প্রথম পরিচয় নিউইয়র্কে। কিন্ত দেখা হয়নি আমাদের। মেট্রো রেল ধরে গিয়েছিলাম তার একেবারে তলা দিয়ে। হাডসনের কথা বলছি। আমেরিকার অন্যতম বিখ্যাত একটি নদী। নদীর তলা দিয়ে ট্রেনে চড়ে যাচ্ছি ম্যানহাটন। প্রথমে সত্যিই অবাক হয়েছিলাম। গা শিউরে ওঠার মত একটা অনুভূতি ছিল তখন। এরপর আরো কতো কতো বার যে বার গিয়েছি, তাতে অবশ্য প্রথমবারের মত আর হয়নি।
একদিন অনেকটা শখের বশেই যাত্রাপথে নেমে পড়েছিলাম রুজভেল্ট অ্যাভিনিউয়ে।।পথ চিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত 'সাপ্তাহিক রানার' পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু তুহীন সানজীদ। রেলস্টেশনের প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ডানে যাবো না, বায়ে। তুহীন ভাই বললেন, চলন্ত সিঁড়ি (এসকেলটর) দিয়ে উপরে চলেন। যতটুকু উঠলাম বোধ করি এক সিঁড়িতেই ১০ তলা উপরে উঠলাম। বের হতেই ঝিরঝিরে বাতাস আমাকে মোহিত করে ফেলল।
রুজভেল্ট আইল্যান্ডে উঠে এবার দেখা পেলাম হাডসনের। শৈশবে পড়া কবিতার একটি লাইন মনে পড়ে গেল, " দুই ধার উঁচু তার ঢালু তার পাড়ি"। পৃথিবীর ব্যাস্ততম শহর নিউয়র্কের ম্যানহাটন গড়ে উঠেছে এর ধার ঘেঁষে। অসংখ্য অফিস আদালত আর ঠাসা মানুষে এলাকা এটি। কিন্ত হাডসনের কোথাও এতটুকু ময়লা আবর্জনা নেই। কুল কুল করে বয়ে চলেছে অবিরত। পড়ন্ত বিকেলের আলোয় নদীর ধার ঘেঁষে পেতে রাখা বেঞ্চে বসে অন্যরকম আমেরিকার অভিজ্ঞতা হল। ছোট ছোট ছেলে-পুলে নিয়ে অনেকেই এসেছেন সামারের শেষ সময়টুকু উপভোগ করতে। অত্যাধুনিক ক্যামেরা হাতে একটি শ্যুটিং ইউনিটের দেখা মিলল। ওপারের জাতিসংঘ ভবন একটা আভিজাত্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যদিও এর নির্মাণ শৈলী আমাকে কখনো ততোটা আকৃষ্ট করেনি, যতটা করেছে পুরো ম্যানহাটন জুড়ে অসংখ্য পুরোনো ভবনগুলো। নিচে দাঁড়িয়ে ভবনগুলির কোনটির সর্বোচ্চ চূড়াটি দেখতে কিছুটা মাথা ঘোরার অবস্থা হয়। যাই হোক, ম্যানহাটনের কথা এখন থাক, ফিরে যাই হাডসনে।
রুজভেল্ট আইল্যান্ড থেকে ম্যানহাটনের পাড় পর্যন্ত রয়েছে অত্যাধুনিক ক্যাবল কার। শখ করেই উঠে পড়লাম। ক্যাবল কারের প্রথম চাক্ষুস দেখা মিলেছিল সিঙ্গাপুরের সানতোসায়। তবে চড়ে দেখার অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম। সুপরিসর কেবিনে অন্য সব ভিনদেশী আর আমেরিকানদের সাথে শুরু হলো একটু একটু করে উপরে ওঠা।
হায়! হাতে ক্যামেরা নেই। এমন সুন্দর বার্ডস আই ভিউ (পাখির মত করে দেখা) হাডসনকে অন্য রকম করে দেখা পেলাম। হলিউডের সিনেমায় ব্রুকলিন ব্রিজ দেখেছি অনেকবার অনেকভাবে। ক্যাবল কার এবার তার পাশ দিয়েই চলা শুরু করেছে। আমার হাতে থাকা বাংলাদেশ থেকে অানা ছোট্ট ফোনের ক্যামেরাটা দিয়ে তুলে ফেললাম কয়েকটা ছবি। পরে দেখলাম মন খারাপের কোন কারণ নেই। আমার এই মুঠোফোনের ছবিই ভাল লাগছে। একবার ওপারে গিয়ে ফিরে এলাম রুজভেল্ট আইল্যান্ডে। তুহীন ভাইসহ কফি শপ থেকে দুটো কাপোচিনো নিয়ে প্লাটফর্মে নামার জন্য আবার এসকেলেটর ধরে নামতে থাকলাম হডসনের তলায়।