আগামী বছরের ডিসেম্বরে বর্তমান মহাসচিব বান কি মুনের দ্বিতীয় দফার মেয়াদ শেষ হবে। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারিতে নতুন মহাসচিবকে দায়িত্ব নিতে হবে। এ জন্যে এখন থেকেই আলোচনা-পর্যালোচনা শুরু হয়েছে জাতিসংঘ সদর দফতরে। ‘কূটনীতিকদের প্রায় সকলেই নবম মহাসচিব হিসেবে একজন নারীকে দেখতে চান’ এবং ‘এখন সময় হচ্ছে জাতিসংঘ মহাসচিব হিসেবে একজন নারীকে অধিষ্ঠিত করার’-এমন মতামত শীর্ষস্থানীয় মার্কিন মিডিয়াতে ব্যক্ত করা হচ্ছে।
গতকাল শনিবার (২২ আগস্ট) নিউইয়র্ক টাইমসে এ নিয়ে বিশেষ একটি প্রতিবেদন ছাড়াও সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ নারী হওয়া সত্ত্বেও জাতিসংঘে এখন পর্যন্ত কোনো নারী মহাসচিব হননি কেন তা নিয়েও বিষদ মতামত প্রকাশিত হচ্ছে বিভিন্ন মিডিয়া এবং টিভি টক শোতে। সকলেরই প্রত্যাশা নারী ক্ষমতায়নের শ্লোগানের পরিপূরক জাতিসংঘের পরবর্তী মহাসচিব যেন একজন নারীকেই করা হয়।
মহাসচিব পদে নারী নির্বাচিত করার জন্যে কলম্বিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মারিয়া ইমা মেজিয়ার নেতৃত্বে ৪৪ দেশের জোটে বাংলাদেশও সরব। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. এ কে এ মোমেন শনিবার রাতে এনআরবি নিউজকে বলেন, ‘নারী ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা রয়েছে জাতিসংঘে। সে আলোকে কলম্বিয়ার রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে আমরাও সোচ্চার রয়েছি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মহাসচিব নির্বাচনের জন্যে। ইতোমধ্যেই বিশ্ব বরেণ্য কয়েকজন নারীর নামও প্রকাশিত হয়েছে মহাসচিব হিসেবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং নারী উন্নয়নে অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালনকারী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নামও সে তালিকায় আসতে পারে। এটিও সময়ের দাবি।’
অপরদিকে, কলম্বিয়ার রাষ্ট্রদূত মারিয়া তার উদ্যোগের প্রতি সকল সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থন প্রত্যাশায় বিতরণকৃত আবেদনে উল্লেখ করেছেন, লিঙ্গ সমতার ব্যাপারটি এ সময়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। সকলের সমন্বয়ে টেকসই উন্নয়ন এগিয়ে নিয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যত রচনার জন্যে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করা জরুরী হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন বহুবার নারীর সমঅধিকারের কথা বললেও জাতিসংঘ সদর দফতরে প্রতি ৪ জনের একজন মাত্র নারী কর্মকর্তা/কর্মচারী রয়েছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে এ হার একেবারেই কম। জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন একজন নারী এবং তিনি হলেন সামন্থ পাওয়ার। তিনি এখন পর্যন্ত কলম্বিয়ার রাষ্ট্রদূতের ওই আহ্বানে সাড়া দেননি। যদিও সুযোগ পেলেই তিনি নারীদের সমঅধিকারের কথা বলে থাকেন।
এদিকে, নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদে নারী মহাসচিব হিসেবে ৫ জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। এরা হলেন: লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইলেন জনসন সারলিফ, আইএমএফ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টিন ল্যাগার্দে, ল্যাটিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান ইকনোমিক কমিশনের নির্বাহী সচিব এলিসিয়া বারসিনো ইবারা। আরও রয়েছেন ইউনেস্কোর মহাসচিব আইরিনা বকোভা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ফেডারিকা মঘারিনী প্রমুখ।
নিউইয়র্ক টাইমস ‘দ্য পুশ ফর এ উইম্যান টু রান দ্য ইউএন’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে, জাতিসংঘের ৮ মহাসচিব ছিলেন। তারা সকলেই পুরুষ। নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী ৫ সদস্যের গোপন চুক্তি অনুযায়ী তারা মনোনীত হন। কিন্তু এখন পরিবর্তনের সময় এসেছে। আগামী ৫ বছর এই বিশ্বসংস্থার যিনি নেতৃত্ব দেবেন সেই ব্যক্তি নির্বাচন বা মনোনয়নের প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ হওয়া জরুরী। কূটনৈতিক তৎপরতা এবং বিশ্বব্যাপী সমঝোতার মধ্য দিয়ে সবচেয়ে জটিল সমস্যাগুলোর সমাধানের লক্ষ্যেই একজন নারী মহাসচিব নির্বাচিত হওয়া উচিত।
বিডি-প্রতিদিন/ ২৩ আগস্ট, ২০১৫/ রশিদা