একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং চলচ্চিত্রকার-লেখক শাহরিয়ার কবীর বলেছেন, ‘সাউথ এশিয়ার টেররিস্টদের গডফাদার হলো জামাত, পাকিস্থান তথা জামাতপন্থী মওদুদীবাদীরাই বিশ্বব্যাপী জিহাদের জন্যে দায়ী। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে এই গোষ্ঠী ইসলামের অপব্যাখ্যা করে জিহাদের নামে সারাবিশ্বে অশান্তি ছড়িয়ে দিচ্ছে। যা ইসলাম সমর্থন করে না’।
গতকাল বুধবার লন্ডন সময় বেলা আড়াইটায় ‘ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফোরাম’ আয়োজিত "টেররিস্ট ইন দ্য নেইম অব ইসলাম: বাংলাদেশ কনটেক্স্ট অ্যান্ড দ্য নিড ফর গ্লোবাল রেসিসটেন্স" শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা করেন।
লন্ডনের কুইনমেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লার্ক কেনেডি লেকচার থিয়েটার ইনোভেশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে শাহরিয়ার কবীর আরও বলেন, ‘মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুড এবং উপমহাদেশের জামায়াতে ইসলামী তথা মওদুুদীবাদীরা বিশ্বময় ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে বর্ণবৈষম্য সৃষ্টি করছে। যা কোন ধর্ম বা মানবতা সমর্থন করে না। বিশেষ করে উপমহাদেশে ধর্মের নামে অশান্তি সৃষ্টিতে এই গোষ্ঠীই দায়ী। অবিভক্ত ভারতে ১৯৪১ সালে ওহাবী মতাদর্শে বিশ্বাসী মাওলানা মওদুদী প্রতিষ্ঠা করেন জামায়াতে ইসলামী। অন্যদিকে একই আদর্শ নিয়ে ১৯২৮সালে মিশরে গঠিত হয় মুসলিম ব্রাদারহুড।’
শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, এই মওদুদী নিজে ইসলামের নামে অশান্তি সৃষ্টি করলেও তার সন্তানদের ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করেননি। তার ছেলে আজকে এখানে আসার কথা ছিল ভিসা জটিলতার কারণে এই সম্মেলনে উপস্থিত হতে পারেননি। তার ছেলে সাইদ হায়দার ফারুক মওদুদী আমার একটি ডকুমেন্টারিতে সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, তার (মওদুদী) লিখিত বইপত্র যেন তার সন্তানেরা না পড়ে। ফারুক মওদুদী নিজেই তার পিতাকে হিপক্রেট আখ্যায়িত করেছেন।’
শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘পাকিস্তানের আদালত ধর্মের অপব্যাখার কারণে মওদুদীর ফাঁসির রায় দিয়েছিলেন, পরবর্তীতে সৌদির হস্তক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড থেকে তিনি রেহাই পান। ধর্মীয় রাজনীতির কারণে সাউথ এশিয়া আজ অশান্ত। যুগ যুগ ধরে উপমহাদেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মাধ্যমে বসবাস করে এলেও ১৯৪৭ সালে জিন্নাহর দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভক্তি, পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে ইসলামের নাম ব্যবহার করে বাংলাদেশে গণহত্যা সবকিছুই জামাতীদের দ্বারা সংগঠিত হয়েছে। সব কিছুর জন্যে দায়ী ধর্মের অপব্যাখ্যা।’
শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘১৯৭৫ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে জামাতপন্থিরা আবারও বাংলাদেশে ইসলামের অপব্যাখা করে জাতিকে বিভ্রান্ত করে। পরবর্তীতে জামাত-বিএনপির সময়ে বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এখানেই শেষ নয়, এরা ইউরোপ আমেরিকাসহ বিশ্বব্যাপী বিস্তার লাভ করছে। বিশ্বমানবতার শান্তির অন্তরায় হচ্ছে ধর্মীয় উগ্রবাদ। উগ্রবাদ মোকাবেলায় জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
সেন্টার ফর সেকুল্যার স্পেইস ও মানবাধিকার কর্মী গীতা সাওগালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফোরামের কনভেনর মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক আনসার আহমেদ উল্লাহ। আরও বক্তব্য দেন ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য শহীদ পরিবারের সন্তান ডা. নূজহাত চৌধুরী।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৫/ রশিদা