বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাবেক আইপিজিএম অ্যান্ড আর এ আমি ১৯৮৯ সালের জুন থেকে শুরু করে ২০১৫ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত কাজ করি। মাঝে দুই বছর ১৯৯৬-৯৮ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধানের সময় বাদ দিয়ে। পিজি বা বঙ্গবন্ধুতে আমি সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, অধ্যাপক, অধ্যাপক ও বিভাগীয় চেয়ারম্যান, ট্রেজারার এবং উপাচার্য হিসেবে কাজ করেছি। আত্মিকভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আমার আত্মায় গাঁথা। আমার হৃদয় বা আমার প্রাণ। অনেকের অধীনে কাজ করেছি। সবার সন্তুষ্টি পেয়েছি। আবার কাজের নেতৃত্বও দিয়েছি। আমার বিবেক বলে সফলতার পাল্লাটা ব্যর্থতার পাল্লার চেয়ে ভারী। জানি না, জনগণের নিরপেক্ষ আদালত কী বলে? বিশ্ববিদ্যালয়টি ছিল একটি ছোট হোটেল অর্থাৎ শাহবাগ হোটেল, পরবর্তীতে আইপিজিএম অ্যান্ড আর, সর্বশেষ ১৯৯৮ সালের ৩০ এপ্রিল জাতির পিতার নামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় এখন বিশ্ববিদ্যালয় একটি ক্যাম্পাসে পরিণত হয়েছে। ভৌত কাঠামোর পরিবর্তন হয়েছে, বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন বিভাগ খোলা হয়েছে, গবেষণা কাজে অধিক জোর দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে। সব মিলে গরিব ও মধ্যবিত্তের একটি আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে।
দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তুলনা করলে চিকিৎসা পেশার মেধাবী শিক্ষকদের একটি অংশ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করছেন। শুরুতেই বলতে হচ্ছে অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হকের কথা। তিনি মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান। নিজেই প্রস্তাব করলেন ইন্টারনাল মেডিসিন এবং এন্ডোক্রাইনোলজিকে আলাদা বিভাগ করে তাকে শুধু রিউমেটোলজি বিভাগের নেতৃত্ব দেওয়া হোক। এ উইংগুলোর নিজস্ব আয় বলতে কিছুই নেই। তারপরেও অধ্যাপক জলিল চৌধুরী এবং অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের হাতে যথাক্রমে দুটো বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হলে, এটা অনেক ভালোভাবে চলবে। তাই তাদের বিভাগগুলো যাতে স্বয়ংক্রিয় এবং গবেষণা চালিয়ে কাজ করতে পারে সেজন্য সাহায্য এনে তাদের বিভাগগুলো চালু করে দেই। ডা. ফরিদ, ডা. আতিক এবং ডা. জলিল সবাই আমার জুনিয়র। আমার কাছে তারা ত্রি-রত্ন। এ তিন বিভাগে আরও যারা নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক এবং চিকিৎসক তারা হলেন- অধ্যাপক আবুল হাসনাত, অধ্যাপক আবদুুর রহিম, অধ্যাপক জিলন মিঞা সরকার এবং অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ। ডিন হিসেবে পর পর দুবার নির্বাচিত হওয়াই প্রমাণ করে ডা. আবদুল্লাহ কত জনপ্রিয় একজন সহকর্মী। অধ্যাপক নজরুল এবং অধ্যাপক মিনহাজকে নিয়ে সৈয়দ আতিক গবেষণায় অনেক উন্নতি করতে পারবেন।
কার্ডিওলজি বিভাগে অধ্যাপক আবু সিদ্দিক, অধ্যাপক সজল, অধ্যাপক চৌধুরী মেশকাত, অধ্যাপক শফিউদ্দীন, অধ্যাপক আলী আহসান এবং অধ্যাপক ফজলুর রহমান সবাই ওই বিভাগের প্রাণ। অধ্যাপক সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জিকে কত রোগী আমাকে উপাচার্যের কক্ষ থেকে রেফার করতে হয়েছে, তার হিসাব আমার কাছেও নেই এবং সজলের কাছেও নেই। সবাইকে সব সময় হাসিমুখে চিকিৎসা দিতে পেরেছে। ডা. হারিসুল হক এবং মোস্তফা জামানও আমার অনেক যন্ত্রণার শিকার হয়েছেন। মেডিকেল কলেজের সিনিয়রিটি ধরলে তারা সবাই আমার জুনিয়র এবং কেউ কেউ সরাসরি ছাত্র। গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের অধ্যাপক রায়হান, অধ্যাপক প্রজেস, অধ্যাপক আবদুর রহিম মিয়া এবং হাসান মাসুদসহ অন্য সবাই মিলে চেষ্টা করলে এটা দেশের সেরা একটা বিভাগ হতে পারে। আমি ব্যর্থ, চাহিদা মোতাবেক তাদের যন্ত্রপাতি ক্রয় করে দিতে পারিনি। তবে টিচিং হাসপাতালে যন্ত্রপাতি একটু তাড়াতাড়ি রিপ্লেস করতে হয়। যেহেতু শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের কাজে বাইরের ক্লিনিকগুলোর চেয়ে এদের ব্যবহার শতগুণ বেশি। বিদেশি এই সব fibre optic যন্ত্রপাতি খুবই দামি।
নিউরোলজি বিভাগে চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহসহ অন্য অধ্যাপকদের মধ্যে ডা. হান্নান, ডা. রিজভী, ডা. রফিক, ডা. রেজাউল করিমের প্রচেষ্টায় এবং সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপকদের সহযোগিতায় অত্যন্ত সুন্দরভাবে বিভাগটি কাজ করে চলছে। স্ট্রোক ম্যানেজমেন্টসহ নিউরো-ডিসএবিলিটির সব ধরনের চিকিৎসায় যথেষ্ট পারদর্শিতা এদের রয়েছে। আমার মনে হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউন্যাটোলজি বিভাগ সবচেয়ে বড় এবং অর্গানাইজড। যারা এ বিভাগের প্রাণ, তারা হলেন অধ্যাপক শাহিদুল্লা, মান্নান, সঞ্জয় এবং অর্জুন। এক কথায় বলতে গেলে বলা যায় নবজাতক চিকিৎসায় তারা হলেন চতুরঙ্গ এক চিকিৎসক দল। তাদের রেসিডেন্টদের দিয়ে তারা যেমন কাজ আদায় করে নিতে পারেন, তেমনি প্রশিক্ষণও দেন হাতে ধরে। আমার প্রিয় এবং খুবই স্নেহের ছাত্র অধ্যাপক রফিকুল আলম আজুর নেতৃত্বে নেফ্রোলজি বিভাগ যথেষ্ট সম্প্রসারিত হয়েছে। অধ্যাপক আছিয়া খানমও এ বিভাগের একটি প্রভাবক শক্তি।
অধ্যাপক মো. মঈনুজ্জামানের নেতৃত্বে ফিজিক্যাল মেডিসিন এ রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ সামান্য সম্প্রসারিত হয়েছে, কাজের গুণগত মান বৃদ্ধি পেয়েছে, অধ্যাপকদের বসার জায়গা, ক্লাস রুমের ব্যবস্থা হয়েছে, কিন্তু আরও অধিক সম্প্রসারণ প্রয়োজন, দেশের চাহিদার প্রেক্ষিতে, যেহেতু অবকাঠামো বৃদ্ধি পেয়েছে, এখন সম্প্রসারণ সময়ের ব্যাপার। চৌধুরী আলী কাওসার, সাহানা আখতার রহমান, মিজানুর রহমান এবং শাহীন আখতার শিশু রোগের বিভিন্ন শাখায় একেকজন দক্ষ শিক্ষক ও গবেষক। শিশুরোগ বিভাগের মর্নিং সেশন সত্যিই একটা উপভোগ্য এবং চমকপ্রদ শিক্ষা সেমিনার। নিজ নিজ উইংকে শক্তিশালী করার জন্য তারা সবাই নিবেদিত। যে চারজনের কথা আমি এখানে বললাম তারা সবাই চতুর্মুখী গুণে গুণান্বিত।
শিশু গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির অধ্যাপক এএসএম বজলুল করিম এবং শিশু অঙ্কোলজির অধ্যাপক আফিকুল ইসলাম এবং অধ্যাপক চৌধুরী ইয়াকুব জামাল তাদের নিজস্ব বিভাগগুলোকে যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করছেন। শিশু অঙ্কোলজির বিভাগের সঙ্গে বিদেশি সহযোগিতাও প্রশংসার দাবি রাখে। কৃতিত্ব অধ্যাপক আফিক এবং অধ্যাপক ইয়াকুব জামালের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক প্রাপ্ত অধ্যাপক একেএম খোরশেদ আলম অত্যন্ত মেধাবী চিকিৎসক ও শিক্ষক হলেও শারীরিক অসুস্থতার জন্য তিনি যতটুকু শ্রম দেওয়ার কথা ঠিক ততটুকু দিতে না পারলেও অধ্যাপক নূরুদ্দিন বিভাগের হাল ধরে আছেন। ডা. আইয়ূব আল মামুনরা যদি অক্লান্ত পরিশ্রম করে হেপাটোলজি বিভাগকে নূরুদ্দীনের নেতৃত্বে গড়ে তুলতে চান, তাহলে এটা সম্ভব বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
অর্থোপেডিকস বিভাগে অধ্যাপক নকুল দত্তের নেত্বত্বে যে ১৫ জন শিক্ষক আছেন, তারা সবাই যদি নিবেদিতপ্রাণ হয়ে জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থাটা চালু রাখেন তবে তা কাজের কাজ বলে বিবেচিত হবে। OT সহ আমি ইমার্জেন্সি খুলে দিয়ে এসেছি, সেটার মাধ্যমে সেবা দিয়ে পঙ্গু হাসপাতালের চাপ অনেকটা লাঘব করতে পারেন এবং যা সম্ভব। এটা সম্পূর্ণভাবে চিকিৎসকদের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। জরুরি অর্থোপেডিক সেবা চালু করার পেছনে একটাই উদ্দেশ্য ছিল যেন আমার রেসিডেন্টগুলো ভালো সার্জন হিসেবে বের হন। এ জন্য দরকার ১৫ জন বিশেষজ্ঞ তাদের কাছে আসা জরুরি রোগীগুলোকে হাসপাতালে রেফার করে প্রাইভেট চিকিৎসার চেয়েও যেন ভালো চিকিৎসা দেন, যাতে তারা সুস্থ হয়ে ফিরে আরও রোগী রেফার করবেন।
ইউরোলজি বিভাগের তরুণ ও পুরনো চিকিৎসকদের যে টিম কাজ করছে তাদের দক্ষতা ও শৈল্য শিল্প আন্তর্জাতিক মানের। কিডনি ট্রান্সপ্লান্টে তাদের পারদর্শিতা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। আমার অনুরোধ থাকবে তারা যেন অধ্যাপক এম এ সালামের সার্জিক্যাল দক্ষতা ও জ্ঞান রেসিডেন্টদের কাজে লাগানোর জন্য তাকে অতিথি ফ্যাকাল্টি হিসেবে আমন্ত্রণ জানান। এটা অনস্বীকার্য তিনি বর্তমানে দেশের সেরা ইউরোলজিস্টদের একজন। অ্যানেসথেসিয়াকে অগ্রাধিকার দিয়ে জাতীয় পর্যায়ে রাষ্ট্রের চাহিদা মেটানোর জন্য বিশেষজ্ঞ অ্যানেসথেসিস্ট তৈরির যে প্রক্রিয়াটা বিশ্ববিদ্যালয় শুরু করে দিয়েছে তার ফলশ্রুতিতে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশের নূ্যনতম চাহিদা পূরণ হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ অধ্যাপকদের একটা গ্রুপ, যারা আমার ছাত্রতুল্য তারা সবাই এত একাগ্রতা নিয়ে কাজ করছেন, আমি আশাবাদী অদূর ভবিষ্যতে কোনো সার্জন অ্যানেসথেটিস্ট নিয়ে কোনো অভিযোগ করবেন না। আমি এই বিভাগের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করি। সার্জারি বিভাগের সার্জনদের দক্ষতা নিয়ে (দুই-একজন ব্যতীত) কারও কোনো প্রশ্ন নেই। অধ্যাপকদের মধ্যে পাঁচজন এতই দক্ষ যে, তারা পঞ্চপাণ্ডবের সঙ্গে তুলনীয়। তাদের সার্ভিসটা যদি জুনিয়রদের সঙ্গে নিয়ে সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত হয় তাহলেই সম্ভব নতুনত্ব দেওয়া। এ প্রসঙ্গে দিলি্লর অলইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সের ডা. বেনু গোপাল সম্বন্ধে প্রচলিত একটি বাক্য 'বেনু গোপাল কখন আসে কখন যায় কেউ জানে না' অর্থাৎ তিনি সকাল ৮টার আগে আসেন এবং রাত ৮টার পর হাসপাতাল থেকে বের হন। বেসিক সায়েন্সের প্রতিটি বিভাগে দুই-একজন ব্যতীত সবাই অত্যন্ত আন্তরিক, নিয়মানুবর্তী। তাদের দক্ষতাও প্রশ্নাতীত। এনাটমির অধ্যাপক মানজারে শামীম ভাইকে ডা. বেনু গোপালের সঙ্গেই তুলনা করা যায়। রকফেলার ফাউন্ডেশনের সহায়তায় পাবলিক হেলথ এবং ইনফরমোটকস বিভাগ অত্যন্ত সুন্দরভাবে গবেষণার কাজে সহায়তা দিচ্ছেন। লন্ডন থেকে চাকরি ছেড়ে দেশে এসে ডা. সৈয়দ শরীফুল ইসলাম, যেভাবে এই বিভাগে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, অচিরেই এই বিভাগটি দেশে পাবলিক হেলথের নেতৃত্ব দিতে পারবে। রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম অধ্যাপক নজরুল ভাইয়ের নেতৃত্বে প্রোভিসি রুহুল আমিন মিঞার সহযোগিতায় যেভাবে এগোচ্ছে, আমি নিশ্চিত এটা সত্যিকার বিশেষজ্ঞ তৈরির সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখবে।
এ পর্যন্ত আমি যাদের কথা বললাম তাদের প্রত্যেকেই স্বপ্ন দেখতে পারেন এবং তা বাস্তবায়নের ক্ষমতা রাখেন। স্বপ্নই জাতিকে উন্নীত করে। দেশকে আমি কী দিতে পারি? অন্যান্য দেশের মধ্যে আমার দেশকে সম্মান দিতে পারি। আমার ভাই-বোনের মুখে হাসি ফোটাতে পারি। শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং শিক্ষা ও সুস্বাস্থ্য ব্যবস্থার মধ্যে তা সম্ভব। আত্মসম্মান অর্জনের ক্ষেত্রে শিক্ষা হলো প্রধান। তবে এ শিক্ষা হওয়া উচিত সুশিক্ষা। কুশিক্ষা বা বাণিজ্যিক শিক্ষা সমাজকে কিছুই দিতে পারে না। মনে রাখা উচিত, সুস্বাস্থ্য সেবার ব্যাপ্তি ও একটি দেশের মান উন্নয়নের সূচক। যাদের আমি ত্রিরত্ন, চতুরঙ্গ, পঞ্চপাণ্ডব এবং চতুর্মুখী গুণে গুণান্বিত বললাম, তাদের সবাই যদি সব কিছু ছেড়ে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু শিক্ষকতা ও গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেন, তাহলে এ বিশ্ববিদ্যালয় অচিরেই বিশ্বভুবনে তার আসন করে নেবে। দরকার প্রয়োজনীয় ফান্ড। এই ফান্ড শুধু ওষুধ কোম্পানিগুলো, যথেচ্ছা খরচ না করে গবেষণার কাজে দিলেই তা সম্ভব। এখানে সরকারের নূ্যনতম সুবিধাদিই যথেষ্ট। ওষুধ কোম্পানিগুলো বিদেশে যেভাবে গবেষণার কাজে অর্থ ব্যয় করেন, ঠিক সেভাবে এদেশে ব্যয় করলে, গবেষকদের আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকেই আমন্ত্রিত অতিথির মর্যাদায় ব্যয় নির্বাহ করা যাবে। তাদের কোনো ওষুধ কোম্পানির সহায়তায় সেমিনার বা সিম্পোজিয়ামে যেতে হবে না। পূর্বের সোভিয়েত ইউনিয়নে যেখানে শুধু আমাকে এমএস এবং পিএইচডি করার জন্য প্রায় সাড়ে তিন বছর অধ্যয়ন করতে হয়েছিল, যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে শ্রুতিবিদ্যা এবং বধিরতার রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিয়ে এমএসসি করার জন্য প্রায় দেড় বছর লেখাপড়া করতে হয়েছিল, জার্মান ফেলোশিপে ছয় মাস মধ্যকর্ণের ওপর জার্মানির টিউবিনগেন পড়াশোনার জন্য ব্যস্ত থাকতে হয়েছিল এবং বিদেশি নামিদামি মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল দেখার সুযোগ হয়েছিল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও প্রশাসনিক কাজ চালিয়ে আমি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলাম, যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান আরও উঁচুতে নিতে হলে, আমাদের এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নন-প্রাকটিসিং হতে হবে। এবং ভালো ডাক্তার তৈরির জন্য রেসিডেন্সি ট্রেনিং প্রোগ্রাম চালু করতে হবে। রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম চালু হয়েছে। প্রথম ব্যাচ বিশেষজ্ঞ হিসেবে বেরও হয়ে গেছেন। গত ২ বছরে কীভাবে নন-প্রাকটিসিং বাস্তবায়ন করা যায় তা নিয়ে সিনিয়র শিক্ষকদের সহায়তায় একটি কাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
নন-প্রাকটিসিং হলে কিছু কিছু ভালো চিকিৎসক চাকরি ছেড়ে দিতে পারেন। তবে এ ব্যাপারে কিং জর্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রবি কান্তের মতামত হলো ‘Initially there will be loss but finally there will be gain’। ভারতে যে কয়টি স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং সেবা প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছেছে, তার সবই নন-প্রাকটিসিং যেমন অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্স, পি জি আই চণ্ডীগড়। এমন কি, টাটা মেমোরিয়াল ক্যান্সার হাসপাতালেও যে সব বিশেষজ্ঞ চাকরি করেন, তারা প্রাইভেট প্রাকটিস করতে পারেন না। আমি আশা করব, বর্তমান প্রশাসন তৈরি করা নন-প্রাকটিসিং কাঠামো, পরিবর্তিত, পরিবর্ধিত বা পরিমার্জিত করে বাস্তবায়ন করবেন এবং সরকার নতুন যে দুটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করছেন তা শুরুতেই নন-প্রাকটিসিং হলে এ দেশে চিকিৎসার গুণগত মানের ব্যাপক উন্নতি হবে। পাঠক নিশ্চয়ই জানেন, বিকল্প হিসেবে আমরা বঙ্গবন্ধুতে Evening professorial consultancyএবং অপারেশন চালু করেছি তা পরিপূর্ণভাবে সার্থক হয়েছে।
লেখক : সাবেক উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।