টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের এল পাসো ডিটেনশন সেন্টারে (El Passo processing center) অবস্থানরত ৬৪ বাংলাদেশির মধ্যে ৪৪ জন অনশন ধর্মঘট শুরু করেছেন বুধবার সকাল থেকে। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের অনুমতি প্রদানের পরিবর্তে তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ জারির পরই তারা আমরণ অনশনের কর্মসূচি শুরু করেছেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ইমিগ্র্যান্টদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘দেশীজ রাইজিং আপ অ্যান্ড মুভিং’ (ড্রাম)-এর কম্যুনিটি অর্গানাইজার কাজী ফৌজিয়া।
ন্যাশনাল ল’ইয়ার গিল্ড (National Lawyers Guild) এবং নো ওয়ান মোর ডিপোর্টেশন (No one more deportation) নামক দুটি সংস্থার পক্ষ থেকে অনশনরতদের খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে বলেও শুক্রবার গভীর রাতে কাজী ফৌজিয়া জানান। এদিকে, ওই ডিটেনশন সেন্টার থেকে অনশনরত মাহবুবুর রহমান টেলিফোনে জানান, ‘শামসুদ্দিন নামক একজনের অবস্থা শোচনীয় হওয়ায় তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। অন্যদেরকে নানা লোভ দেখানো হচ্ছে অনশন ভঙ্গ করার জন্যে। কিন্তু আমরা ডিপোর্টেশনের নির্দেশ (বহিষ্কারের আদেশ) প্রত্যাহার এবং এসাইলামের আবেদন মঞ্জুর না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাবো।’
সিলেটের বিয়ানিবাজারের সন্তান মাহবুব আরও উল্লেখ করেন, ‘৬ মাসের অধিক সময় যাবত আমরা এই সেন্টারে রয়েছি। সকলেই রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছি। কারোর আবেদনই গ্রাহ্য করা হচ্ছে না। তারউপর আমরা যারা বিএনপির কর্মী/সংগঠক হিসেবে আবেদন করেছি, তারা সকলেই নাকি সন্ত্রাসী-এমন মন্তব্য করেছেন ইমিগ্রেশন কোর্টের জজ। এ কারণে আমাদের সকলকেই অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ জারি হয়েছে।’ এ প্রসঙ্গে নিউইয়র্কের প্রখ্যাত এটর্নি অশোক কর্মকার বলেন, ‘সাম্প্রতিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরকে সন্ত্রাসী সংগঠন মনে করছে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট। ইমিগ্রেশন কোর্টের জজদের কাছে রয়েছে এ ধরনের নির্দেশনা।’ এটর্নি অশোক কর্মকার বলেন, ‘দলগতভাবে বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। তাই বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের ঢালাওভাবে সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচনা বা চিহ্নিত করার অবকাশ নেই বলে আমি মাননীয় আদালতে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করে নিউজার্সির একটি ইমিগ্রেশন কোর্টের জজ কর্তৃক সেই ভ্রান্ত ধারণার বিরুদ্ধে একটি রুলিংও আদায় করতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া, আরিজোনা অঙ্গরাজ্যের জজরা সেই রুলিংয়ে পাত্তা দিচ্ছেন না।’
মাহবুব জানান, ‘একেকজন প্রায় ২৫ লাখ টাকা করে দালালকে দিয়ে বিভিন্ন দুর্গম পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রে এসে এমন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হলো। আমরা কোথায় ফিরে যাবো? দেশে ফিরলো তো জীবন বিপন্ন। তাই অনশনের মধ্য দিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গণের কথা ভাবছি। আমরা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি অনশনে যাবার কথা।’
স্থানীয় সময় শনিবার দুপুরে (বাংলাদেশ সময় রবিবার ভোররাতে) এল পাসো ডিটেনশন সেন্টারের সামনে সংবাদ সম্মেলন হবে ড্রাম এবং ন্যাশনাল ল’ইয়ার গিল্ডের যৌথ উদ্যোগে-এ তথ্য জানা গেছে।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৭ অক্টোবর, ২০১৫/ রশিদা