ইতালিতে বাংলাদেশি সবজি চাষে বিল্পব সৃষ্টি হয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা বেকারত্ব দূর করতে ও নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে আদি পেশাকে বেছে নিয়েছে। বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দা ইতালিতে ও প্রভাব পড়ায় প্রবাসীরা কর্মসংস্থান হারিয়ে নিজেদের উদ্যোগে সেখানে কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমে উল্টো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। এতে বয়ে এনেছে বাংলাদেশের সুনাম। সম্প্রতি ইতালিয়ানরাও ঝুঁকে পড়েছে সবজির দিকে।
শিল্পপ্রধান দেশ হিসেবে ইতালি খ্যাত হলেও কৃষির প্রতি রয়েছে তাদের ব্যাপক আগ্রহ। মৌসুমের শুরুতে বৈরি আবহাওয়া থাকলেও এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে ইতালিস্থ বাংলাদেশি মালিকানাধীন কৃষি প্রকল্পগুলোতে। ইতালির রাজধানী রোম থেকে ৮০ কি.মি. দূরে সাগরঘেঁষা নগরী তেরেসিনা এলাকায় বাংলাদেশিরা ৩০-৩২ প্রকারের দেশীয় শাক সবজি উৎপাদন করেন। তাদের উৎপাদিত ফসল ইতালি ছাড়াও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়।
যেভাবে শুরু: দেলোয়ার হোসেন নোয়াখালী জেলার ইতালি প্রবাসী। ২০০৭ সালের দিকে প্রথম রোমের তেরেসিনা নামক এলাকায় অল্প জমিতে নিজের উদ্যোগে পরীক্ষামূলক সবজি চাষ শুরু করেন। সবজির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায়। তখন থেকেই ইতালিতে কৃষি চাষের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিনি। এরপর বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন সবজির বীজ দিয়ে ২০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ শুরু করেন। প্রবাসী সাদিক মিয়াও তার সঙ্গে যোগ দেন। ২০০৯ সাল থেকে তারা ৮০/৯০ হেক্টর জমিতে বাংলাদেশি সবজি উৎপাদন করেন। এরপর প্রতি বছরই তারা জমির পরিমাণ বৃদ্ধি করছেন। এতো শুধু দু'জনের সাফল্যের কথা। এরকম প্রায় অর্ধ শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মো. বিল্পব (বরিশাল), শহিদুল ইসলাম (নোয়াখালী), আব্দুর রহমান (শরিয়তপুর) ও মাসুদুর রহমান (কুমিল্লা)।
কৃষি পদ্ধতি: ইতালির জমির উর্বর হওয়ায় বাংলাদেশের সবজির ব্যাপক ফলন হচ্ছে। তাছাড়া আবহাওয়াও বাংলাদেশ সবজি চাষের অনুকুলে ইতালিতে অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত শীতকাল। বাংলাদেশি প্রবাসী কৃষকরা এই সময় শীতকালীন সবজি চাষ করে থাকেন। এ সময় তারা ইতালিয়ানদের কাছ থেকে বাৎসরিক হিসাবে জমি লিজ নিয়ে থাকেন। প্রতি হেক্টর জমি ৬৮ ইউরো। যা বাংলাদেশি টাকায় ৬ হাজার টাকা। জমি লিজ নেয়ার পর ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করা হয়। এতে সারের ব্যবহার করা হয় না। প্রতিটি প্রকল্পে ২০ থেকে ৩০ জন শ্রমিক কাজ করেন।
যেসব সবজি চাষ হয়: ইতালিতে শীতকালীন সবজি চাষ করা হয়। এর মধ্যে শালগম, বাধাকপি, ফুলকপি বিভিন্ন প্রকার শাক, লাউ ইত্যাদি বাম্পার ফলন হয়েছে।
যেসব এলাকায় চাষ হয়: তেরেসিনা, ব্যুলজায়নো, বিতাব্রো এসব এলাকার মোট প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে কৃষি চাষ হচ্ছে।
বাজারজাত পদ্ধতি: নিজেদের গাড়িতেই বাংলাদেশ অধ্যূষিত এলাকার বাজারগুলোতে নেয়া হয়। বাংলদেশি প্রবাসীদের উৎপাদিত এসব সবজি ইতালিয়নরাও খেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। তারাও বাজারে এসে এসব সবজি কিনছেন। যদিও ইউরোপের প্রতিটি দেশে বাংলাদেশ থেকে সবজি রপ্তানি করা হয়।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অথনৈতিক সাফল্য: অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে ইতালিতে অনেক বাংলাদেশি বেকার হয়ে পড়লে নিজেদের উদ্যোগে কৃষিকাজের উদ্যোগ নেয়। প্রত্যেকেই এতে সাফল্য পায়। বর্তমানে সাড়ে তিন হাজার বাংলাদেশি এই কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। যারা অন্য কোন কাজ করছে না। বর্তমানে অর্থনৈতিক মুক্তি পেয়েছে।
এ বিষয়ে দেলোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশি সবজির ফলন ভালো হওয়ায় চাষে আগ্রহ বাড়ছে এখানে কম খরচে চাষ করা যায়। ইতালিতে প্রায় আড়াই লাখ বাংলাদেশি রয়েছে। তারা দেশের টাটকা সবজি খেতে পারেন না। তাদের কথা মাথায় রেখেও সবজি চাষে উদ্যোগী হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, ইতালি সরকারের সহযোগিতা রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয়রা সবজি চাষে সহযোগিতা করছে।
এব্যাপারে এক ব্যবসায়ী ইদ্রিশ ফরাজী বলেন, এরকম তরতাজা সবজি চাষ করে বাজারজাত করলে আমরা মেয়াদোত্তীর্ণ প্যাকেটজাত সবজি খাওয়া থেকে রক্ষা পাবো।