বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং গুম, খুন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইউরোপিয়ান (ই্ইউ)পার্লামেন্ট মেম্বার জ্যান ল্যাম্বার্ট। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে যা চলছে এতে দেশটিতে গণতন্ত্র বিরাজমান বলা যায় না। মানবাধিকার ও কথা বলার স্বাধীনতা না থাকলে গণতন্ত্র থাকে না। বাংলাদেশে বর্তমানে মানবাধিকরের অবস্থা খুবই নাজুক উল্লেখ করে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের ওই সদস্য আরো বলেন, দেশটিতে মানুষের কথা বলার স্বাধীনতাও সঙ্কুচিত।
বৃহস্পতিবার লন্ডনের একটি রেস্টুরেন্টে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ কাউন্সিল-এর উদ্যোগে আয়োজিত এক ডিনারে তিনি একথা বলেন। জ্যান ল্যাম্বার্ট তাঁর আসন থেকে দ্বিতীয়বারের মত ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ কাউন্সিল এই ডিনারের আয়োজন করে। ৫ জানুয়ারী নির্বাচনের আগে জ্যান ল্যাম্বার্টের বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে বিভিন্ন বিষয়ে তিনি খোলামেলা আলোচনা করেন। তিনি ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে এশিয়া বিষয়ক কমিটির সদস্য।
জ্যান ল্যাম্বার্ট বলেন, গণতন্ত্রের পূর্ব শর্তই হচ্ছে মানবাধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত থাকতে হবে। মানুষের কথা বলার অধিকার, আইনের শাসন গণতন্ত্রের জন্য অবাশ্যক। কিন্তু বাংলাদেশে এর কোনটাই নেই। র্যাব মানুষ খুন করছে, সরকার বিরোধী দলকে রাজপথে কর্মসূচি পালন করতে দেয় না, সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলায় গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া এসব গণতন্ত্রে চলে না। কিন্তু বাংলাদেশে এই সবই চলতে দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, এই দেশটিতে রাজনৈতিক দল গুলোর পরস্পরের উপর আস্থা নেই। এরকম আস্থাহীন অবস্থায় নিরপেক্ষ নির্বাচন ছাড়া গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তাঁর সম্মানে ডিনারের আয়োজন করায় বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ কাউন্সিলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ খুবই অতিথি পরায়ন। তারা মানুষকে ভালবাসতে জানে। তবে নিজের দেশে রাজনৈতিক দল গুলো পরস্পরে হানাহানিতে লিপ্ত রয়েছে।
ন্যশনালিস্ট রিসার্চ কাউন্সিলের সভাপতি প্রফেসর এম ফরিদ উদ্দিনের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার তমিজ উদ্দিন। এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, সিটিজেন মুভমেন্টের আহ্বায়ক এম এ মালেক, শিক্ষাবিদ ড. সৈয়দ মামনুন মোর্শেদ, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেস্টা হুমায়ূন কবীর, ইন্টারন্যাশনাল ল’ইয়ার্স ভয়েস কাউন্সিলের সভাপতি ব্যারিস্টার এম এ সালাম, যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সহ-সভাপতি আবুল কালাম আযাদ, পারভেজ মল্লিক, লন্ডনে সফররত ছাত্র দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিম, সাবেক ছাত্র নেতা আতিকুর রহমান চৌধুরী পাপ্পু, যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা কামাল উদ্দিন, খসরুজ্জামান খসরু, যুক্তরাজ্য বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার হামিদুল হক আফিন্দি লিটন, ব্যারিস্টার আলিমুল হক লিটন, যুক্তরাজ্য স্বেচ্ছা সেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাসির আহমদ শাহিন, যুবদল নেতা রহিম উদ্দিন, সেলিম আহমদ, রাজা মিয়া প্রমূখ।
ডিনারের খোলামেলা আলোচনায় বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক, পরিস্থিতি, রাষ্ট্র কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার উপস্হিত নির্যাতিত সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমানের প্রতি সমবদেনা প্রকাশ সহ গণমাধ্যমের প্রতি সরকারের আচরণ, সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে নির্যাতন, নিপীড়ন, ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠন গুলোর সন্ত্রাস, চাদাবাজি, ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। এসময় জ্যান ল্যাম্বার্ট জানান, তিনি এই বিষয় গুলো ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে তুলে ধরার চেস্টা করবেন।