বিখ্যাত ফরাসি ঔপন্যাসিক, কবি ও নাট্যকার অনরে ডি বালজাক জীবন যাপনে উচ্ছৃঙ্খল ও নিয়মরীতিহীন ছিলেন, যা তাকে ১৮৫০ সালের ১৮ আগস্ট মাত্র ৫১ বছর বয়সে পৃথিবী ত্যাগ করতে বাধ্য করেছে। মৃত্যুর কয়েক মাস আগে তিনি বিয়ে করেছিলেন এবং যন্ত্রণাকর মৃত্যুর সময় তার স্ত্রী এভলিনা হানসকা তার পাশে ছিলেন না। যখন তিনি মারা যান তখন তার সঙ্গে ছিলেন তার মা, বোন ও কয়েকজন ভৃত্য।
১৯৩৪ সালে তার মস্তিস্কে সামান্য জটিলতা ধরা পড়ে। তিনি ক্লান্তি ও আচ্ছন্ন বোধ করতেন। এ অবস্থা আবার ফিরে আসে দুই বছর পর। ডাক্তাররা এটিকে 'অ্যারাকনোডাইটিস' অর্থ্যাৎ মস্তিস্কের তিনটি আচ্ছাদনের একটিতে প্রদাহ বলে সনাক্ত করেন। তিনি প্রচুর পরিমাণে ঘন, কালো কফি পান করতেন। যার ফলে তার পাকস্থলীতে খিঁচুনির সৃষ্টি হতো এবং তার উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যেত, যা এক পর্যায়ে হাইপারট্রোফি'-তে রূপ নেয় এবং হৃদপিণ্ডের বাম দিকে ভিন্ট্রিক্যাল স্ফীত হয়ে যায়। তার শরীর ফুলে যায় এবং তার মুখ অবশ হয়ে পড়ে। ১৮৪০ সালে তিনি হেপাটাইটিস ও অবসাদে ভোগেন, মাথাব্যথা হতে থাকে। মোমবাতির আলোতে কাজ করার কারণে তার দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে যায়। ১৮৪৭ সালে তিনি রাশিয়ায় অবস্থানকালে তার ব্রঙ্কাইটিস হয় এবং তিন বছর পর যখন প্যারিসে ফিরে আসেন তখন তিনি আর চোখে দেখতেন না। বাড়ি ফিরে তিনি দেখতে পান যে তার বিশ্বস্ত ভৃত্য মানসিক রোগগ্রস্থ হয়ে পড়েছে।
বালজাক তখন মন্ত করেন- “কী অশুভ আলামত! এই বাড়ি থেকে আমি আর কখনও জীবিত বের হতে পারবো না।” এবং তিনি আর কখনও সেই বাড়ির বাইরে যেতে পারেননি। কয়েক মাসের মধ্যে তিনি তার বেঁচে থাকার আশা পরিত্যাগ করেন। তার অমর প্রন্থ “লা কমেডি হুমানেঁ” তিনি শেষ করে যেতে পারেননি। তিনি তার শয্যা থেকে বিকারগ্রস্থের মত চিৎকার করতেন “বিয়ানকনকে ( লা কমেডি হুমানেঁ’ এর বিখ্যাত ডাক্তার) ডাকো। তিনি আমাকে রক্ষা করবেন।” মৃত্যুর মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে তাকে দেখতে গিয়েছিলেন তার বন্ধু বিশ্বখ্যাত উপন্যাস “লা মিজারেবল” এর লেখক ভিক্টর হুগো।
ভিক্টর হুগো তাঁর বন্ধুর মৃত্যুকে এভাবে স্মরণ করেছেন-
“১৮৫০ সালের ১৮ আগস্ট আমার স্ত্রী, যিনি দিনের বেলায় ডি বালজাককে দেখতে গিয়েছিলেন, আমাকে বললেন যে বালজাক মারা যাচ্ছেন। আমি তড়িঘড়ি তার কাছে গেলাম। বালজাক আঠারো মাস যাবত হৃদপিণ্ডের হাইপারট্রোফিতে ভুগছিলেন। ফেব্রুয়ারির বিপ্লবের পর তিনি রাশিয়ায় যান এবং সেখানে বিয়ে করেন। তার বিদায়ের কিছুদিন আগে আমি তার সঙ্গে বুলেভার্ডে সাক্ষাৎ করি। তিনি তার শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যার কথা বলছিলেন এবং শব্দ করে নিঃশ্বাস নিচ্ছিলেন। ১৮৫০ সালের মে মাসে তিনি ফ্রান্সে ফিরে আসেন। তিনি বিয়ে করেছেন, ধনবান হয়েছেন এবং মৃত্যুবরণ করছেন। তিনি যখন ফিরে আসেন তখনই তার পা ফোলা ছিল। চার জন্য ডাক্তার এ নিয়ে আলোচনা করেন। তাদের একজন এম লুই ৬ জুলাই আমাকে বলেন, “তিনি ছয় সপ্তাহের বেশি বাঁচবেন না।” এই একই ব্যাধিতে মারা গিয়েছিলেন ফ্রেডারিক সোলি।
১৮ আগস্ট আমার চাচা জেনারেল লুই হুগো আমার সঙ্গে রাতের খাবার খান। খাবার শেষে আমি একটি ট্যাক্সি নিয়ে কোয়ার্টার বুজোঁ’র ফোরটিনথ এভিনিউয়ে বালজাকের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। তিনি এম ডি বুর্জো’র প্রাসাদোপম বাড়ির ধ্বংসাবশেষ ক্রয় করেছিলেন, যার কিছু অংশ ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছিল। তিনি চমৎকারভাবে বাড়িটি সাজান এবং খুব সুন্দর একটি বাড়িতে পরিণত করেন। ফোরটিনথ এভিনিউ এর দিকে বাড়িতে ঘোড়ার গাড়ি প্রবেশের পথও ছিল এবং একটি দীর্ঘ ও সরু উদ্যানও ছিল, যেখানে এখানে-ওখানে ফুলের কেয়ারি ছিল।
আমি বেল টিপলাম। চাঁদ ওঠলেও মেঘে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। রাস্তা জনশূন্য। কেউ এলো না। আমি আবার বেল টিপলাম। দরজা খুললো। মোমবাতি হাতে একজন পরিচারিকা বের হয়ে এলেন। “আপনি কী চান, মহোদয়?” তিনি প্রশ্ন করলো। কাঁদছিলেন তিনি।
আমি তাকে আমার নাম বললাম। তিনি আমাকে নিচতলার একটি কক্ষে নিয়ে গেলেন, যেখানে একটি চিমনির বিপরীত দিকে বালজাকের বড় আকৃতির একটি আবক্ষ মূর্তি। সেখানে চমৎকার একটি টেবিলের ওপর মোমবাতি জ্বলছিল এবং খাঁটি সোনার প্রলেপে উজ্জ্বল ছয়টি মূর্তি ছিল।
আরেকজন মহিলা, তিনিও কাঁদছিলেন, তিনি এসে বললেন, “উনি মারা যাচ্ছেন। ম্যাডাম তার রুমে গেছেন। গতকাল থেকে ডাক্তাররা আসেননি। তার বাম পায়ে একটি আঘাত রয়েছে। গ্যাংগ্রিনে রূপ নিয়েছে। ডাক্তাররা বুঝতে পারছেন না যে কী করতে হবে। তারা বলেছেন যে এটি প্রচণ্ড বেদনাদায়ক শোথ রোগ। এটিকে তারা এই নামেই বলেন- ত্বক এবং মাংসপেশী চর্বির মত হয়ে গেছে এবং তাকে নিরাময় করে তোলা দুঃসাধ্য। গতমাসে তিনি বিছানায় যাওয়ার সময় একটি সাজানো ফার্নিচারের ওপর পড়ে যান এবং তার পায়ের চামড়া ফেটে যায় এবং তার শরীরের জমে থাকা পানি বের হয়ে যায়। ডাক্তাররা খুব অবাক হয়েছিলেন এবং তখন থেকে তারা শরীরে ফুটো করেছেন।
তারা বলেন, “প্রকৃতিতে অনুকরণ করছি।” কিন্তু বিভিন্ন অঙ্গে ফোঁড়ার কারণে চিকিৎসা বাধাপ্রাপ্ত হয়। এম রক্স অপারেশন করেন। গতকাল তারা ড্রেসিং খুলেছেন, আঘাত শুকানোর বদলে লাল ছিল ও জ্বলছিল। এরপর তারা বলেন, “তার বাঁচার আশা নেই” এবং তারা আর ফিরে আসেননি। চার পাঁচজনকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু প্রত্যেকে বলেছেন, “কোনো লাভ নেই।” কষ্টকর রাত কাটিয়েছেন তিনি।
আজ সকাল নয়টা থেকে মশিয়েঁ কথা বলতে পারছেন না। ম্যাডাম একজন যাজককে খবর দিয়েছিলেন, তিনি আসেন এবং মশিয়েঁকে শক্তিশালী মলম দেন। এক ঘন্টা পর তিনি তার বোন ম্যাডাম ডি সারভিলের সঙ্গে হাত মেলান। বেলা এগারোটা থেকে তার গলায় শব্দ হচ্ছে এবং তিনি আর দেখতে পারছেন না। তিন আজ রাতে টিকবেন না। মহোদয়, আপনি যদি চান আমি যেয়ে সারভিলকে খবর দিতে পারি, যিনি এখনও জেগে আছেন।”
মহিলা চলে গেলেন। আমি কয়েক মিনিট অপেক্ষা করলাম। মোমবাতির আলোতে কক্ষটি ও কক্ষের দর্শনীয় আসবাবপত্র এবং পোরবাস ও হলবেঁ’র আঁকা চিত্রগুলো তেমন আলোকিত নয়। মর্মর পাথরের আবক্ষ মূর্তি যেন মৃতপায় মানুষটির অশরীরি প্রেত। মৃতের মত একটি গন্ধ বাড়িটিতে ছড়িয়ে পড়েছে। এম ডি সারভিল প্রবেশ করলেন এবং পরিচারিকা যা বলেছেন সে সম্পর্কে আমাকে নিশ্চিত করলেন। আমি মশিয়েঁ বালজাককে দেখার জন্য অনুরোধ জানালাম।
একটি করিডোর পেরিয়ে আমার লাল কার্পেটে মোড়া ও শিল্পকর্ম, চিত্র, ভাস্কর্য, ফুলদানি, চকচকে ক্যাবিনেট দিয়ে সাজানো একটি সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠলাম। এরপর আরেকটি করিড়োরের পর একটি খোলা দরজা দেখতে পেলাম। আমি জোরে নিঃশ্বাস নেয়ার অশুভ শব্দ শুনতে পেলাম। নিজেকে দেখতে পেলাম বালজাকের শয়ণকক্ষে।
কক্ষের মাঝ বরাবর একটি বিছানা। এটি অ্যাকাসিয়া কাঠ দিয়ে তৈরি, বিছানার সিথানে ও পায়ের দিকে আড়াআড়িভাবে ফিতা দিয়ে যুক্ত, দৃশ্যত বিছানায় শায়িত অসুস্থ লোককে ওপরের দিকে ওঠানো ও তার নড়াচড়া করানোর সুবিধাথে করা হয়েছে। ডি বালজাক এই বিছানায় শায়িত ছিলেন, বেশ কয়েকটি বালিশ জড়ো করে তাঁর মাথার ভারসাম্য রক্ষা করা হয়েছে, এবং বালিশগুলোর সঙ্গে যোগ করা হয়েছে একই কক্ষের সোফা থেকে নেওয়া আরও কয়েকটি লাল রঙয়ের ছোট উঁচু কুশন। তার মুখের রঙ পাংশুটে, প্রায় কালো এবং ডানদিকে ফেরানো। তার দাড়ি কামানো হয়নি, কিন্তু তার পাকা চুল ছোট করে ছাঁটা। তার চোখ খোলা এবং তিনি বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে ছিলেন। আমি তার মুখভাব দেখছিলাম এবং সেভাবে দেখে সম্রাটের মত মনে হচ্ছিল।
বিছানার দুই পাশে এক বৃদ্ধা নার্স এবং একজন পুরুষ ভৃত্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। সিথানের দিকে একটি টেবিলের ওপর একটি মোমবাতি জ্বলছিল এবং আরেকটি মোমবাতি জ্বলছিল দরজার কাছে একটি ক্যাবিনেটের ওপর। অপর একটি টেবিলের ওপর ছিল এক রূপালি ফুলদানি। পুরুষ ও মহিলাটি নীরবে দাঁড়িয়ে এক ধরনের ভীতির মধ্যে মরণাপন্ন ব্যক্তির নিঃশ্বাসের খড়খড়ে শব্দ শুনছেন। বিছানার সিথানের দিকের মোমবাতির আলোতে দেয়ালে এক আধারের ওপর টানানো উজ্জ্বল রঙয়ে আঁকা একজন সহাস্য তরুণের চিত্র উদ্ভাসিত।
বিছানা থেকে একটি অবাঞ্ছিত গন্ধ ভেসে এলো। আমি চাদর তুলে বালজাকের হাত আমার হাতে তুলে নিলাম। ঘামে হাত ভিজে গেছে। আমি হাতে চাপ দিলাম, কিন্তু তার পক্ষ থেকে কোনো চাপ অনুভব করলাম না। নার্স আমাকে বললেন, ‘তিনি সকালেই মারা যাবেন।’ আমি সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলাম, আমার ভাবনায় নিয়ে এলাম সেই ক্রুদ্ধ মুখ, করিডোর অতিক্রম করার সময় আবারও মুখোমুখি হলাম নিথর আবক্ষ মূর্তির (ডেভিড অফ অ্যাঙ্গার্স এর থেরি বালজাকের মূর্তি), দুর্বোধ্য, গর্বিত এবং অস্পষ্টভাবে উজ্জ্বল। আমি মৃত্যু ও অবিনশ্বরতার মধ্যে একটি তুলনা করার চেষ্টা করলাম।
সেদিন যেহেতু রবিবার ছিল, আমি আমার বাড়িতে পৌঁছে দেখতে পেলাম, বেশ ক’জন দর্শনার্থী আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন তুরস্কের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স রেজা বে, স্প্যানিশ কবি নাভারেতে এবং একজন নির্বাসিত ইতালিয়ান কাউন্ট অ্যারিভাবেঁ। আমি তাদের বললাম, ‘ভদ্র মহোদয়গণ, ইউরোপ এক মহান হৃদয়কে হারাতে যাচ্ছে। তিনি একান্ন বছর বয়সে রাতের বেলায় মারা যান।’
বুধবার তাঁর অন্তেষ্টিাক্রিয়া সম্পন্ন হয়। বালজাকের অন্তেষ্টি অনুষ্ঠানে ভিক্টর হুগো একটি দীর্ঘ শোকবাণীও পাঠ করেছিলেন, যার অংশবিশেষ উপস্থাপন করছি-
বালজাক উনবিংশ শতাব্দীর শক্তিশালী লেখক প্রজন্মের একজন ছিলেন, যার আগমণ ঘটেছিল নেপোলিয়নের পর; তিনি সপ্তদশ শতাব্দীর আলোকিত প্লেইডের মত রিচেলুঁর পর আসেন- যেন সভ্যতার বিকাশে তার আগমণ ছিল তরবারি দ্বারা বিজয়ীদের ক্ষেত্রে বুদ্ধিবৃত্তিক উত্তরাধিকারীর মত। বালজাক সেরাদের মধ্যে প্রথম এবং সর্বোত্তমদের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিলেন। তার সকল গ্রন্থের সমষ্টি একটি গ্রন্থ- একটি জীবন্ত, উজ্জ্বল, গভীর গ্রন্থ, যেখানে কেউ যাচ্ছে ও আসছে, সারাক্ষণ গতিশীল, আমাদের সমসাময়িক সভ্যতার প্রকৃত রূপ, অপূর্ব একটি গ্রন্থ, কবি যার নাম দিয়েছেন “একটি কমেডি” এবং সেটিকে তিনি বলেছেন ‘ইতিহাস।” এই গ্রন্থে পর্যবেক্ষণ ও কল্পনা রয়েছে। বালজাক সরাসরি লক্ষ্যে উপনীত হয়েছেন। তাঁর মৃত্যুতে প্যারিস স্তব্ধ। মাত্র কয়েক মাস আগে তিনি ফ্রান্সে ফিরে এসেছেন। তিনি অনুভব করছিলেন যে তিনি মারা যাচ্ছেন। তিনি পুনরায় তার দেশকে দেখতে চেয়েছিলেন, যেভাবে দূরের সমুদ্রযাত্রার প্রাক্কালে কেউ তার মাকে জড়িয়ে ধরে, সেভাবে তিনি তার দেশকে আলিঙ্গন করতে চেয়েছিলেন। তার জীবন সংক্ষিপ্ত ছিল, কিন্তু তা পরিপূর্ণ ছিল, যতদিন জীবিত ছিলেন তার চেয়েও বেশি পরিপূর্ণতায় ভরা ছিল তার জীবন। হায়! এই শক্তিশালী কর্মী কখনও ক্লান্ত হননি, এই দার্শনিক, চিন্তাবিদ, কবি ও প্রতিভাবান ব্যক্তি আমাদের মাঝে ছিলেন, জীবন কাটিয়েছেন ঝড় ও বাধার মধ্যে, কলহ ও সংঘাতের মধ্যে, যা সকল যুগের মহান ব্যক্তিদের জীবনের অভিন্ন ঘটনা। আজ তিনি শান্তিতে রয়েছেন। তিনি কোনো দ্বন্দ্ব ও ঘৃণার উর্ধে। একই দিনে তিনি ঐশ্বর্য ও এই সৌধে প্রবেশ করবেন। এরপর আমাদের মাথার ওপর মেঘমালা ছাড়িয়ে তিনি তার দেশের তারকাদের মধ্যে জ্বলজ্বল করবেন। আপনারা যারা এখানে উপস্থিত, তারা কি তাকে ইর্ষার করার জন্য প্রলুব্ধ নন?
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ আল সিফাত