ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতা এবং রাজাকারমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার সংকল্পে বিজয় দিবস পালিত হচ্ছে নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি অধ্যুষিত সিটিগুলোতে। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয় ‘যুদ্ধাপরাধ মুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন পূরণের পথে জাতিকে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব’ প্রদানের জন্যে।
বুধবার রাতে নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে পালকি পার্টি সেন্টারে যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এবং মুক্তিযোদ্ধা যুবকমান্ডের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘সার্বজনীন বিজয় দিবস উদযাপন’ শীর্ষক এক সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযোদ্ধা ওহিদুর রহমান মুক্তা এবং সঞ্চালন করেন যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা যুবকমান্ডের সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোর্শেদ খান বীর বিক্রম বলেন, ‘গত ৪৩ বছরের চেয়ে এবারের বিজয় দিবস ভিন্ন এক আমেজ নিয়ে এসেছে বাঙালিদের মাঝে। বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনার দৃঢ়চেতা নেতৃত্বের পরিপ্রেক্ষিতে একাত্তরের শীর্ষ ঘাতকদের মধ্যে কয়েকজনের বিচার সম্পন্ন হয়েছে। অন্যদের বিচার চলছে। এটি ছিল বহুল প্রত্যাশার একটি বিষয়। জাতি এখন স্বস্তি পাচ্ছে বাংলাদেশকে রাজাকার মুক্ত করার প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগিয়ে চলায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবারের বিজয় দিবস থেকে সকলের সংকল্প গ্রহণ করতে হবে যে, একাত্তরের চেতনার বাংলাদেশ গড়তে শেখ হাসিনাকে দীর্ঘ সময় রাষ্ট্র পরিচালনায় রাখতে যত রকমের সহায়তা প্রয়োজন তা প্রদানের।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা নূরনবী কমান্ডার, যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহবায়ক ড. এম এ বাতেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মোজাহিদুল ইসলাম, সিলেটের সাবেক কমিশনার ফখরুল ইসলাম খান। সবর্বস্তরের প্রবাসীরা এতে উপস্থিত ছিলেন। প্রবাসীদের পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষভাবে অভিনন্দন জানানো হয়। একইসাথে প্রবাসীদের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়েই বাংলাদেশকে রাজাকারমুক্ত করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার জন্য।
এর আগে, নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতর সংলগ্ন বাংলাদেশ মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে ৪৫তম বিজয় দিবস উপলক্ষে বুধবার সন্ধ্যায় বর্ণাঢ্য এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কূটনীতিক ছাড়াও কমিউনিটির বিভিন্ন স্তরের প্রবাসীরা অংশ নেন। নতুন প্রজন্মের পরিবেশনায় উপস্থিত সকলে মুগ্ধ হয়েছেন। বিজয়ের চেতনায় প্রবাস-প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করার এ ঘটনা সকলকে অভিভূত করেছে।
এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যকালে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার অঙ্গীকার পূরণে আরও অবদান রাখতে হবে নিজ নিজ অবস্থান থেকে।’
স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি বিশ্বে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে।’ তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জনের পর এখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো অর্জনেও বাংলাদেশ বিশ্বে নেতৃত্ব দেবে।’ প্রবাসীরাও বাংলাদেশের উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
স্থায়ী প্রতিনিধি সকল প্রবাসীকে তাঁদের নিজ গ্রামে ও শিক্ষাঙ্গনে বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে খেলাধুলা ও আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজনের আহবান জানান। এর মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আরও গভীরভাবে উদ্বুদ্ধ হবে এবং ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলায় ব্যাপক অবদান রাখতে সমর্থ হবে বলে আশা পোষণ করেন মাসুদ বিন মোমেন।
এদিন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলো এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে ব্যাপক উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ করণীয়ের ওপর উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ, লেখক-কলামিস্ট বেলাল বেগ, প্রবীন সাংবাদিক সৈয়দ মোহম্মদ উল্লাহ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বক্তারা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ব্যাপক অগ্রগতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তাঁরা রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নে সকলকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান।
নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, পেনসিলভেনিয়া, বস্টন, ফ্লোরিডা, লসএঞ্জেলেস, টেক্সাস, জর্জিয়া, মিশিগানেও বিজয় দিবস উপলক্ষে আরো কয়েকটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে শনি ও রবিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে।
বিডি-প্রতিদিন/১৭ ডিসেম্বর, ২০১৫/মাহবুব