বাংলাদেশে নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সব পক্ষকে আলোচনায় বসার তাগিদ দিতে এবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব তোলা হয়েছে। চার্লস ট্যানক, পাওয়েল রবার্ট কোয়ালের তোলা এই প্রস্তাবের ওপর আজ বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রস্তাবে বলা হয়, গত বছরের শুরু থেকে সহিংসতা ও প্রাণহানির অধিকাংশ ঘটনাই ঘটেছে বিরোধী দল ও 'জঙ্গিদের' কারণে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ কর্মীরাও বিরোধী দলের সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক সূত্র ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠানোর প্রস্তাব এবং পরে তা প্রত্যাহার করার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে এতে।
প্রস্তাবকারীরা বলেন, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরিতে ইইউর পক্ষ থেকে সব দলের প্রতি বারবার আহ্বান জানানো হলেও তা না হওয়ায় বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে, যাতে অর্ধেকের বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা নির্বাচিত হন।
প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানবাধিকার পরিস্থিতির পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও এবং পোশাক খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশটির সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতা বাড়লেও সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ও এর জনগণ একটি বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
এছাড়া গত ৫ জানুয়ারির ভোটে কম সংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি ও অর্ধেকের বেশি আসন প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন থাকার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সাতটি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এগুলো হলো-
১. নির্বাচন কেন্দ্র করে সহিংসতা, বিশেষ করে নারী-শিশু, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করতে হবে।
২. সংঘাত-সহিংসতা বন্ধ করে সংকট উত্তরণের পথ বের করতে বাংলাদেশে সব পক্ষকে কার্যকর আলোচনায় বসার আহ্বান জানানো।
৩. সব পক্ষকে এমন একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর আহ্বান জানাতে হবে, যাতে গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা নিশ্চিতের পথ তৈরি হয়; স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হয় এবং বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থকেই সবার আগে স্থান দেয়া যায়।
৪. ক্ষমতার বাইরে থাকা দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেপ্তার ও কারাবন্দি রাখার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করতে হবে এবং গুরুতর সহিংসতার ঘটনায় বিরোধী দলের (গত সংসদের) জড়িত থাকার কঠোর নিন্দা জানাতে হবে।
৫. গণগ্রেপ্তার বন্ধে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাতে হবে, যাতে সবাই শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন, জমায়েত হওয়া বা মত প্রকাশের অধিকার ভোগ করতে পারে।
৬. ঝুঁকিতে থাকা জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দুদের নিরাপত্তা বাড়াতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানাতে হবে।
৭. বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাতে হবে, যাতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাক্ষীদের সুরক্ষা দিতে একটি কার্যকর ব্যবস্থা তারা নেয়।