্রযন্ত্রকে মাঝে মাঝে অসহায়, আর নয়তো উদাসীন মনে হয়। মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে পশ্চিমা বিশ্বে তারা লবিস্ট (দালাল) নিয়োগ করেছে। এসব দালালের প্রভাবে বিশ্বের কিছু নামকরা প্রতিষ্ঠান যেমনয় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক 'হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা এবং দুএকটি নামকরা মিডিয়া যেভাবে যুক্তিহীন ও বাস্তবতা বিবর্জিত বক্তব্য দিচ্ছে তাতে বোঝা যায়, সত্যিই টাকায় বাঘের দুধ পাওয়া যায়।
তাদের যুক্তিহীনতা ও অবাস্তবতার দুএকটি উদাহরণ দিই। হিউম্যান রাইটওয়াচ বলেছে, 'কামারুজ্জামানের অপরাধ নাকি এত গুরুতর নয়, যার জন্য তার ফাঁসি হতে পারে।' এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে অবশ্যই বলতে হয়, তাহলে সোহাগপুরের বিধবা পল্লীর এতজন বিধবা জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কী মিথ্যা কথা বলছে? তাদের চোখ-মুখের ভাষা কি তাই বলে? সোহাগপুরের গণকবর কি মিথ্যা? হাড়গোড় তো এখনো আছে। আর একাত্তরে কামারুজ্জামান শেরপুর এলাকার বদর কমান্ডার ছিলেন তার প্রমাণ তো একাত্তরে তাদেরই পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অফিসিয়াল দলিলেই উল্লেখ আছে। কিন্তু রহস্যের বিষয় হলো হিউম্যান রাইটওয়াচ তাদের বক্তব্যের কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। পশ্চিমা বিশ্বের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রসঙ্গে সিঙ্গাপুরের মহান নেতা লি কুয়ানের একটা মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। লি কুয়ান পশ্চিমা বিশ্বের বন্ধু ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, 'পশ্চিমা বিশ্বের শিক্ষা ও সভ্যতার পরিপক্বতায় যে ধাঁচের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার তারা চর্চা করে তা স্বল্পোন্নত দেশের বাস্তবতায় সম্পূর্ণ বেমানান'। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও ফাঁসি কার্যকর প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সম্পর্কে কথা বলার সময় পশ্চিমা বিশ্বকে বিবেচনায় নিতে হবে যে, সত্তর দশকের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত ছাত্রকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যাকারী যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী পঁচাত্তরের পরে আগত সামরিক শাসক দ্বারা মুক্ত হয়ে বহাল তবিয়তে রাজনীতি করছে এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের তিনি এখন বড় নেতা। এমন অকল্পনীয় বাস্তবতা পশ্চিমা বিশ্বে নেই। তারপর বিএনপির প্রভাবশালী নেতা, সুপ্রিমকোর্ট বারের নেতা খোন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, তারা আগামীতে ক্ষমতায় গেলে সব যুদ্ধাপরাধীকে মুক্ত করে দেওয়া হবে এবং যারা এখন এই বিচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের বিচার করা হবে। একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর কাছ থেকে এমন বক্তব্য পশ্চিমা বিশ্বে কি ভাবা যায়? পশ্চিমা বিশ্ব সব ধরনের ফাঁসির বিরুদ্ধে, তাদের এ কথা কিন্তু ধোপে টিকে না। কামারুজ্জামানের ফাঁসির দুই-তিন দিন আগে আজিজুল হক বাচ্চু নামের এক আসামির ফাঁসি কাশিমপুর কারাগারে কার্যকর হয়েছে। কিন্তু কই, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, হিউম্যান রাইটওয়াচ, কেউ তো কোনো প্রতিবাদ করেনি। তাদের যত মানবাধিকার তা শুধু ওই যুদ্ধাপরাধীদের জন্য। এতেই বোঝা যায়, জামায়াতের অর্থ এখানে কথা বলেছে। তা ছাড়া হতে পারে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকেন্দ্রিক যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাজনৈতিক-সামরিক নীতির আওতায় বাংলাদেশকে তারা যেভাবে পেতে চায় সেই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় জামায়াতকে বাঁচিয়ে রাখা তাদের জন্য হয়তো প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্র তাদের গ্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজি অঞ্চলভিত্তিক ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন কীভাবে করে তার জ্বলন্ত উদাহরণ আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া ও সোমালিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব স্বার্থ সংশ্লিষ্ট স্ট্র্যাটেজি বাস্তবায়নের গ্যাঁড়াকলে পড়ে এই রাষ্ট্রগুলোর মানুষ আজ কী ভয়ানক মানবেতর জীবনযাপন করছে, তার দিকে বিশ্ব মানবতাবাদীদের খেয়াল করার সময় নেই। শত শত ড্রোন হামলায় হাজারো মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। মিথ্যা অজুহাতে ইরাকের মতো একটা আধুনিক রাষ্ট্রকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে ধ্বংস করে দিল। সাদ্দাম, গাদ্দাফি ও লাদেনের বেলায় যুক্তরাষ্ট্র কি কোনো মানবতা দেখিয়েছে? অথচ বাংলাদেশের গণহত্যাকারীদের মানবতা নিয়ে তাদের মাথাব্যথার শেষ নেই। তবে মুদ্রার অপর পৃষ্ঠার কথা হলো দক্ষিণ এশিয়ায় শেষ কথা বলার এখতিয়ার এখন আর শুধু আমেরিকার হাতে নেই। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজি বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতার দিকে তাকালে দেখা যায় তাদের এক ধাপের মিত্র আরেক ধাপের শত্রু। এই দ্বিমুখী আচরণের কারণেই বিশ্ব আজ উত্তপ্ত ও রক্তাক্ত।
২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর, ওই বছরের অক্টোবরের নির্বাচন এবং সব জেনেশুনে ২০০১-২০০৬ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের জামায়াত তোষণ দেখলে বাংলাদেশ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের বহুমুখী স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট দুরভিসন্ধির কিছুটা আভাস পাওয়া যায়। বিল ক্লিনটনের সফরকে ঘিরে যেসব ইস্যু সামনে এসেছিল তার দিকে তাকালে বোঝা যায়, স্বার্থের সমীকরণের সর্ব ক্ষেত্রে দুই দেশ এক মেরুতে অবস্থান করছে না। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে যেসব ক্রিটিক্যাল ইস্যুতে আওয়ামী লীগ সরকার আমেরিকার সঙ্গে একমত হয়নি সেগুলো ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি-জামায়াত সরকার চেষ্টা করেও জনঅসন্তুষ্টির ভয়ে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে পারেনি। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে জামায়াতের দুই মন্ত্রীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বলে দেয় আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শগত অবস্থান থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য রয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজীনার ভূমিকায় বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়। বর্তমান সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের এক নম্বর শত্রু উগ্র-ধর্মান্ধ জঙ্গি দমনে দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী সাফল্য অর্জনের জন্য শেখ হাসিনা সরকারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের তো দ্বিধাহীন সমর্থন থাকার কথা। কিন্তু তা কী আমরা দেখতে পারছি? কিন্তু মূল কথা হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রধান দুই দল যদি একমত হতো তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আজ ভিন্ন হতো। এটা এখন জলের মতো পরিষ্কার যে, বিএনপির সঙ্গে মিত্রতাই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে জামায়াতের সবচেয়ে বড় খুঁটি। বাংলাদেশের প্রায় শতভাগ মানুষ, এমনকি বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যাপকসংখ্যক নেতা-কর্মীর নীরবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে অবস্থান হওয়ায় বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা বিচার সম্পর্কে এখন একেবারেই চুপচাপ হয়ে গেছে। অথচ ২০১১ সালে ১৯ অক্টোবর রোডমার্চ শেষে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জনসভায় বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন- নিজামী, মুজাহিদ, সাকা চৌধুরী স্বাধীনতাবিরোধী নয়, তাদের মুক্তি দিতে হবে (সমকাল ও জনকণ্ঠ ২০ অক্টোবর ২০১১)। তা ছাড়া ওই বছর ডিসেম্বরের ৩ তারিখে সংবাদ সম্মেলন করে মওদুদ আহমদ ট্রাইব্যুনাল বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু বিএনপির ওই ডাকে মানুষের কোনো সাড়া ছিল না, এখনো নেই। তাই প্রত্যাশা অনুযায়ী সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার যদি দ্রুত সম্পন্ন হয়, দণ্ড কার্যকর হয়, তাহলে বিএনপিকেও অবস্থান পরিবর্তন করতে হবে। বেশ কিছুদিন আগে প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেছিলেন, বিএনপি জামায়াতকে ত্যাগ করলে আমাদের রাজনীতির অর্ধেক সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। এ বছর পয়লা বৈশাখে বাঙালি ও বাঙালি জাতিসত্তার যে বাঁধভাঙা মানুষের জোয়ার দেখেছি তাতে এর বিপরীতে থাকা পশ্চাৎপদতা এবং ধর্মান্ধতার কোনো স্থান বাংলাদেশে হবে না। তাদের ভি-চিহ্নের জবাব এ দেশের তরুণ প্রজন্ম দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। সুতরাং এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, কামারুজ্জামানের ফাঁসির মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথে আরেকটি বিজয় অর্জিত হলো। তবে এখনো যেতে হবে বহুদূর। Another battle is won only, in the way to the ultimate victory of war.
লেখক : কলামিস্ট ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।