এসাইলামের আবেদন নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মুক্ত থাকার শর্তে যুক্তরাষ্ট্র ইমিগ্রেশন বিভাগের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের এল পাসো ডিটেনশন সেন্টারের বাংলাদেশি বন্দিরা মঙ্গলবার রাত ৮টায় অনশন ভঙ্গ করেছেন। এই সেন্টারের ৪৮ বাংলাদেশির সকলকেই মুক্তি প্রদানে সম্মত হওয়ায় তারা অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।
দীর্ঘ ১৫৬ ঘণ্টা পর তাদের ফলের রস পান করিয়ে অনশন কর্মসূচির অবসান ঘটান ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার (কনস্যুলার) শামসুল আলম চৌধুরী। রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিনের নির্দেশে তিনি এল পাসো ডিটেনশন সেন্টারে যান ১৯ অক্টোবর। সেখান থেকে তিনিই অনশন কর্মসূচি অবসানের এ তথ্য জানান। এ সময় তিনি বলেন, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট কর্তৃপক্ষের সাথে দীর্ঘ দেন-দরবারের পর এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশ দূতাবাস সকল বন্দির জন্যে পাসপোর্ট ইস্যু করবে। প্রত্যেক বন্দির মুক্তির জন্যে একজন করে স্পন্সর লাগবে অর্থাৎ যে কোন স্থায়ী বাসিন্দার মুচলেকা লাগবে, তা ইতোমধ্যেই পাওয়া গেছে বলেও জানান শামসুল আলম চৌধুরী। বন্দিরা সুস্থ কিনা সেটি পরীক্ষার পরই মুক্তি দেয়া হবে। ২৩ অক্টোবর শুক্রবার থেকেই মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। অর্থাৎ মেক্সিকো হয়ে অবৈধ পথে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পর ধরা পড়া অথবা আত্মসমর্পণ করে বিএনপির কর্মী হিসেবে যে এসাইলামের আবেদন করেছেন, তা এখন শুনানিতে যাবে এবং এর নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা জামিনে মুক্ত থাকবেন। এ সময়ে তারা ওয়ার্ক পারমিট পাবেন। পাবেন সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বরও অর্থাৎ তারা কাজ করার সুযোগ পাবেন।
গত ১৪ অক্টোবর সকালে অনশন শুরুর দুদিন পর ১১ বাংলাদেশিকে মুক্তি দেয়া হয়। এছাড়া আরও ১৪ জনকে স্থানান্তর করা হয় লুইঝিয়ানায়। তারাও অনশনে রয়েছেন। তাদের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, কন্স্যুলার শামসুল আলম চৌধুরী একই কৌশলে তাদেরকেও মুক্ত করতে লুইঝিয়ানায় যাবেন। ১০/১১ মাস যাবত এরা ডিটেনশন সেন্টারে ছিলেন। তাদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরই সকলে অনশন কর্মসূচিতে যান।
প্রসঙ্গত: বিএনপি হচ্ছে সন্ত্রাসী চক্রের মদদদাতা সংগঠন-এমন ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টে। বিএনপির সমর্থক হিসেবে এরা এসাইলাম প্রার্থনা করায় সকলকেই যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্যে হুমকি হিসেবে মনে করা হচ্ছিল।
একযোগে ৫৪ বাংলাদেশি অনশনে যাওয়ায় মার্কিন প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। কংগ্রেসনাল বাংলাদেশ ককাসের চেয়ারম্যান কংগ্রেসম্যান যোসেফ ক্রাউলির সাথে ১৯ অক্টোবর সোমবার সন্ধ্যায় সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশ সোসাইটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক ওসমান চৌধুরী। সে সময়ে ওসমান চৌধুরী ক্রাউলিকে অনশনজনিত পরিস্থিতির তথ্য জানিয়ে অবিলম্বে তার অবসান ঘটানোর অনুরোধ জানান। ক্রাউলি বলেছিলেন যে, তিনি স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাথে এ নিয়ে কথা বলবেন।
এদিকে, উদ্বেগজনক এ পরিস্থিতির অবসানে গত দুদিন ধরে লাগাতার বৈঠক ও দেন-দরবার করেন মিনিস্টার কন্স্যুলার শামসুল আলম চৌধুরী। এক্ষেত্রে বিস্তারিত সমন্বয় করেন ফ্লোরিডাস্থ বাই-ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আতিকুর রহমান। কয়েক সপ্তাহ আগে ফ্লোরিডার বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টার থেকে ডজনখানেক বাংলাদেশিকে জামিনে মুক্তির ব্যাপারে আতিকুর রহমান বিস্তারিত সহায়তা করেন।
ইমিগ্রেশনের ডিটেনশন সেন্টারে বাংলাদেশিদের একযোগে অনশন কর্মসূচিতে যাবার ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি।
বিডি-প্রতিদিন/ ২১ অক্টোবর, ২০১৫/ রশিদা