সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য ভিসা প্রদান প্রক্রিয়াটি বন্ধ করা হয় ২০১২ সালের অক্টোবরে। দীর্ঘ তিন বছরের বেশি সময় পরও হয়নি ভিসা জটিলতার অবসান। এতে একদিকে হাত ছাড়া হচ্ছে বাংলাদেশি শ্রম বাজার, অন্যদিকে শ্রম বিক্রি করতে আগ্রহীদের প্রতিক্ষার প্রহর হচ্ছে আরো দীর্ঘতর। কেউ কেউ সুযোগ পেলেই প্রশ্ন করেন- ‘কবে খুলবে আমিরাতের ভিসা?’ প্রত্যাশিত জবাব না পেয়ে বড় হয় তাদের দীর্ঘশ্বাসের মাত্রা। ভিসা বন্ধ আর প্রবাসীদের আশা-নিরাশার দোলাচালে এক ঝলক স্বপ্ন নিয়ে গত বছরের অক্টোবরে আমিরাত সফর করেন বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ভিসা খোলার ইতিবাচক সম্ভাবনা ও শেষ ভরসা হিসেবেও বেশ গুরুত্বের সাথে দেখছিলেন প্রবাসীরা। বাস্তবে এ বিষয়ে হয়েছে সামান্যতম অগ্রগতি! মিলেছে বাংলাদেশ থেকে আমিরাতে এক হাজার নারীকর্মী নেয়ার প্রতিশ্রুতি। এছাড়া আমিরাত সরকারের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা, বন্দিবিনিময় এবং ঢাকায় ইউএই দূতাবাস নির্মাণে জমি হস্তান্তর বিষয়ে স্বাক্ষরিত হয় তিনটি চুক্তি। কিন্তু বাংলাদেশের রুদ্ধ শ্রমবাজার উন্মুক্ত করে দেয়ার ব্যাপারে হয়নি কোনো অগ্রগতি।
প্রধানমন্ত্রীর সফরের পূর্ণ হয়েছে এক বছর। জানা গেছে, সে সফরের তিন চুক্তির মধ্যে দুটিই এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়ে গেছে। এ দুটি হচ্ছে নিরাপত্তা সহযোগিতা ও বন্দিবিনিময় চুক্তি। অন্য চুক্তিটি ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সফরকালীন সময় স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ঢাকায় ইউএই দূতাবাস নির্মাণের জন্য জমি হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ ইমরান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘গত মে মাসেই নিরাপত্তা সহযোগিতা ও বন্দিবিনিময় চুক্তি দুটির আইনগত কার্যক্রম আমাদের পক্ষ থেকে শেষ করা হয়েছে। কিন্তু উনাদের (আমিরাত সরকার) প্রচেষ্টা এখনো অব্যাহত রয়েছে। সকল ফরমালিটি সম্পন্ন হলে এগুলো বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাবে।’
ঢাকায় ইউএই দূতাবাস নির্মাণে জমি হস্তান্তরের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি দেশ থেকে হান্ডেল করা হচ্ছে।'
প্রধানমন্ত্রীর সফর শেষে বন্ধ ভিসার ব্যাপারে আমিরাত সরকারের শিথিল অবস্থানের কথা প্রকাশ করা হয়। কিন্তু বছরের পর বছর ঘুরলেও হয়নি এর সুরাহা। বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য কবে নাগাদ নতুন ভিসা চালু হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত ইমরান বলেন, ‘শ্রমিক ভিসার ব্যাপারে এখনো কিছু জানি না। তবে আমিরাতের শ্রমিকদের জন্য যে তিনটি নতুন আইন চালু হতে যাচ্ছে তাতে আমরাও কিছুটা সুবিধা পাবো। সেজন্যে ১লা জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এর পরবর্তীতে শ্রমিক ভিসার ব্যাপারটা বুঝা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘ভিসার প্রক্রিয়াটি আগের তুলনায় যথেষ্ট শিথিল হয়েছে, তা বেশ অনুমানও করা যাচ্ছে। কারণ আগে ভিজিট ভিসা পেতেও ভিসা প্রত্যাশীদের নানা জটিলতায় পড়তে হয়েছে। বর্তমানে সহজেই ভিজিট ভিসাসহ অন্যান্য ভিসাগুলো পাওয়া যাচ্ছে, আমরাও বেশ কিছু ভিসা বের করতে পারছি।’
খবর পাওয়া গেছে, এজেন্ট ও ব্যক্তি মারফত পাওয়া ভিজিট ভিসায় কেউ কেউ আমিরাতে এসে পরবর্তীতে ভিসা পরিবর্তন করে পার্টনার ভিসা নবায়নের মাধ্যমে কাজে যোগ দিচ্ছেন। এ বিষয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘যারা আসছেন তারা আমিরাতের নিয়ম অনুযায়ী আসছেন ও সে অনুযায়ীই কাজে নিয়োজিত হচ্ছেন।’
এদিকে, ভিসা বন্ধ ও কর্মস্থল পরিবর্তনের সুযোগ বঞ্চিত হওয়ায় দেশীয় শ্রমিকের অভাবে বছরের পর বছর ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভিসা বন্ধের বিষয়টি বিরূপ প্রভাব ফেলেছে বাংলাদেশের শ্রমবাজার ও রেমিটেন্সের ওপর। কিন্তু ২০১২ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা বন্ধ করে দিলেও আমিরাতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয় এটি ‘সাময়িক’ সিদ্ধান্ত। এই ‘সাময়িক বন্ধ’ প্রক্রিয়ার সময় কত দিনে শেষ হবে, সেই প্রশ্নটিই ঘুরপাক খাচ্ছে প্রবাসীদের মাথায়।
বিডি-প্রতিদিন/২৭ অক্টোবর, ২০১৫/মাহবুব