লিবিয়ার বেনগাজি শহরে একটি পানি বিশুদ্ধকরণ কারখানার আবাসিক ক্যাম্পে শনিবার রাতে মিসাইল হামলায় দুই বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কারখানা কর্তৃপক্ষ সেখানকার ৩২ জন বাংলাদেশিকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে। নিহতরা হলেন, শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার মোহাম্মদ মিলন ও মোহাম্মদ স্বপন। তারা দু'জন ভাই।
এ ঘটনায় আরও দুজন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ইব্রাহিম নামের একজনকে চিকিত্সা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অন্য একজন কামালের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এর আগে ফেব্রুয়ারি ও মার্চে বেনগাজিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন বাংলাদেশি মারা যান। আহত হন কয়েকজন। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে লিবিয়ায় অবস্থানরত সব বাংলাদেশিকে গত মার্চ থেকেই সতর্কভাবে চলাফেরার পরামর্শ দিয়েছে সেখানকার বাংলাদেশি দূতাবাস। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও বেনগাজিতে অবস্থানরত ২৫ হাজার বাংলাদেশিকে সাবধানে থাকতে বলেছেন।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, ২১ জুন শনিবার রাতে লিবিয়ার স্থানীয় সময় রাত সোয়া ১০টায় বেনগাজি শহরের সামা লিবিয়া নামের একটি পানি বিশুদ্ধকরণ কারখানার আবাসিক ক্যাম্পে ওই মিসাইল হামলার ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকি জানান, ঘটনার পর দূতাবাসের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, শনিবার কাজ শেষে তারা কোম্পানির আবাসিক ক্যাম্পে ছিলেন। হঠাৎ বিকট শব্দে একটি মিসাইল ক্যাম্পের পেছনের দেয়ালে আঘাত করে। সে সময় ওই কক্ষে চারজন বাংলাদেশি ছিলেন। রক্তাক্ত অবস্থায় তাদের হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিত্সকরা দু'জনকে মৃত ঘোষণা করেন। তাদের মরদেহ বেনগাজি মেডিকেল সেন্টারের হিমঘরে রাখা হয়েছে। ঘটনার পর কোম্পানির পক্ষ থেকে বাকিদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দূতাবাসের পক্ষ থেকে সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার লিবিয়া। ২০১১ সালে দেশটিতে যুদ্ধাবস্থা শুরুর পর ৩৬ হাজার বাংলাদেশি ফিরে আসেন। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে গত দুই বছরে ২১ হাজার বাংলাদেশি নতুন করে সেখানে গেছেন। বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে সেখানে প্রায় ৪৫ হাজার বাংলাদেশি আছেন। এর মধ্যে একটা বড় অংশই আছেন রাজধানী ত্রিপোলি থেকে এক হাজার কিলোমিটার দূরের শহর বেনগাজিতে। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে সেখানে ইসলামপন্থী ও ন্যাশনাল আর্মি নামের দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। উভয় পক্ষই ভারী আগ্নেয়াস্ত্র, স্বল্প পাল্লার মিসাইল নিয়ে যুদ্ধ করছে। প্রায়ই এসব গুলি ও মিসাইল লক্ষ্যচ্যুত হয়ে সাধারণ মানুষের প্রাণহানি ঘটছে।