যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির একাংশের একটি প্রস্তুতি সভা ভণ্ডুল হয়ে গেল অপর চার গ্রুপের সম্মিলিত হামলায়। হামলার সময় বিএনপির এক গ্রুপের নেতা শরাফত হোসেন বাবুকে উপদলীয় কোন্দলের কারিগর হিসেবে অভিহিত করে তাকে নিউইয়র্ক সিটিতে বিএনপির কোন অনুষ্ঠানে আসতে মানা করা হয়। মারমুখী নেতাদের হুমকিতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় শরাফত হোসেন বাবু পাততাড়ি গুটালেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান লন্ডনে বসবাসরত তারেক রহমানের শ্যালক পরিচয়দানকারী এই বাবুর উদ্দেশ্যে সে সময় স্লোগান ওঠে, ‘১/১১ এর এজেন্টদের ঠাঁই নেই বিএনপিতে’, ‘চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিতে’, ‘স্টেট কমিটির আগে চাই যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি।’ প্রসঙ্গত: দু’বছর আগে ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি। এর ফলে নেতৃত্ব দখলের অভিপ্রায়ে ৫ খণ্ডে বিভক্ত হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি। এরইমধ্যে সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক এহসানুল হক মিলন নিউইয়র্কে এসে অত্যন্ত গোপনে বিভিন্ন স্টেট কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া অবলম্বন করেছেন। অভিযোগ উঠেছে, এ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা হয়নি বিএনপির সাবেক নেতৃবৃন্দ অথবা দীর্ঘদিন ধরে কর্মরতদেরকে। আরও অভিযোগ উঠেছে যে, সভাপতি ও সেক্রেটারিসহ গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্যে নির্দিষ্ট অংকের অর্থ চাওয়া হচ্ছে।
তারেক রহমানের বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে যে, সংগৃহীত এসব অর্থ দিয়ে মার্কিন প্রশাসনে বিএনপির পক্ষে লবিং চালানো হবে। এ নিয়ে বিএনপির ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। আর এমনি সময়েই ক্ষুদ্রতম একটি অংশের নেতা শরাফত হোসেন বাবু মাঠে নেমেছেন মিলনের এজেন্ট হিসেবে। বাবুকে তাড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি তার সভা ভন্ডুলের পর অপর ৪ গ্রুপের নেতা-কর্মীরা জ্যাকসন হাইটসে বিজয়-উৎসবের সময় বলেছেন, ‘আমরা চেয়ারপারসন বেগম জিয়ার প্রতি আকুল আবেদন রাখছি অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি গঠনের জন্য। এরপরই যেন অঙ্গরাজ্য কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেয়া হয় নয়া কমিটিকে। তা’না হলে বিভক্তি-বিবাদ বাড়তেই থাকবে।’
গত রবিবার রাত ৯টার পর জ্যাকসন হাইট্সে বাবুর নেতৃত্বাধীন বিএনপির ক্ষুদ্রতম একটি অংশের প্রস্তুতি সভা চলছিল গোরমেট রেস্টুরেন্টে। সে স্থানের কাছেই ফুডকোর্ট রেস্টুরেন্টে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির অপর ৪ গ্রুপের সম্মিলিত কর্মীসভা চলছিল। এ সভায় মূলত যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নয়া কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে মতবিনিময় করা হচ্ছিল। এমন সময় সেখানে বাবু গ্রুপের প্রস্তুতি সভার সংবাদ আসামাত্র সকলে উত্তেজিত হয়ে মিছিল যোগে গোরমেট রেস্টুরেন্টে যান। তারা ওই সভা ভণ্ডুল করেই ক্ষান্ত হননি, বাবুকে অবিলম্বে নিউইয়র্ক ত্যাগের দাবি জানান। সে সময় বাবু গ্রুপের যে ১০/১২ জন ছিলেন, তারাও ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে পড়েন। অবস্থা বেগতিক দেখে বাবু ওই রেস্টুরেন্ট থেকে বিনাবাক্যব্যয়ে অন্যত্র চলে যান বলে বিএনপি নেতা আলহাজ আব্দুল লতিফ সম্রাট জানান। সম্রাট বলেন, ‘কেন্দ্রীয় বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলন নিউইয়র্কে ঘাপটি মেরে থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য বিএনপির কমিটি গঠনের জন্যে ওই বাবুকে এজেন্ট নিয়োগ করেছেন। বিভিন্ন পদের জন্যে নির্দিষ্ট অংকের অর্থ দাবি করা হচ্ছে মিলনের পক্ষ থেকে।’ সম্রাট আরও উল্লেখ করেন, ‘মিলন হচ্ছে ১/১১ এর কথিত সংস্কারবাদীদের অন্যতম। নিউইয়র্কে অবস্থান করা সত্ত্বেও গত কয়েক মাসে বিএনপির কোন কর্মসূচিতে তাকে পাওয়া যায়নি। অথচ তারেক রহমানের দোহাই দিয়ে অঙ্গরাজ্য কমিটির পদ-পদবি নিলামে উঠানো হয়েছে।’
বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘গঠনতন্ত্রের বিধি অনুযায়ী সর্বাগ্রে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি হবার কথা। এরপর এই কমিটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে গঠিত হয় অঙ্গরাজ্য কমিটি। কিন্তু এহসানুল হক মিলন নতুন ফতোয়া নিয়ে গোপনে গোপনে অঙ্গরাজ্য কমিটির পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। আমরা যারা মাঠে রয়েছি তাদের অবজ্ঞা-উপেক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি গঠনের দাবিকে কৌশলে পাশ কাটিয়ে অঙ্গরাজ্য কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়ার সংবাদে সর্বস্তরে সৃষ্ট ক্ষোভের রোষানলে পড়লেন বাবু।’
‘এখন থেকে বিএনপিতে কোন চাঁদাবাজ-ধান্দাবাজের ঠাঁই হবে না। তারেক রহমানের নাম ভাঙ্গিয়ে যারা চাঁদাবাজি আর ধোকাবাজি করতে চাইবে তাদেরকেই এভাবে প্রতিরোধ করা হবে’ জানান সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল।
বিজয় দিবস উপলক্ষে বাবু গ্রুপের পক্ষ থেকে আগামী ১৯ ডিসেম্বর নিউইয়র্কে যে সমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেটিও প্রতিহত করার সংকল্প ব্যক্ত করেছেন ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারের ওই সমাবেশে বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকাকে প্রধান অতিথি এবং কোষাধ্যক্ষ এম এ সালামকে বিশেষ অতিথি হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছে বাবু গ্রুপ। সেই সমাবেশের পাল্টা হিসেবে জুইশ সেন্টারের সন্নিকটে পালকি পার্টি সেন্টারে একই সময় সম্মিলিতভাবে আরেকটি সমাবেশের ঘোষণা দেন বাবুকে প্রতিরোধকারিরা। সেখানেও প্রধান অতিথি হিসেবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে সাদেক হোসেন খোকার নাম। চিকিৎসাধীন খোকার সম্মতি উভয় পক্ষ পেয়েছে বলে দাবি করছে।
বাবুকে প্রতিরোধকারী নেতাদের মধ্যে আরও ছিলেন বিএনপি নেতা আলহাজ্ব সোলায়মান ভূইয়া, জিল্লুর রহমান জিল্লু, গোলাম ফারুক শাহীন, কাজী আজম, পারভেজ সাজ্জাদ, মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী, ফিরোজ আহমেদ, আবু সাঈদ, মাজহারুল ইসলাম জনি, সেলিম রেজা, রুহুল আমিন নাসির, বাবরউদ্দিন প্রমুখ।
এ প্রসঙ্গে বাবু গ্রুপের অন্যতম নেতা ও নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য বিএনপির সভাপতি মাওলানা অলিউল্লাহ মোহাম্মদ আতিকুর রহমান জানান, ‘বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৯ ডিসেম্বরের সমাবেশের ব্যাপারে প্রস্তুতি সভা চলছিল। সেখানেই অপর গ্রুপের লোকজন চড়াও হয়েছিলেন। সে কারণে শেষ মুহূর্তে আমাদের সভা ভণ্ডুল হয়ে গেছে।’
অভিযোগ উঠেছে যে, প্রচলিত রীতি ও গঠনতান্ত্রিক বিধি উপেক্ষা করে আন্তর্জাতিক সম্পাদক এহসানুল হক মিলনের অঙ্গরাজ্য কমিটি গঠনের প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছে বাবু গ্রুপ। আরও অভিযোগ উঠেছে যে, ইলিনয়, মিশিগান এবং ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্য কমিটি গঠনের সক্রিয় উদ্যোগ নিয়েছিলেন মিলন। কিন্তু সেগুলোতে উপ-দলীয় কোন্দল আরো বেড়েছে। তারাও এখন দাবি করছেন প্রথমেই সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের সমন্বয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি গঠনের জন্যে।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৫/ রশিদা