আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস উপলক্ষ্যে জার্মানির গোটিঙ্গেনে বাঙালি অধিবাসী ও শিক্ষার্থীরা গোটিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলরুমে আয়োজন করেছিল 'লিঙ্গুইস্টিক ও কালচারাল ডাইভার্সিটি' শিরোনামের এক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. রুথ ফ্লোরাক ও গোটিঙ্গেন ইন্টারন্যাশনাল বিভাগের পরিচালক ড. উভে মুস। ড. রুথ ফ্লোরাক তার বক্তৃতায় আয়োজকদের ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, আমি খুবই আনন্দিত এখানে আসতে পেরে। বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা এখানে তাদের নিজ নিজ সংস্কৃতিকে তুলে ধরবে, একে অপরের সম্পর্কে জানতে পারবে। নিঃসন্দেহে এমন অনুষ্ঠান আগ্রহোদ্দীপক ও প্রয়োজনীয়।
ড. মুস সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় বলেন, বাঙালি জাতি ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে এই তথ্য আমি জানার পর সত্যিই অবাক হয়েছি। আমি খুবই গর্বিত যে এমন একটি মাল্টিকালচারাল প্রোগ্রামে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
অনুষ্ঠানে 'লিঙ্গুইস্টিক ডাইভার্সিটি ও মাল্টিলিঙ্গুয়াল এনভাইরনমেন্ট ইন ইউরোপ' বিষয়ে বক্তব্য রাখেন প্রফেসর ড. আইনেস ফরনেল। পুরো ইউরোপ জুড়ে বিভিন্ন ভাষার বর্তমান পরিস্থিতি এবং জার্মানিতে জার্মান ও অন্যান্য ভাষার চরিত্র ও পারিপার্শ্বিক প্রভাব নিয়ে তিনি বিস্তারিত আলোচনা করেন।
দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অসংখ্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের ভাষার স্বীকৃতি ও তাদের ভাষার ওপর রাষ্ট্রীয় নানা অবিচার ও অবহেলা নিয়ে তথ্যমূলক বর্ণনা উপস্থাপন করেন বুরডভান ভার্সিটির প্রফেসর ড. অরুণ কে ঘোষ। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলংকার সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও নৃতাত্ত্বিক আদিবাসীদের ভাষার বর্তমান পরিস্থিতি এবং এদের বিলুপ্তপ্রায় ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে বিস্তর তথ্যমূলক আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ভাষার পাশাপাশি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীরাও তাদের ভাষার সমান মর্যাদা নিয়ে রাষ্ট্রে বসবাসের অধিকার অর্জন করুক, তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষাগ্রহণের অধিকার স্বীকৃত এবং তা যথার্থরূপে বাস্তবায়িত হোক, মাতৃভাষার রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক মর্যাদার দাবিতে আত্মত্যাগকারী সত্যিকারের মুক্তিকামী মানুষের স্বপ্ন বাস্তবে রূপলাভ করুক- একুশে ফেব্রুয়ারির এই ক্ষণে এটাই কামনা। বাংলাদেশের মণিপুরী, মারমা, বিহারী, চাকমা, সাঁওতাল, খাসিয়া, মুরং, তঙচঙ্গাসহ সকল অবাঙালি জাতিসত্তার জনগোষ্ঠীর ভাষার দুরাবস্থার কথাও তার বক্তব্যে উঠে এসেছে।
অতিথিদের মধ্যে সর্বশেষ বক্তব্য রাখেন ড. স্যাম এসিয়ামা। তিনি ঘানাসহ আফ্রিকার ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষার উন্নয়ন ও শিশুদের উপর মাতৃভাষার প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানে বাঙালি কমিউনিটির পক্ষ থেকে ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ও ইতিহাস তুলে ধরেন অনুষ্ঠানের মূল আয়োজক ও উপস্থাপক গোটিঙ্গেনবাসী গবেষক ড. আজিজুর রহমান। তিনি বাংলা ভাষা রক্ষার্থে ছাত্র জনতার আন্দোলনের ইতিবৃত্ত তুলে ধরেন।
বক্তৃতা পর্ব শেষে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় যেখানে বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা তাদের স্বদেশী ঢংয়ে পারফর্ম্যান্স করে। বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ভাষা ও সংস্কৃতি উপস্থাপন করেন যাতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ একে অপরের ভাষা সংস্কৃতি আর কৃষ্টি সম্পর্কে জানতে পারে। এতে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাসহ ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও শ্রীলংকার ছাত্রছাত্রীরা অংশ নেয়।