অনশন শুরুর ৪৮ ঘণ্টা পর যুক্তরাষ্ট্র ইমিগ্রেশন বিভাগের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যস্থ এল পাসো ডিটেনশন সেন্টার থেকে ১১ বাংলাদেশিকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। এদেরকে সামনের মাসে পুনরায় ইমিগ্রেশন কোর্টে হাজিরা দিতে হবে। সে সময় তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন সম্পর্কে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। তবে এখনো আরও ৪০ বাংলাদেশি অনশন অব্যাহত রেখেছেন। অনশন কর্মসূচিতে পাকিস্তিনি এবং আফগানিস্তানের ৩ জন রয়েছেন।
শনিবার বিকেলে এল পাসো ডিটেনশন সেন্টারের সামনে এক মানববন্ধন হয়। সেখান থেকে অনশনরতদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন আমেরিকানরা। ‘ডিটেইন মাইগ্র্যান্ট সলিডারিটি কমিটি’র ব্যানারে আশপাশের নারী-পুরুষেরা বিভিন্ন স্লোগানে অবিলম্বে অনশনরতদের এসাইলাম মঞ্জুর করার দাবিও জানান।
এ সময় দীর্ঘ ১০ মাস ৬ দিন পর এই ডিটেনশন সেন্টার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত বিক্রমপুরের মো. নাসের (৩১)। নাসের বলেন, ‘গত ১৪ অক্টোবর বুধবার সকালে অনশন শুরুর দুদিন পর আমাদের ১১ জনকে পৃথক কক্ষে নেয়া হয়। ভেবেছিলাম যে, হয়তো নির্যাতন করা হবে। কিন্তু সেটি ঘটেনি। ডিটেনশন সেন্টারের কর্মকর্তারা আমাদেরকে পানি পান করতে বলেন। একইসঙ্গে কাপড়-চোপড় যা আছে তা গুছিয়ে নিতে বলেন। আমরা ভেবেছিলাম যে, হয়তো অন্য কোন সেন্টারে পাঠিয়ে দেয়া হবে। পানি পান করে অনশন ভঙ্গ করার পরই কর্মকর্তারা একটি নোটিশ হাতে ধরিয়ে আমাদের ছেড়ে দিয়েছেন।’
নাসের বলেন, ‘স্থানীয় কিছু লোক আমাদের আশ্রয় দিয়েছেন। যারা অনশনে রয়েছেন তাদের মুক্তি দাবিতে আজ শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় লাঞ্চবক্স নামক একটি রেস্টুরেন্টের সামনে একটি মানববন্ধন হয়েছে। বন্দিদের অসহায়ত্বের অবর্ননীয় কাহিনী জানার পর এলাকার কিছু সমাজকর্মী ‘ডিটেইন মাইগ্র্যান্ট সলিডারিটি কমিটি’ গঠন করেছেন। সেই ব্যানারেই মানববন্ধন থেকে অবিলম্বে অনশনরতদের মুক্তি ও এসাইলাম মঞ্জুর করার দাবি জানানো হয়।’ এই কমিটির অন্যতম প্রধান রোকশানা বেনডেজু বলেন, ‘প্রাণের ভয়ে প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে। অথচ এখানেও তারা স্বস্তি পাচ্ছেন না। এটি চলতে পারে না।’
এল পাসো ইমিগ্রেশন প্রসেসিং সেন্টারে গত ৮৬ ঘণ্টা ধরে যারা অনশনে রয়েছেন তাদের অবস্থা এখন কেমন তা নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রোকশানা। রোকশানা উল্লেখ করেন, ‘সকলকে মুক্ত না করা পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আমরা অসহায় মানুষদের পাশে সবসময় থাকতে চাই।’ মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের হাতে পোস্টার ছিল ইংরেজী ও স্প্যানিশ ভাষার। সেগুলোর বক্তব্য হচ্ছে, ‘কোন মানুষই অবৈধ নন’, ‘রিফ্যুজিরা স্বাগতম’, ‘অনশনরতদের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’ ইত্যাদি। তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে মুক্তিপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন আব্দুল হামিদ, মাসুম আহমেদ, জাকির হুসেন, শাহীন মিয়া, রিপন আহমেদ, সোহেল, নাদের আহমেদ, লোকমান আলী, আহমেদ জাহেদ প্রমুখ।’
নাসের বলেন, ‘আমরা বিএনপির সমর্থক। সে কথা উল্লেখ করেই রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছি। কিন্তু ইমিগ্রেশন জজ মন্তব্য করেছেন যে, বিএনপি হচ্ছে সন্ত্রাসের সমর্থক এবং আমরা নাকি সন্ত্রাসী।’ তিনি বলেন, ‘আমি ২২ লাখ টাকা ব্যয় করেছি যুক্তরাষ্ট্রে আসার জন্যে। এখন আরও টাকার প্রয়োজন।’
নাসের উল্লেখ করেন, ‘ফেনীর ফয়েজ আহমেদ (২৯) নামক একজনকে জোরপূর্বক বহিষ্কারের পরই আমরা অনশনের মত কঠিন কর্মসূচি গ্রহণে বাধ্য হয়েছি। ফয়েজ আহমেদ বন্দি থাকাবস্থায় দেশে তার বাবা ও মায়ের মৃত্যু হয়েছে। সে এক হৃদয় বিদারক ঘটনা। তবুও সে আশায় বুক বেধেছিলো যে, মুক্তি পেয়ে ডলার কামিয়ে ছোট ভাই-বোনদের মানুষ করতে পারবে।’
বিডি-প্রতিদিন/ ১৮ অক্টোবর, ২০১৫/ রশিদা