প্রায় ১৮ হাজার বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত ধূসর মরুভূমিতে ঘেরা তৈলসমৃদ্ধ বিশ্বের অন্যতম ধনীদেশ কুয়েত। এখানে দূতাবাসের তথ্যমতে প্রায় দুই লক্ষ বাংলাদেশি অভিবাসী বিভিন্ন স্তরে কর্মরত আছে। বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি মিশনসমূহের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগের যেমন কোন অন্ত নেই। এর বাহিরে কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসও নেই। নানাবিধ অভিযোগের মধ্য দিয়ে সফলভাবে কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস অটোমেশনের কাজ প্রায় সম্পন্ন করার পথে।
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিলের পরে কেউ হাতে লেখা পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ করতে পারবেন না। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পররা্র মন্ত্রণালয় যখন ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে সমগ্র প্রবাসীদের জন্য ডিজিটাল পাসপোর্ট দেয়ার লক্ষে আউটসোর্সিং-এর কথা ভাবছে, সেখানে কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের ডিজিটাল পাসপোর্ট কার্যক্রম প্রায় শেষের দিকে।
এ বিষয়ে দূতাবাসের কনস্যুলার অফিসার প্রথম সচিব মো. আ. জলিলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ২০১৫ সালের আগেই সকল হাতে লেখা পাসপোর্ট এমআরপিতে কনভার্ট করার লক্ষ্যে তারা দিনের পর দিন কঠোর পরিশ্রম করেছেন। তাদের টিম ওয়ার্ক ছিল অনেক ভালো। সময়মত পাসপোর্ট ডেলিভারি দেয়ার জন্য তারা শনিবার ছুটির দিনেও স্ক্যানিং-এর কাজ করেছেন। অটোমেশন সফলভাবে সম্পন্ন করে বাংলাদেশের জন্য এক অনন্য নজির স্থাপন করবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন।
দূতাবাসে দালালের দৌরাত্ম্য তাদের সঙ্গে দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ, ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে দুর্নীতি, প্রবাসীদের সঙ্গে দূতাবাস কর্তৃপক্ষের খারাপ আচরণসহ আরও অসংখ্য অভিযোগের কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, এমন অভিযোগ কিছুটা সত্য হতে পারে। কেননা আমরা আগে টেলিফোন করে আবেদনকারীকে ডেকে এনে ছবি তুলতাম। কেউ হয়তো ফোন ধরেননি। ফলে নির্দিষ্ট দিনে ছবি তুলতে পারেননি। আমি কনস্যুলারের দায়িত্ব নেয়ার কয়েক মাস পরে ছবি তোলার ম্যানুয়াল সিস্টেম বাতিল করি। নিজেদের তাগিদে ডেভেলপ করি নতুন সফটওয়্যার। এ সফটওয়্যারের বিশেষ দিক হচ্ছে টাকা জমা দেয়ার রশিদে সফটওয়্যার নিজেই বিশেষ অ্যালগোরিদম ব্যবহার করে ছবি তোলার তারিখ, সিরিয়াল নাম্বার এবং দূতাবাসে উপস্থিত হবার সময় প্রিন্ট করে দেয়। উপস্থিত হবার সময় ভিন্ন ভিন্ন উল্লেখ্য থাকায় অনেক মানুষ একত্রে দূতাবাসে জড় হন না এবং পূর্বের মত অযথা ভিড় হয় না।
ডিজিটাল পাসপোর্ট করতে গেলে ভোটার আইডি কার্ড অথবা জন্ম-নিবন্ধন প্রয়োজন হয়। দূতাবাস থেকে কোন জাতীয় পরিচয় পত্র দেয়া হয় না, শুধু জন্ম-নিবন্ধন দেয়া হয়। আগে জন্ম-নিবন্ধন দিতে দূতাবাস এক মাসেরও বেশি সময় নিত। এর অন্যতম কারণ ছিল স্থানীয় সরকারের তৈরি করা জন্ম নিবন্ধন ওয়েব সাইটে আমাদের বিভিন্ন ভল্যুমে আবেদনকারীর নাম খুঁজে বের করে জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট প্রিন্ট করা হতো। একটা সার্টিফিকেট প্রিন্ট করতে সময় লাগত ১২-১৫ মিনিট। কাজের এই স্লথ গতির জন্য আমরা একসময় দেখলাম প্রায় ২৫০০ অ্যাপ্লিকেশন জমে গেছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে যায় যে এক মাসেও জন্ম নিবন্ধন দেয়া কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। এ সমস্যা থেকে বের হবার জন্য আমরা নতুন সফটওয়্যারে একটি ফিচার অ্যাড করি যেন টাকা জমা দেবার সময় একই সাথে জন্ম নিবন্ধন প্রিন্ট করা যায়। বর্তমানে যে দিন টাকা জমা দেয়া হয় সেদিনই জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট প্রিন্ট করে দেয়া হচ্ছে।
কনস্যুলারের কাজের স্বচ্ছতা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমগ্র কনস্যুলারের কাজ স্বচ্ছ এবং দূতাবাসের প্রত্যেক কম্পিউটার ব্যবহারকারীর নিকট তা উন্মুক্ত। আমাদের নতুন সফটওয়্যার ওয়েবভিত্তিক হওয়ায় দূতাবাসের যেকোন কর্মকর্তা/কর্মচারি ব্রাউজারের দেখতে পান আজ কতগুলি অ্যাপস্নিকেশন পরেছে এবং কত টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা পড়েছে। দূতাবাসের আর কোন আইটি কার্যক্রম আছে কিনা এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দূতাবাসের নিজস্ব ডিজাইন করা ওয়েবসাইট রয়েছে। দূতাবাসের পক্ষ থেকে একটি ফেসবুক পেজ চালানো হয় যার সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা প্রায় ৩০০০ হাজারের কাছাকাছি। এর মাধ্যমে যে কোন সচেতনতা মূলক পোস্ট ফেসবুকে ৩০০০ বাংলাদেশীর নিকট পেৌঁছে যায়। আমরা নিয়মিতভাবে মান্যবর রাষ্ট্রদূতের নির্দেশনা-মতো ফেসবুক পেজে বিভিন্ন পোস্ট দিয়ে থাকি। এছাড়া সমগ্র মিশন চত্বর সিসিটিভির আওতাধীন। একটি শক্তিশালী ডিভিআর এ দূতাবাসের কর্মকর্তা/কর্মচারী এবং সেবা গ্রহণকারীদের গতিবিধি রেকর্ড হয়ে থাকে। এর ফলে কোন কর্মকর্তা/কর্মচারী সেবা গ্রহনকারীদের সাথে কেমন ব্যবহার করছেন তা ভিডিও আকারে দেখা যায়। এছাড়া দূতাবাসে আসা সেবা গ্রহনকারীদের শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য কাউন্টারগুলিতে ডিজিটাল কিউ সিস্টেম চালু আছে।
প্রথমে এমআরপি দেয়ার দৈনিক ক্যাপাসিটি ছিল ১৩০ জনের। এই সংখ্যা আমরা ২৩০ এ উন্নীত করেছি। বর্তমানে কেবল অনলাইনের আবেদন গ্রহণ করি। এতে কর্মচারিদের কোন ডেটা এন্ট্রির ঝামেলা পোহাতে হয় না। আমরা তাদেরকে এমআরপি সংশ্লিষ্ট অন্য কাজে ব্যবহার করতে পারি। আমরা হঠাৎ করে অনলাইন সিস্টেমে যাইনি। এজন্য ফরম লেখকদের অনলাইনে ফরম তৈরির বিষয়ে ট্রেনিং দেয়া হয়। এই ট্রেনিং প্রোগ্রামে বিভিন্ন কম্পিউটার সেন্টারের ডাটা অপারেটররা এবং অন্যান্য ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেন। কিছুদিন আমরা অনলাইন এবং অফলাইন উভয় প্রকার আবেদন পত্র গ্রহণ করতাম। যখন দেখলাম ফর্ম প্রস্তুতকারীরা সঠিকভাবে অনলাইন ফর্ম পূরণ করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে তখন আমরা অফলাইন ফর্ম নেয়া বন্ধ করে দেই, শুধু মাত্র অনলাইন ফর্ম চালু করি এবং আমাদের দৈনিক ক্যাপাসিটি ১৩০ থেকে ২৩০ এ উন্নীত করি। এছাড়া আমরা নিয়মিত প্রচারণা চালাই যারা বাংলাদেশে বেড়াতে যাবেন তারা যেন দেশ থেকে এমআরপি করে নিয়ে আসেন।