ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটির একদল উদ্যমী তরুণ ও যুবকদের নিয়ে দিনব্যাপী এক মিলনমেলা ও বনভোজন অনুষ্ঠিত হয় গত সোমবার। এর আয়োজক মাসুম ভাই আমাকে তাদের সাথে বন্ধু মেলা ও বনভোজনে যেতে আমন্ত্রণ জানালেন, এক কথায়ই রাজি হয়ে গেলাম। সামার সিজনাল হলিডেতে ভ্রমণ পিপাসু মনকে খানিকটা খোরাক যোগান দেয়ার পাশাপাশি প্যারিসে বাংলাদেশি অনেক কমিউনিটির সঙ্গে দেখা এবং পরিচয় ও হয়ে গেলো! মূলতঃ সুপারমুন উপলক্ষে সুস্থ বিনোদনের লক্ষেই এর আয়োজন করেন মাসুম চৌধুরী।
১০ আগস্ট রাতের আকাশে যে চাঁদ হেসেছে তার আকার ছিলো স্বাভাবিকের চেয়ে বড়। আর দূরের চাঁদটি নেমে এসেছিল পৃথিবীর অনেকটা কাছে। তাই প্যারিসে থেকেই বহু লোক এই সুপারমুন দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। এই স্মৃতি লালন করে রাখতে, "প্রবাসে বাঙালিরাই বাঙালিদের ভাই, সব বাঙালি মিলে একটি বড় পরিবার। সেই পরিবারের নাম বাংলাদেশ"- এই শ্লোগান নিয়ে দল-মত নির্বিশেষে পূর্বনির্ধারিত সময়ে একে একে সবাই জড়ো হতে থাকেন ক্লিসি সোভা মেরির পার্শ্ববর্তী মাঠে। এখানেই রাহুল আমিন নিজ হাতে ঘরুয়া রান্না করা রকমারি বাংলাদেশি খাবার একটি ঠেলাগাড়িতে করে নিয়ে আসেন। তখন ঘড়ির কাঁটায় স্থানীয় সময় বেলা ২টা। প্রবাসের হাজারো ব্যস্ততা-ঝামেলার মাঝেও অনেকদিন পর একে অপরের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ হওয়ায় উপস্থিত সবাই আনন্দিত। এখান থেকেই খাবার সামগ্রী হাতে নিয়ে পায়ে হেঁটে প্রায় দুই কিলোমিটার যাত্রা শুরু করেন ক্লিসি সোভা ন্যাচারাল পার্কে।
প্রায় ৩০ মিনিট পর গন্তব্যে পৌঁছে সবাই চোখভরে দেখে নেন অপরূপ সৌন্দর্য। আনন্দে উদ্বেলিত হন। উল্লাস প্রকাশ করেন। বিশাল বড় প্রাকৃতিক মনোরম ও সৌন্দর্যে ভরপুর এই পার্কে রয়েছে সবুজ গাছ গাছালি, প্রাকৃতিক লেক। লেকের স্বচ্ছ পানিতে রয়েছে নানা প্রজাতির মাছ, ডাহুক, পাতিহাঁস, রাজহাঁস ও ভাসমান নানান প্রজাতির ফুল। এরপর শুরু হয় বনভোজন। একেকটি থালায় খাবারগুলো সুষমভাবে বন্টন করা হয়। আশপাশে সুপ্রশস্ত পায়েহাঁটা পথ, পর্যাপ্ত লাইটিং ব্যবস্থা আছে। বিশাল বড় এই পার্কের যেদিকে যাবেন, দুই চোখ যেন খুঁজে পাবে সবুজের রূপ। যেন এপার থেকে ওপার দেখা যায় না। এছাড়া নানান ফুল ও ফলের মৌ মৌ গন্ধ ,পাখির কলরব, নৈসর্গিক দৃশ্য অবলোকন করে মন প্রফুল্ল হয়ে উঠলো সকলের। সেই সঙ্গে মনে পড়ল লাল-সবুজের প্রিয় জন্মভূমির কথা। আসলে প্রিয় দেশটি থেকে প্রায় সাড়ে আট হাজার কিলোমিটার দূরে ইউরোপের মাটিতে জীবনের প্রয়োজনে বসবাস করলেও মন কাঁদে সর্বদা বাংলার মা, মাটি ও মানুষদের জন্যই। তাইতো সমবেত কণ্ঠে দাঁড়িয়ে সকলেই যৌথ কণ্ঠে গেয়ে ওঠেন,
'আমার সোনার বাংলা
আমি তোমায় ভালবাসি...।'
নূর ইসলাম, ফারুক খান, ডালিম ও শামীম আহমদ বেগ কোল্ড ড্রিংক এবং খাবার পানি বিতরণ করেন। খাবার সুস্বাদু হওয়ায় অনেকেই দক্ষ বাবুর্চি রাহুল আমিনের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। খাবারের মধ্যে ছিল দেশি স্বাদের গরুর মাংস, পোলাও, মুরগির রোস্ট, স্পেনের অলিভ, ভেরাইটিজ সালাদ, ফ্রান্সের বিখ্যাত বাগেট, মিনারেল ওয়াটার, চকলেট ইত্যাদি। মজার ব্যাপার হলো সবাই আনন্দে এতোটাই আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলেন যে, প্রবাসীদের এই মিলন মেলা ও বনভোজনের আনন্দ ক্যামেরাবন্দি করার কথা ভুলে গেলেন। মনে পড়তেই ঝটপট ক্লিক, ক্লিক আর ভিডিও করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন কেউ কেউ।
এরই ফাঁকে ফাঁকে গান হলো। 'আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম...', 'একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়...', 'গ্রাম ছাড়া ওই রাঙ্গামাটির পথ ...' ইত্যাদি গানের সঙ্গে তুমুল করতালি হলো।
এক পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয় উপস্থিত অংশগ্রহণকারীদের উপলব্ধি ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বক্তব্য দেয়ার পালা। প্রথমে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক মাসুম চৌধুরী। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন সাবেক ছাত্রনেতা তারেক আহমেদ তাজ, সাংবাদিক দেলওয়ার হোসেন সেলিম, মুহাম্মদ আলী, মামুন রশীদ, সুমন আল মাহবুব প্রমুখ। এ পর্বটি পরিচালনা করেন ফখরুল ইসলাম ।
যাদের সরব উপস্থিতিতে উক্ত বন্ধু মেলা ও বনভোজন মুখরিত হয়ে ওঠে তারা হলেন : তারেক আহমেদ তাজ, দেলওয়ার হোসেন সেলিম, নজরুল ইসলাম, ফখরুল ইসলাম, রাহুল আমিন, মুজাহীদুল ইসলাম, সায়হাম, নূর ইসলাম, হারুন রশীদ, ফারুক খান, কবির উদ্দিন, বাবুল হোসেন , শাহীন হোসেন ডালিম, শামীম আহমদ বেগ, হাসান মাহমুদ, সাইফুর রহমান, মুহাম্মদ আলী, জনি আহমেদ, এমাদ, পাবেল, শাহীন, রিপন, মোক্তার, রহিম উদ্দিন, খালেদ, মতি মিয়া, সুস্মিতা, লিন্ডা, পারভেজ আদনান, সালিম, রুবেল, রুমেল, মামুন প্রমুখ।